হাওরের জনপদ মেঘালয় সীমান্তবর্তী জেলা সুনামগঞ্জে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাড়ছে প্রাণহানী। জেলার করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে গড়ালেও করোনা চিকিৎসার জন্য নেই উন্নত সেবা। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, প্রয়োজনীয় লোকবল ও অবকাঠামোসহ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় নানা সংকট রয়েছে। সাধারণ অক্সিজেন সেবাই যেখানে অব্যবস্থাপনায় ক্রুটিপূর্ণ সেখানে করোনা ভাইরাস চিকিৎসার প্রধানতম সেবা আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর সেবা নিয়ে তৈরী হয়েছে দুরাশা।

আইসিইউ বিভাগ চালুর জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ্‘র প্রচেষ্টায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের পুরাতন ভবনে অক্সিজেন্টপ্লান্ট বসানোর কাজ চলমান থাকলেও হাসপাতাল ভবনের সংস্কার কাজের ধীরগতি, লোকবল সংকট, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকাসহ অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধার অভাবে চলতি বছরে আইসিইউ সেবা চালুর কোনো সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে না। ফলে জেলার করোনা পরিস্থিতি একটু অবনতির দিকে গেলে সামাল দেয়া অসম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এক্ষেত্রে আইসিইউ সেবা চালু করতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সদর হাসপাতালের পুরাতন ভবনে ৫০টি শয্যায় করোনা রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিনই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন রোগীরা। আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে সাধারণ অক্সিজেনসিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন সেবা দেয়া হচ্ছে। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে কাজে আসছে না এসব সাধারণ অক্সিজেন সিলিন্ডার। ফলে বাধ্য হয়ে উন্নত সেবা পেতে সিলেট রেফার করতে হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালে অক্সিজেনসিলিন্ডার পর্যাপ্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল প্রশাসন। হাসপাতালে ১৩৬০ লিটারের ১৮৬টি ও ৬ হাজার ৮০০ লিটারের ৩৬টি সিলিল্ডার মজুদ রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

অপরদিকে, হাসপাতালের পুরাতন ভবনে ১০টি আইসিইউ বেড স্থাপন করতে অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর কাজ চলমান রয়েছে। হাসপাতাল ভবনের সংস্কার কাজ চলমান থাকায় এখনও কাজ বুঝিয়ে দেয়নি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অক্সিজেনপ্লান্ট বসানোর কাজ সমাপ্ত হলেও এর ব্যবহারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ভেন্টিলেটর সেবা প্রদানে প্রয়োজনীয় লোকবল নেই বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে অক্সিজেনপ্লান্ট চালু হলে হাইফ্লো নেজেল ক্যানোলার মাধ্যমে রোগীদের আপদকালীন সেবা দেয়া যাবে বলে জানান তারা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জেলার করোনা পরিস্থিতি যেভাবে খারাপের দিকে যাচ্ছে রোগীর মৃত্যুর হার কমাতে হাইফ্লো নেজাল ক্যানোলাসহ আইসিইউ থাকতেই হবে। কেননা, হাইফ্লো নেজাল ক্যানোলা দিয়ে এক মিনিটে ৭০ লিটার অক্সিজেন দেওয়া যায়, এর সঙ্গে আইসিইউ সাপোর্ট থাকলে ৭ (সাত) জন রোগীকে সাপোর্ট দেওয়া যেত। হাইফ্লো নেজাল ক্যানোলা চালাতে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। হাইফ্লো নেজাল ক্যানোলা ও আইসিইউ পরিচালনায় অভিজ্ঞ জনবল থাকতেই হবে। আইসিইউ ছাড়া করোনারোগীর পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সম্ভব নয়।

অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ও বিএমএ’র সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল হাকিম বলেন, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ডাক্তার ও প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধার চরম সংকট রয়েছে। হাসপাতালে আগত মৃদু আক্রান্ত করোনা রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাধ্যমে সেবা দেয়া হচ্ছে। মাঝারি কিংবা বেশি আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেয়ার সক্ষমতা নেই সদর হাসপাতালের। প্রধানমন্ত্রী জেলা পর্যায়ে সকল হাসপাতালে আইসিইউ বেড চালু করার ঘোষণা দিলেও এটি বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেই। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেড স্থাপনের কাজ চলমান থাকলেও কাজের অগ্রগতি হতাশাজনক বলে জানান তিনি।

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে করোনা রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন সেবা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিল্ডার পর্যাপ্ত রয়েছে বলে জানান তিনি। হাসপাতালের পুরাতন ভবনে ১০টি আইসিইউ বেড স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করা গেলে রোগীদের ভেন্টিলেটর সেবা প্রদান করা যাবে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে আইসিইউ বিভাগ চালু নিয়ে অনিশ্চিয়তা রয়েছে বলে জানান তিনি।

সুনামগঞ্জ -৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ডাক্তার সংকট, যন্ত্রপাতি, আইসিইউ বিভাগ স্থাপন নিয়ে একাধিকবার সংসদে কথা বলেছি। ইউনিসেফের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে হাসপাতালের পুরাতন ভবনে আইসিইউ বেড স্থাপন করতে অক্সিজেনপ্লান্টের কাজ চলমান রয়েছে। হাসপাতালের সংস্কার কাজ চলমান থাকায় এখনও কাজ বুঝিয়ে দেয়নি ঠিকাদার। তিনি আরও বলেন, দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। এই অবস্থায় হাইফ্লো নেজাল ক্যানোলা‘র মাধ্যমে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে করোনা রোগীদের আপদকালীন সেবা দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন তিনি।

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn