সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় চার হাজার। পাঠদানের বিষয় ১৪টি। কিন্তু পাঁচটি বিষয়ে কোনো শিক্ষকই নেই। এ কারণে নিয়মিত পাঠদান হয় না। তাই ফল খারাপ হচ্ছে। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ৭৩৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ৫৬৪ জন। বিজ্ঞান বিভাগের ৮৯ জনের মধ্যে ৫৮ জনই ফেল করেছেন। কেউ জিপিএ-৫ পাননি।কলেজের প্রশাসন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ শহরের বাঁধনপাড়া এলাকায় কলেজটি ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৭ সালে জাতীয়করণ হয়। ২০১২ সালে ডিগ্রি (পাস) কোর্স চালু হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থী ৩ হাজার ৯০০। জাতীয়করণ ও ডিগ্রি কোর্স চালু হলেও শিক্ষক-কর্মচারীদের পদ বাড়েনি। বর্তমানে ১৫ জন শিক্ষকের মধ্যে অধ্যক্ষসহ আছেন ১০ জন। পদার্থ, রসায়ন, গণিত, দর্শন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের কোনো শিক্ষক নেই। অন্য বিষয়গুলোতে আছেন একজন করে। কোনো শিক্ষক না থাকায় আইসিটি বিষয় পড়াতে হয় অন্য শিক্ষককে। হাওর-অধ্যুষিত এই জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসেন এখানে। জেলায় শুধু নারী শিক্ষার্থীদের জন্য আর কোনো ডিগ্রি কলেজ নেই।

কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনাম কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ডিগ্রি (পাস) কলেজে প্রতিটি বিষয়ে একজন সহযোগী ও একজন সহকারী অধ্যাপক এবং দুজন প্রভাষক থাকার কথা। সে অনুযায়ী এই কলেজে ১৪টি বিষয়ে ৫৬ জন শিক্ষক প্রয়োজন। কিন্তু আছেন মাত্র ১০ জন। উপাধ্যক্ষের কোনো পদ নেই। বিজ্ঞানের সাতটি বিষয়ে কোনো প্রদর্শক নেই। রসায়ন বিভাগের কোনো শিক্ষক নেই দেড় বছর ধরে, পদার্থ বিভাগে চার বছর, দর্শন বিভাগে দেড় বছর, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে আড়াই বছর এবং গণিত বিভাগে পাঁচ মাস ধরে। অন্য বিষয়গুলোতেও চারজনের স্থলে আছেন একজন করে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষকসংকটের কারণে কোনো বিষয়েই নিয়মিত ক্লাস হয় না। দেখা গেছে, একটি বিষয়ে শিক্ষক আছেন মাত্র একজন। অথচ প্রতিদিন তাঁর পাঁচটি ক্লাস আছে। যেদিন ওই শিক্ষক কলেজে অনুপস্থিত থাকেন, সেদিন এ বিষয়ে আর কোনো ক্লাস হয় না। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা আছেন বেশি বিপাকে। তাঁদের তিনটি বিষয়ে একেবারেই শিক্ষক না থাকায় এসব বিষয়ে দিনের পর দিন কোনো ক্লাস হয় না। তাই বাধ্য হয়ে প্রাইভেট পড়তে হয় তাঁদের। কলেজে ক্লাস না হওয়ায় তাঁরা ভালো ফল করতে পারেন না।এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বিজ্ঞান বিভাগের অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী ফেল করায় উদ্বিগ্ন দ্বাদশ শ্রেণির (বিজ্ঞান) শিক্ষার্থী রিসাহ তাসনিয়া ও প্রমা চক্রবর্তী। তাঁরা জানান, ক্লাস না হলে ফল ভালো করা কঠিন। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা একাধিকবার অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন।
মানবিক শাখার শিক্ষার্থী সুরমা বেগম বলেন, শিক্ষক নেই, তাই ক্লাসও নেই। কোনো দিন একটা, কোনো দিন দুটি ক্লাস হয়। আবার কোনো দিন একেবারেই হয় না। তাই কলেজে আসা-যাওয়া করেই সময় পার করেন সবাই।কলেজের একজন শিক্ষক বলেন, কেবল শিক্ষকসংকটের কারণে কোনোভাবেই নিয়মিত পাঠদান অব্যাহত রাখা যাচ্ছে না। বছরের পর বছর এভাবেই চলে আসছে, কারও কোনো গরজ নেই।
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সাহাদৎ হোসেন বলেন, জাতীয়করণের পর ৬৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীর পদ সৃষ্টির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু এখনো ইতিবাচক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। মাত্র ১০ জন শিক্ষক দিয়ে ৪ হাজার শিক্ষার্থীর নিয়মিত পাঠদান চালানো প্রায় অসম্ভব। তবু প্রচণ্ড চাপ নিয়ে তাঁরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন।অধ্যক্ষ পরাগকান্তি দে বলেন, শিক্ষকসংকটই কলেজের সবচেয়ে বড় সমস্যা। শিক্ষক থাকলে তো কোনো না কোনোভাবে ক্লাস নেওয়া যায়। পাঁচ বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই। সংকট আছে সব বিষয়েই। এ কারণেই পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া পরীক্ষাকেন্দ্রের কারণেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি।অধ্যক্ষ বলেন, ‘শিক্ষকসংকটের বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে নিয়মিতভাবে জানানো হয়। আমি নিজেও নানাভাবে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। অতিথি শিক্ষক দিয়ে কিছু ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অতিথি তো অতিথিই।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn