শহীদনুর আহমেদ:: সুনামগঞ্জ ফুটবল অঙ্গন স্থবিরতায় ছেয়ে গেছে। মামলা জটিলতায় বন্ধ আছে সুনামগঞ্জ প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বড় ধরণের কোন টুর্ণামেন্ট আয়োজন না করতে পারায় হতাশ ক্রীড়ামোদী ও ফুটবলপ্রেমী সচেতন মহল। জেলার ফুটবল অঙ্গনে কবে এই স্থবিরতা কাটবে তার উত্তর জানেন না কেউই। এছাড়া পৃষ্ঠপোষকতা আর প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাবে বের হয়ে আসছে না নতুন খেলোয়ার। মুকুলেই ঝড়ে যাচ্ছে অসংখ্য প্রতিভা। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণ ও মৃতপ্রায় ফুটবল অঙ্গনকে পুনঃজনম দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন জেলার সাবেক খেলোয়ারসহ সাধারণ জনতা। জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সুনামগঞ্জ প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ। ৮টি ম্যাচ খেলার পর আধিপত্য বিস্তার আর খেলা পরিচালনায় ত্রুটির কারণে লীগ আর ফাইনালের মুখ দেখেনি। দীর্ঘ ৫ বছরেও লীগটি সম্পন্ন করতে উদ্যোগ নেননি সংশ্লিষ্টরা। ২০১৪ সালের পর মাঠে গড়ায়নি কোনো ধরনের লীগ। ফলে বেরিয়ে আসছেনা নতুন খেলোয়াড়।
জেলার ফুটবল অঙ্গনের এমন অবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক-বর্তমান ফুটবলার ও ফুটবলপ্রেমীরা। ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ জেলা খেলোয়ারবৃন্দের ব্যাণারে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরে স্মারকলিপি ও মানববন্ধন করেছেন সাবেক ফুটবলার ও ফুটবলপ্রেমী জনতা।  জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ খেলোয়াড়দের দ্বন্দ্বের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে কয়েক বছর পার হয়ে গেলেও জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন অনেক চেষ্টা করেও খেলাটি সম্পন্ন করতে পারেনি। এরই মধ্যে শেষ হয়ে যায় এসোসিয়েশনের কমিটির মেয়াদ। নির্বাচন মাধ্যমে কমিটি গঠনে নির্দেশনা দেয়া হলেও বিলম্ব হওয়ায় কার্যক্রম পরিচালনায় জাকির হোসেন দিপুকে আহ্বায়ক করে এডহক কমিটি করে দেয় বাফুফে।

২০১৭ সালে এডহক কমিটি বাতিল করে নির্বাচনের মাধ্যমে আবু জাকেরকে সভাপতি করে নতুন কমিটি গঠন করা হলেও কমিটির বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন এডহক কমিটির সভাপতি জাকির হোসেন দিপু। হাইকোর্টে দীর্ঘদিন ধরে মামলাটি চলমান থাকায় ফুটবল লীগ পরিচালনায় নির্দেশনা দিচ্ছেনা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। তাই মামলা জটিলতায় কোনো ধরনের লীগ আয়োজন করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের দায়িত্বশীলরা। দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কোনো লীগ আয়োজন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক ফুটবল টিমের সত্ত্বাধিকারী ও খেলোয়াড়রা। রাজরান ফুটবল টিমের সত্ত্বাধিকারী মো. জহিরুল বলেন, ২০১৪ সালে প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ আয়োজন করা হলেও এসোসিয়েশনের ব্যর্থতায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ৪ বছর পরও মাঠে কোনো লীগ আয়োজন করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এ কারণে ফুটবল অঙ্গনে স্থবিরতা বিরাজ করছে।

মোহামেডান ফুটবল টিমের সত্ত্বাধিকারী আহসান জামিল আনাস বলেন, নতুন খেলোয়াড় তৈরিতে ফুটবল লীগ আয়োজন অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য সুনামগঞ্জে ফুটবল খেলা নিয়মিত হচ্ছে না। যার ফলে জেলার ফুটবল অঙ্গন হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। মামলা জটিলতা কাটিয়ে ফুটবল আয়োজন করা প্রয়োজন। ফুটবল বন্ধের প্রতিবাদে আমারা ইতোমধ্যে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছি। এতেও যদি কোনো পরিবর্তন না হয় আমরা ফুটবলারদের নিয়ে রাজপথে কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবো।  জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি আবু জাকের বলেন, কমিটি নিয়ে মহামান্য হাইকোর্টে একটি মামলা চলমান রয়েছে। মামলা জটিলতার কারণে লীগ আয়োজনে কোনো নির্দেশনা দিচ্ছেনা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। তবে হাইকোর্টের দুইটি রায় আমাদের পক্ষে আসছে। আশা করি দুয়েক মাসের মধ্যে মামলাটির চূড়ান্ত রায় আমাদের পক্ষে আসবে। মামলা জটিলতা কাটিয়ে চলতি মৌসুমে ফুটবল লীগ আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn