শহীদনূর আহমেদ :: ২০১৭ এর কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ি ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাওরে পাউবো’র বাঁধের ভাঙ্গণ বন্ধকরণ ও মেরামত কাজ বাস্তবায়নকল্পে অনুমোদিত প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদের দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও হয়নি দৃশ্যমান কোন কাজ। জেলার অন্যান্য উপজেলার মতো ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ধীরগতি দেখাগেছে সদর উপজেলার প্রায় প্রকল্পে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে বেঁড়িবাঁধের কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।ফলে দেখার হাওর, খরচা, জোয়ালভাঙ্গা, ডাউকা, কাংলার হাওরের চাষাবাদকৃত বিপুল পরিমাণ বোরো ফসলে সুরক্ষা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাধারণ কৃষক ও হাওর সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে বেঁড়িবাঁধের কাজের মান ও বরাদ্দ নিয়েও।
জানা যায়, এবার সদর উপজেলায় প্রাথমিকভাবে ৩২টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ২২ কিলোমিটার বেঁড়িবাঁধ নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পগুলোতে কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা মানেনি সংশ্লিষ্টরা। নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় দেড়মাস পার হলেও এখনও ২০% কাজ দৃশ্যমান হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট হাওর পারের কৃষকরা।
সোমবার সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের ৬টি প্রকল্প ও এর আগের দিন রঙ্গারচর ইউনিয়নের ৪টি প্রকল্পের চলমান বেঁড়িবাঁধ এলাকায় সরেজমিনে এ অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের জোয়ালভাঙ্গা ও খরচার হাওরের ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণে ১৮টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জোয়ালভাঙ্গা হাওরে ৭নং পিআইসিতে ১ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার কাজে ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মোটাঅঙ্কের বরাদ্দের এই কাজের গুরুত্বপূর্ণ ক্লোজার ভাটিরবন্ধের ভাঙ্গায় এখনো মাটি ফেলা হয়নি। বাকি অংশে কিছু মাটি পড়লেও তার উচ্চতা, দৈর্ঘ্য, স্লুপসহ বিভিন্ন দিক মানা হয়নি।
এর পাশের প্রকল্প ৮নং পিআইসিতে সমপরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হলেও অর্ধেকের বেশি জায়গায় এখনও কোনো মাটিই পড়েনি। তাছাড়া এই প্রকল্পে একসেভেটর দিয়ে বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কেটে বাঁধে মাটি ফেলতে দেখা যায় সংশ্লিষ্টদের। ৯নং পিআইসিতে সবেমাত্র কাজ শুরু হয়েছে। কবে শেষ হবে তা জানেন না সংশ্লিষ্ট হাওরের কৃষকরা। খরচার হাওরের ২১নং পিআইসির গুরুত্বপূর্ণ ক্লোজার নাপিতখালির ভাঙ্গায় এখনও উন্মুক্ত রয়েছে। একই হাওরের ২০, ২১, ২২ ও ২৩নং পিআইসিগুলোতে পুরাতন বাঁধের সংস্কার কাজে গড়ে ২০ লাখ টাকার উপরে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রকল্প চারটিতে এখনও অর্ধেকের বেশি মাটি ফালানোর কাজ বাকি। বাঁধে উচ্চতা ও স্লুপের নিয়ম মানছেন না সংশ্লিষ্ট পিআইসিরা। এসব অক্ষত বাঁধে কাজের চেয়ে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়ার কথা জানিয়েছেন সাধারণ কৃষকরা।
রঙ্গারচর ইউনিয়নের কাংলার হাওরে ৩ ও ৪নং প্রকল্পে বেশিরভাগ জায়গায় এখনও মাটি পড়েনি। ৩নং প্রকল্পের অক্ষতবাঁধে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগ করেছেন অনেক কৃষক। ১নং প্রকল্পে তুলনামুলক অক্ষতবাঁধে সংস্কার কাজে ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়াকেও অতিরিক্ত বলছেন অনেকেই। তাই রাতারাতি বাঁধে মাটি ফেলার কাজ সম্পন্ন করেছেন সংশ্লিষ্ট পিআইসি। ২নং পিআইসিতে গত ৩ বছর ধরে কাজ করছেন একই ইউপি সদস্য। ইউপি সদস্য সুরুজ আলীর বিরুদ্ধে বিগত সময়ে বাঁধ নির্মাণে নানা অভিযোগ থাকলেও রহস্যজনক কারণে এবারও গুরুত্বপূর্ণ বড়ভাঙ্গা ক্লোজারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাকে। গতবার এই পিআইসিতে ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও এবার ১৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পে মাটি ফেলার কাজ শেষ দিকে হলেও এখনও স্লুপ, কম্পেকশন, দুরমুজ ও আড় বাঁধার কাজ বাকি রয়েছে। এছাড়াও উপজেলার বাকি পিআইসির কাজে বাঁধ নির্মাণের ধীরগতির খবর জানা যায়।
বাঁধের কাজের এমন অবস্থায় নিধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়। সঠিক সময়ে কাজ সম্পন্ন না হলে হাওরের ফসল অরক্ষিত থাকবে বলে জানান তিনি। সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, যেভাবে বাঁধের কাজ হচ্ছে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কোনোভাবেই কাজ শেষ করা যাবে না। বাঁধ নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের তদারকি জোরদার না করা হলে ২০১৭ সালের মতো ফসলহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান তিনি। এদিকে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল বাঁধে মাটি ফেলার কাজ সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছেন সদর উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারি প্রকৌশলী আশরাফুল সিদ্দিকী। তিনি বলেন, আমি প্রতিদিনই পিআইসির দায়িত্বশীলদের তাগাদা দিচ্ছি। তারাও প্রাণপন চেষ্টা করছেন। আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে পারবো।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৭৩ বার