সুনামগঞ্জে ‘বাঁধ ভেঙ্গে পানিতে তলিয়ে গেল ১২ কোটি টাকার বোরো ধান
হাবিব সরোয়ার আজাদ:
সুনামগঞ্জের সর্ববৃহৎ বোরো উৎপাদনের বোরো ফসলী হাওর তাহিরপুরের শনি -মাটিয়াইন সহ ছোট বড় ২৩টি হাওর রক্ষা বেরীবাঁধ ভেঙ্গে যে কোন মুহুর্তে তলিয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় কমপক্ষে ৬ হাজার হেক্টর আবাদ কৃত জমির ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ধান পানিতে তলিয়ে যেতে পারে বলে এমন শংকার কথাই গণমাধ্যমের নিকট শনিবার বিকেলে তুলে ধরেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক।
সরজমিনে খোঁজ নিয়ে ও হাওর পাড়ের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাহিরপুর উপজেলার শনি- মাটিয়াইন সহ ছোট বড় ২৩টি হাওরের বোরো ফসল রক্ষার বেরীবাঁধে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতে কয়েকটি বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে।’ উপজেলার শনির হাওরের সাহেবনগর, লালুর গোয়ালা ও নান্টুখালী ক্লোজার বাঁধ সহ ৩টি ফসল রক্ষা বাঁধ শনিবার বিকেল পর্য্যন্ত রয়েছে ঝুঁকির মুখে।’ এসব বাঁধের মধ্যে সাহেবনগর বাঁধটিতে পাউবোর ঠিকাদার একবস্থা মাটিও ফেলেননি বলে স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেন। ওই বাঁধের ঠিকাদার সুনামগঞ্জের পার্থ সারথী পুরকায়স্থ বলেন, আমি স্থানীয় এক ইউপি সদস্যকে বাঁধের কাজ করার দায়িত্ব দিলে তিনি কয়েকদিন কাজ করিয়ে পরে আর কোন কাজ করেননি।’ মাটিয়াইন হাওরের একটি ফসল রক্ষা বাঁধ, ধরুন্দ বাঁধ ও আঙ্গারুলী হাওরের বাঁধও রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। এ ৩টি বাঁধে স্বেচ্ছাশ্রমে শনিবার সকাল থেকে চলছে বাঁধ মেরামতের কাজ। উপজেলার সংসার হাওরের বাঁধে সরকারি কোন বরাদ্দ না থাকায় জেলা পরিষদের সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খাঁনের আহবানে এলাকার লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে শনিবার সকাল থেকেই বাঁধ রক্ষায় মাটি ভরাটের কাজ করেছেন।’
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেছেন, পাউবো ও ঠিকাদাররা গাঁ ঢাকা দেয়ায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোতে এলাকার লোকজন জনপ্রতিনিধিরা মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।’ শুক্রবার থেকে আজ শনিবার এখন পর্যন্ত বাঁধেই এলাকার লোকজনকে নিয়ে বাঁধ রক্ষায় মাটি ভরাটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, পাউবো, ঠিকাদার কাউকেই বাঁধের আশে এখন আর দেখা যায়না।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায় শুক্রবার রাত পর্য্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাওরের ১৭০০ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২ কোটি টাকা।’
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জাহেদুল ইসলাম শনিবার বিকেলে বলেন, তাহিরপুরের কয়েকটি বেরীবাঁধ চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে যে কোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে শনি ও মাটিয়াইন হাওরের প্রায় ৬ হাজার হেক্টর আবাদী রোরো ফসলী মাট তলিয়ে গেলে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ধানও পানিতে তলিয়ে যাবে।
সংশ্লিস্ট সুত্রে জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৪৮টি হাওরের বোরো ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ মেরামত, সংস্কার ও নতুন বাঁধ নির্মাণে ৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের কাজ শুরুর কথা থাকলেও বাঁেধর কাজ মুলত ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে শুরু হয়। যে কারনে অধিকাংশ হাওরের বাঁধের কাজ এখনো শেষ হয়নি। কোন কোন বাঁধে এখনো মাটিই ফেলা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে বাঁধের কোটি কোটি লুপাটে শুভংকরের ফাঁকি দিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেশ ক’জন কর্তা ব্যাক্তি সিন্ডিক্যাট তৈরী করে মেসার্স গুডম্যান এন্টারপ্রাইজের নামে নিজেরাই ঠিকাদারের সেজে বেশ কিছু বাঁধে মাটি না ফেলে শুধু ফাইল ওয়ার্ক করে গেছেন।’ এ ব্যাপাারে বক্তব্য জানতে সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিনের বক্তব্য জানতে শনিবার বেলা সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্য্যন্ত উনার ব্যাক্তিগত মুঠোফোন
(০১৭১১-৩২৬৯১৪) এ দফায় দফায় কল করলেও তিনি কল রিসিভ না করায় উনার বক্তব্য নেয়া যায়নি।
এদিকে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক শেখ মো. রফিকুল ইসলাম শনিবার বিকেলে বলেন, আমি শনিবার বিশ^ম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার ঝঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো পরিদর্শন করেছি হাওরের বেশ কিছু বাঁধে বিপদসীমার ওপর দিয়েও শনিবার পানি ঢুকছে।’ তিনি আরো বলেন, আমি মাননীয় পানি সম্পদ মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের সাথে শনিবার কয়েকদফা ফোনে আলাপ করে বর্তমানে হাওরের বাঁধ ও ফসল রক্ষায় বাঁশ, বস্তা, খুঁটি ও শ্রমিকের মজুরী এবং অন্যান্য উপকরণের জন্য বরাদ্দ চেয়েছি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের যেসকল প্রকল্পের বিল এখনো ছাড় দেয়া হয়নি সে টাকা থেকেই বাঁধ জরুরী ভাবে মেরামত করে ফসল রক্ষা করা সম্ভব বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, হাওরের ফসল রক্ষার বাঁধ নিয়ে যেসব কর্মকর্তা –কর্মচারী ও ঠিকাদার দুর্নীতি করেছেন তাদের ব্যাপারে মন্ত্রনালয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হবে।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, আপতত আপদকলীন তহবিল থেকে টাকা খরচ করে বাঁধ রক্ষায় যা যা করণীয় তা করতে জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেনা দেয়া হয়েছে।