সুনামগঞ্জে সাংস্কৃতিক সংগঠনকে অনুদান নিয়ে যত প্রশ্ন

শহীদনূর আহমেদ, সুনামগঞ্জ- সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের চারু শিল্প থিয়েটার খাত হতে শিল্পকলা একাডেমির অধীনে প্রতি বছর সারাদেশের ন্যায় সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনকে অনুদান প্রদান করা হয়। এবারও সুনামগঞ্জের ২৫টি সাংস্কৃতিক সংগঠনকে অনুদান প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে জেলা শহরের ১৮টি ও জেলার বাহিরে মফস্বলের বিভিন্ন উপজেলার ৭টি প্রতিষ্ঠানকে অনুদান প্রদান হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের শিল্পকলা একাডেমির অনুদান প্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই জেলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের শিল্পীদের। অনুদান প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা, সিলেকশন ও অনুদান প্রদান নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।

এদিকে জেলার সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে সক্রিয় সংগঠনগুলোকে অনুদান প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার না দিয়ে এর বিপরীতে নিস্ক্রীয় ও নামমাত্র সাংস্কৃতিক সংগঠন অনুদান প্রদানে হচ্ছে নানা আলোচনা সমালোচনা। মন্ত্রণালয়ের চারু শিল্পের থিয়েটারের খাত হতে অনুদান প্রদান করা হলেও সুনামগঞ্জের ক্ষেত্রে নাট্য সংগঠনকে উপেক্ষা করে অনুদান দেয়া হচ্ছে সংগীত ভিত্তিক সাংস্কৃতিক সংগঠনকে। ফলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এই অনুদান প্রকৃত অর্থে মূলধারার সংস্কৃতিকর্মী ও অভিনয় শিল্পীদের বিকাশের কাজে আসছে না বলে ধারণা অনেকের। তাই অনুদান প্রদানে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে সাথে জড়িত সক্রিয় নাট্য সংগঠনকে নির্বাচনে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টিআকর্ষণ করেছেন অভিনয় শিল্পীরা।

জানা যায়, এবার শিল্পকলা একাডেমির অধীনে ২৫ টি সাংস্কৃতিক সংগঠনকে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টাকা করে মোট ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হয়। এর মধ্যে জেলা শহরের অবস্থিত ১৮টি, মফস্বল উপজেলা ছাতক ৪ টি,দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ১টি, জামালগঞ্জ ১ ও দিরাই উপজেলার ১টি প্রতিষ্ঠানকে অনুদান প্রধান করা হয়। এবার জেলা থেকে ৪০টির উপরে সংগঠন অনুদানের জন্য আবেদন করে। জেলা কমিটির নির্বাচনকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জাতীয় কমিটি ২৫টি সংগঠনকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করে। সম্প্রতি এই ২৫টি সংগঠনকে অনুদানের চেক প্রদান করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

জানা যায়, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত সক্রিয় একাধিক প্রতিষ্ঠান অনুদান প্রাপ্তির জন্য আবেদন করলেও সংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের এই অনুদান থেকে বঞ্চিত হন তারা। এর মধ্যে জেলার নাট্যঙ্গনের মূলধারার সংগঠন সুনামগঞ্জ প্রসেনিয়াম থিয়েটার, থিয়েটার সুনামগঞ্জ, স্বপ্নাদর্শের মতো সক্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠনও রয়েছে। একই পরিবারের তিনটি সংগঠন অনুদান পেয়েছে। যা অনেকের কাছেই রহস্যজনক মনে হচ্ছে। তাছাড়া জেলা শহরে অবস্থিত বেশিরভাগ সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে অনুদানের আওতায় নিয়ে আসলেও জেলার ৭ টি উপজেলার কোনো সংগঠনকে অনুদান প্রদান করা হয়নি। অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে সংগঠন নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দোষারূপ করছেন অনুদান বঞ্চিত সক্রিয় সংগঠনগুলো।

সত্যশব্দের পরিচালক দেবাশীষ তালুকদার শুভ্র বলেন, অনুদান প্রদানের সংগঠন বাচাইয়ের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। কাউকে দোষারূপ করবো না । কে যোগ্য কে যোগ্য না তা নিধারণ করবে শিল্পকলা একাডেমি ও সংশ্লিষ্টরা। তবে অনুদান প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আমার জিজ্ঞাসা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা কোন কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে অনুদানের জন্য সংগঠন সিলেকশন করেছেন? সুনামগঞ্জ শহরে যাদেরকে আমরা সারা বছর মঞ্চে দেখি এমন একটি সংগঠনগুলোকে কোন দৃষ্টিতে বাদ দেয়া হয়েছে। কেনও তাদের তালিকায় রাখা হয়নি। এটি স্পষ্ট করা প্রয়োজন। সুনামগঞ্জ প্রসেনিয়াম অনুদানের আবেদন করেছিল তাদের বাদ দেয়া হয়েছে। গত বছর প্রসেনিয়াম অনুদান পেয়েছিল। একবার যে অনুদান পায় তাকে প্রতিবছর রাখার কথা। এবছর কেন সুনামগঞ্জ প্রসেনিয়ামকে রাখা হয়নি সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে এ বিষয়ে জানতে চাই।

থিয়েটার সুনামগঞ্জের দল প্রধান দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী বলেন, আমরা আবেদন করেছিলাম পাইনি। আমি একজন সাংস্কৃতিককর্মী হিসেবে মনে করি জেলা পর্যায়ে যারা সাংস্কৃতিক চর্চা করে তারা সকলই আর্থিক টানাপুড়নে থাকেন। ধারদেনা করে অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকেন। এক্ষেত্রে জেলায় যারা কাজ করেন প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানই এই অনুদান পাওয়ার যোগ্য। নামকাওয়াস্তে সংগঠনগুলোকে প্রাধান্য না দিয়ে জেলার সক্রিয় সংগঠনগুলোকে বাচাইয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা সতর্ক থাকবেন বলে আশা করি।

এদিকে অনুদানের বিষয়ে সংগঠন বাচাইয়ের বিষয়টি জানেন না জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামসুল আবেদীন। সংগঠন বাচাইয়ের বিষয়টি কিছু ত্রুটি রয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমি বাছাই কমিটির সদস্য নই। তবে আমার কাছে এমন অনেক অভিযোগ এসেছে। অনেকগুলো সক্রিয় সংগঠন বাদ পড়েছে। যাদের পাওয়া উচিৎ ছিল। এ ব্যাপারটি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবো।

এ ব্যাপারে জেলা কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক পাবেল বলেন, একটি নির্দিষ্ট ফরমের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। আবেদনকৃতদের মধ্য থেকে জেলা কমিটি নির্বাচন করে জাতীয় কমিটির কাছে পাঠান। তারাই মূলত চূড়ান্ত মনোনীত করেন। সদস্য সচিব হিসেবে জেলা কমিটিতে আমিও আছি। যে যে সক্রিয় সংগঠনগুলো বাদ পড়েছে তাদের নাম নির্বাচন করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। কেন্দ্র থেকে কেন তাদের বাদ দেয়া হলো বুঝতে পারছি না। এই সংগঠনগুলো বাদ পড়ায় ব্যক্তিগতভাবে আমি অবাক হয়েছি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবো।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn

এ বিভাগের আরো খবর

একজন খোকন মাষ্টার- সুপ্ত বাসনা যার হৃদয়ে

একজন খোকন মাষ্টার- সুপ্ত বাসনা যার হৃদয়ে

শিক্ষা গুরু বাবু সুবোধ রঞ্জন দাস

শিক্ষা গুরু বাবু সুবোধ রঞ্জন দাস

মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রীর

মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রীর