সুরমার ভাঙ্গনের কবলে ছাতক-দোয়ারা সড়ক
সুরমা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে পড়ে তলিয়ে যাচ্ছে ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়ক। ভাঙ্গনের কারণে নদীগর্ভে ইতিমধ্যেই বিলীন হয়েছে এলাকার অসংখ্য বাড়ী-ঘর। সুরমার ভাঙ্গনে ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়কটির প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা পড়েছে মারাত্মক হুমকির মুখে। সড়কটির অধিকাংশই নদীর কুল ঘেষা হওয়ায় আরো কয়েকটি অংশে ভাঙ্গন ধরেছে। ফলে যে কোন মুহুর্তে ছাতক উপজেলার সাথে দোয়ারাবাজার উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার আশংকা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সড়ক যোগাযোগ ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সুরমা নদীর উত্তর পারে বসবাসরত ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষকে। এদিকে বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে দোয়ারাবাজার-ছাতক সড়কের মাস্টারপাড়া এলাকার কিছু অংশে ধস দেখা দেয়। এতে সড়কের প্রায় একশ মিটার ধসে যায়। এরপর থেকে ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা য়ায়, এক সময়ে ছাতক থেকে দোয়ারাবাজার যাওয়া-আসার অন্যতম মাধ্যম ছিল লঞ্চ ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা। বিকল্প হিসেবে হেমন্তে পায়ে হেটেও আসা-যাওয়া করতো এ অঞ্চলের মানুষ। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ছাতক-দোয়ারায় যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়। নব্বই দশকের শেষের দিকে সুরমা নদীর উত্তর পার নোয়ারাই থেকে সুরমার কুল ঘেষে ছাতক উপজেলার সাথে দোয়ারাবাজার উপজেলার সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়। প্রথম দিকে কাঁচা সড়ক দিয়েই ছাতক-দোয়ারার মানুষ যাতায়াত করেছেন। ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে সড়কটি পাকাকরণের কাজ শুরু করা হয়। ছাতকের নোয়ারাই থেকে দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণ সমাপ্ত হলে ছাতক-দোয়ারাবাজার উপজেলার মানুষের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয় এক নতুন মাইলফলক। লঞ্চ বা নৌকাযোগে ছাতক থেকে দোয়ারায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার স্থলে এখন সড়কপথে মাত্র ৩০/৩৫ মিনিটেই পৌছা সম্ভব হয়েছে।
ছাতক-দোয়ারাবাজার উপজেলা নিয়ে (সুনামগঞ্জ-৫) সংসদীয় আসন হওয়ায় দু’উপজেলার মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক-সামাজিকসহ সর্বক্ষেত্রে রয়েছে একটি সুমধুর সম্পর্ক। অনুন্নত যোগাযোগের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন সম্পর্কে টানাপোড়ন থাকলেও সড়ক যোগাযোগ উন্নত হওয়ার সাথে-সাথে মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজনীতাও বেড়ে যায়। কিন্তু সুরমার কুল ঘেষা এ সড়কটি নদী ভাঙ্গনের মুখে পড়ে সুবিধাভোগী মানুষের মধ্যে চরম হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমবারের মতো পাকা সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হলে তৎকালীন সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক সড়ক প্রশস্থকরনসহ দ্বিতীয় দফা সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে ছাতক-দোয়ারার যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন। ইতিমধ্যেই সুরমা নদীর ভাঙ্গনে দু’বার পাকা সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সাথে দোকানপাট ও বহু ফসলী জমিও গেছে সুরমার পেটে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের এ সড়কটির লক্ষীবাউর এলাকার প্রায় দেড় কিলোমিটার পাকা সড়ক আবারো পড়েছে মারাত্মক ভাঙ্গনের মুখে। লক্ষীবাউর বাজার জামে মসজিদ ও বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান বহু আগেই ভাঙ্গনের মুখে পড়ে বিলীন হয়ে গেছে। সড়কের পাশাপাশি লক্ষীবাউর বাজারটি আবারো নদী ভাঙ্গনের হুমকির মুখে পড়েছে।
লক্ষীবাউর গ্রামের মতিন মিয়া, সফিক মিয়া ও আব্দুল বারী জানান, সুরমার ভাঙ্গনে ফসলী জমি, দোকানকোটা হারিয়ে তাদের মতো অনেকেই এখন প্রায় নি:স্ব হয়ে পড়েছেন। নদী ভাঙ্গন রোধ করা না গেলে এলাকার ফসলী জমি এক সময় সুরমায় গ্রাস করে ফেলবে। দু’দফা পাকা সড়কসহ ফসলী জমি সুরমা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তৃতীয়বারের মতো নির্মিত সড়কটিও মারাত্মক ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। নতুনভাবে নির্মিত মসজিদটিও পড়েছে হুমকির মুখে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মসজিদসহ লক্ষীবাউর বাজার নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুঁইয়া বলেন, দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের সামনে পাকা সড়কে ভাঙনের পর কিছু সংস্কার কাজ হয়েছিল। এই উপজেলায় নদী ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা আছে। কিন্তু সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।