মাহমুদুর রহমান তারেক-

সুনামগঞ্জের গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে প্রায় ৪৩ হাজার হেক্টর বোরো ফসলি জমি। যা টাকার পরিমাণে প্রায় পৌনে সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকা। সোমবার (০৫ এপ্রিল) বিকেলে জেলা কৃষিবিভাগ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে, সোমবার জেলার বেশ কয়েকটি হাওর বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায়।  গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার দিরাই উপজেলার বরাম হাওর, জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওর, ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনারতাল হাওর, জামালগঞ্জের হালির হাওরসহ প্রায় ১০-১২টি হাওর বাঁধ ভেঙে, বাঁধ উপচে তলিয়ে যায়। এতে উঠতি বোরো ফসলের প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। বোরো ফসলের পাশাপাশি সবজি ক্ষেতেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এদিকে, হাওর তলিয়ে যাওয়ায় হাওরের পাড়ের কৃষকদের মধ্যে চলছে বোবা কান্না। পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া ফসল দেখেই চোখের পানি ফেলছেন কৃষকরা। তারা ফসলহানির ঘটনায় জড়িত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করেছেন। দ্বিতীয় দিনের মত ফসল হারানো দক্ষিণ সুনামগঞ্জের দেখার হাওরের কৃষকরা সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের শান্তিগঞ্জ সড়ক দুই ঘণ্টা অবরোধে করে রাখেন।  দেখার হাওরের কৃষক সমরোজ মিয়া বলেন- সুদের টাকায় এ বছর বোরো আবাদ করেছিলাম। ফসল ডুবছে শুনে যে টাকা দিয়েছিল সে তা ফেরত দেয়ার জন্য প্রতিদিনই চাপ দিচ্ছে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। বিশ্বম্ভরপুরের খরচার হাওরের কৃষাণি শারমিন আরা বলেন- ঘরের মানুষের খাবার তো অনেক দূরে, এবার পশুর খাবার দিতে পারবো না। ধানের থোরা বের হওয়ার আগেই পানির নিচে চলে গেছে। এলাকায় এবার দুর্ভিক্ষ শুরু হবে।
একই হাওরের কৃষক ইন্তাজ আলী বলেন- গত বছর ফসল ডুবায় সারা বছর কিনে খেতে হয়েছে। এবারও একই সমস্যায় পড়েছি, কিনে খেতে হবে। কিন্তু টাকাও তো নেই চাল কিনে খাওয়ার। সরকার থেকে সুনামগঞ্জ জেলাকে জরুরিভাবে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা উচিত। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা বলেন- উপজেলার অধিকাংশ হাওরের ফসল ইতিমধ্যে তলিয়ে গেছে। পিআইসি কমিটি ও ঠিকাদাররা এর জন্য দায়ী। জরুরি বৈঠকের জন্য ডাকলেও তারা আসেন না। এই গাফিলাতির জন্য এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জাহেদুর হক বলেন- প্রতিদিন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার হেক্টা বোরো আবাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজার হেক্টর জমি ক্ষত্রিগ্রস্ত হয়েছে।  পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন বলেন- টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে। আমাদের কর্মকর্তারা রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন হাওর টিকিয়ে রাখার জন্য।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn