তথাকথিত সুশীল সমাজের কঠোর সমালোচনা করে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেছেন, ‘দেশের উন্নয়ন না দেখাটা এক ধরনের অসুস্থতা। কারণ তাদের দৃষ্টি রয়ে গেছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের দিকে।’ শেখ হাসিনা সংসদে বিশ্বের বিভিন্ন শীর্ষ গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও দেশের সুশীল সমাজের একটি অংশের সংবাদ সম্মেলন করে কোনো উন্নয়ন দেখতে না পাওয়া সংক্রান্ত এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

উল্লেখ্য, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সর্বজনিন উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অবস্থান সর্বশীর্ষে এবং ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সামগ্রিকভাবে আগের বছরের চেয়ে দু’ধাপ এগিয়ে ৩৪তম স্থান দখল করেছে। এছাড়া প্রাইস ওয়াটার হাউজ কুপারস বলছে, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ২৯তম এবং ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের গতিধারায় দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এবং সমগ্র বিশ্বও তার স্বীকৃতি দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবে এটা বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের কিছু মানুষ এই উন্নয়ন অগ্রগতি চোখে দেখে না।’ ‘এরা চোখ থাকতেও অন্ধ এবং কান থাকতেও বধির’ উল্লেখ করে এ সময় একটি পুরনো দিনের গান-‘হায়রে কপাল মন্দ, চোখ থাকিতেও অন্ধ’র উদ্ধৃতি উল্লেখপূর্বক এই শ্রেণির মানুষের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘যারা চোখ থাকিতেও অন্ধ তাদের তো হাজার চেষ্টা করে দেখানোও যাবে না, আর বোঝানোও যাবে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার একটাই চিন্তা বাংলাদেশের মানুষ কি পেল, তারা ভাল আছে কি না, তারা খুশী কি না-তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো আমরা পূরণ করতে পারছি কি না, সেটাই বিবেচ্য বিষয়।’দেশের তথাকথিত সুশীলদের কর্মকাণ্ডে প্রধানমন্ত্রী এদিন সুশীলের সংজ্ঞা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।তিনি জানতে চান-কিভাবে কোন তত্ত্বের ভিত্তিতে এই শ্রেণির লোকজন সুশীল হয়েছে।শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা শ্রেণি আছে বাংলাদেশে যেটা আমি সবসময় বলে থাকি, তাদের খুব আকাঙ্খা ক্ষমতায় যাবার এবং পতাকা পাবার। কিন্তু তারা জনগণের কাছে যেতে পারেন না। ভোটের রাজনীতিতে তারা অচল।’তিনি বলেন, ‘ভোটের রাজনীতি করতে গেলে জনগণের ভোট পেতে হয়। জনগণের কাছে দাঁড়াতে হয়, ভোট ভিক্ষা চাইতে হয়, ভোট পেয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়েই এই সংসদে বসতে হয় এবং সরকার গঠন করতে হয়।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থার প্রতি তার সরকারের আনুগত্যের উল্লেখ করে বলেন, অন্যাদিকে দেশের যেই শ্রেণিটা রয়েছে তারা ভোটের জন্য জনগণের কাছে না গিয়ে বাঁকা পথে ক্ষমতায় যেতে চায়।সংসদ নেতা বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর দেশে যে হত্যা ক্যু ও ষড়যন্ত্র এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয় তার সুযোগ নিয়ে এ ধরনের মানুষ ক্ষমতায় যাবার একটা পথ পায়। আর অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা সবসময়ই তাদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য এ ধরনের লোককে খুঁজে নেয়।

‘কিছু মানুষ সবসময়ই থাকে তারা নিজেদেরকে এ ধরনের অবৈধ ক্ষমতাধরদের কাছে নিজেকে বিক্রি করতে প্রস্তুত, ক্ষমতার ক্ষেত্রে তারা বুকে সাইনবোর্ড লাগিয়েই বসে থাকে আমাকে ব্যবহার করুন’, বলেন প্রধানমন্ত্রী। অসাংবিধানিক পথে দেশে কোনো ক্ষমতাধরের সরকার গঠনের অপেক্ষাতেই তারা বসে থাকে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মার্শাল ল’ দিয়ে বা ইমার্জেন্সি দিয়ে যদি কেউ ক্ষমতা দখল করে তবে,তাদের গুরুত্ব বাড়বে। তারা একটা পতাকা পাবে এবং ক্ষমতায় যেতে পারবে।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn