সুনামগঞ্জে হামের প্রাদুর্ভাব : আতঙ্কে অভিভাবকরা
সুনামগঞ্জে ভাইরাসজনিত রোগ হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে ৩৫ শিশু আক্রান্ত হওয়ায় অভিবাবকসহ চিকিৎসকরাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে আরো প্রায় দেড়শ’ রোগী। এদিকে, হাম প্রতিরোধে ১ মাসের টিকার ক্যাম্পেইন চলছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন আশুতোষ দাস। সদর হাসাপাতাল সূত্রে জানা গেছে- গত মাস দেড়েক ধরেই সুনামগঞ্জে ভাইরাসজনিত রোগ হাম রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। শিশুদের পাশাপাশি বয়স্করাও হাম রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতিদিন হাসপাতালে বাড়ছে এই রোগের রোগীর সংখ্যা। পরিসংখ্যানে একসঙ্গে এত বেশিসংখ্যক শিশু হামরোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি এবারই প্রথম। আক্রান্তদের আলাদাভাবে চিকিৎসার পাশাপাশি প্রতিষেধক টিকার পরও হামের প্রাদুর্ভাব হঠাৎ করে কেন বেড়ে গেল, এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি ঢাকা থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল এসেছিলেন।
প্রতিনিধি দল সুনামগঞ্জ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে গেছেন পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য। পরীক্ষার পরই দেখা যাবে কি কারণে এই ছোঁয়াছে রোগের প্রাদ্যুভাব দেখা দিয়েছে। ভ্যাকসিনে সমস্যা আছে কিনা এ বিষয়টিও প্রতিদিনিধি দল চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- শিশুরা হামে বেশি আক্রান্ত হয় বলে একবছর থেকে ১৮ মাস বয়সী শিশুকে প্রতিষেধক টিকা নিতে হয়। কিন্তু যারা টিকা নিয়েছেন তারাও এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুদের হামের প্রতিষেধক টিকা দেয়ার পরও আক্রান্ত হওয়ায় অভিবাবকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সুনামগঞ্জ হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এনামুল হক খাঁন বলেন- হাম রোগের চারটি লক্ষণ, এগুলো হল প্রচণ্ড জ্বর, সর্দি-কাশি, চোখ লাল, শরীরে লাল রেশ। তবে হাম রোগের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, সরকার এই রোগের বিষয়ে উদ্যেগী আছে, হামের টিকাও দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এই রোগে এক শিশুও মারা যায় নি। তাদের সুিচকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিশ্বম্ভরপুর থেকে আসা অভিভাবক আক্তার হোসেন বলেন- জ্বর হওয়ায় প্রথমে একবার আমার ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে আসছিলাম, ভাল হলে বাড়িতে নিয়ে যাই। পরে অবস্থা খারাপ হলে আবার হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখন ফেরা (হামরোগ) হয়েছে বলে ডাক্তার জানিয়েছেন। তিনি বলেন- ফসল হারিয়ে বিপদে আমি, ছেলেকে চিকিৎস করাবো তার টাকাও পকেটে নেই। বড়পাড়া থেকে আসা এক অভিভাবক বলেন- বাচ্চারটার হাম অইছে, বেড নাই, মাটিত অউ কষ্ট কইরা থাকতো অর। আরেক অভিভাবক বলেন, বাইরে থেকে ইনজেকশন কিনতে হচ্ছে, টাকা-পয়সা হাতে না-থাকায় বিপাকে পড়েছি।
ষোলঘর এলাকার আনোয়ার হোসেন বলেন- সুনামগঞ্জে দুর্যোগ যেন আমাদের পিছু ছাড়ছে না। সব ফসল নিয়ে গেল, এখন হামে রোগ দেখা দিছে, প্রতিদিন হাসপাতালে মানুষ আসছে চিকিৎসা নিতে। আমার সাধারণ মানুষ সব হারিয়ে নিঃস্ব, চিকিৎসা করানোর কোন টাকা নেই। সরকার থেকে এ ব্যাপারে জরুরিভাবে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন, যাতে বিনা চিকিৎসায় একটা শিশুও না মরে। ভ্যাকসিন এ কোন সমস্যা ছিলো কি-না সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান- “ঢাকা থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল এসেছিলেন তারা নমুনা নিয়ে গেছে। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখবেন কোন সমস্যা ছিলো কিনা। হামের টিকার ক্যাম্পেইন বুধবার (২৪ মে) শেষ হবে।”