একটি সেতুর জন্য ৫২ বছর অপেক্ষা করেছেন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের ছাতক-দোয়ারার সীমান্তবর্তী এলাকার লক্ষাধিক মানুষ।। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫২ বছর অতিবাহিত হলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এ অঞ্চলে। সেতুর অভাবে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ। অবশেষে তাদের সেই অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। ছনবাড়ি বাজার সংলগ্ন ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জের সংযোগস্থল সোনাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। ইতোমধ্যে পাইলিংসহ সেতুর কাজ শুরু হয়ে গেছে। শুক্রবার (১০ মার্চ) বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটির ভিত্তিস্থাপন করবেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক।
সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে সুনামগঞ্জের ছাতকের সাথে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্ঠান্ত স্থাপন হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জ দুই উপজেলার ব্যবসা-বাণিজ্য আরও প্রসারিত হবে। ঘুচবে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের চরম দুভোর্গ।
জানা যায়, ছাতক-দোয়ারা ও কোম্পানীগঞ্জের কিছু অংশ নিয়ে একসময় বৃহত্তর ছাতক ছিল। পরবর্তীতে দোয়ারা ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিভক্তি হয়। এই তিন উপজেলার উত্তর সীমান্তে রয়েছে ভারত। ভারতের মেঘালয় রাজ্য ঘেঁষে সোনালী চেলা ও মরা চেলা নদী এসে যুক্ত হয়েছে সুরমা নদীতে। মূলত নদী কেন্দ্রিক এখানে গড়ে উঠে পাথর, চুনাপাথর, বালুসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য। এসব ব্যবসা-বাণিজ্য প্রাচীন যুগ থেকে চলে আসছে। যে কারণে এখানে গড়ে উঠেছে একাধিক শিল্প কারখানা। তেরটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ছাতক উপজেলা। এ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সোনালী চেলা নদী। ওই নদী পথে নৌকা দিয়ে পরিবহন হয় বালু পাথর। নদীর ওপারে রয়েছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখাল ইউনিয়নসহ অন্যান্য এলাকা। ছাতকের ইসলামপুর ও কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল দুই ইউনিয়নকে বিভক্তি করে রেখেছিল সোনালী চেলা নদী। হেমন্ত ও বর্ষায় মানুষ খেয়া নৌকায় পারাপারের একমাত্র ভরসা ছিল। সে হিসেবে এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের দূভোর্গ পোহাতে হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময় এলাকাবাসীর দাবি ছিল সোনালী চেলা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের কিন্তু নির্মিত হয়নি। অবশেষে নির্মাণ কাজ শুরু করেছে বর্তমান আওয়ামী লীগের সরকার।
স্থানীয় বাসীন্দারা জানা, সেতু না থাকার করনে তাদের বিভিন্ন সমস্যায় পরতে হয়। বিশেষ করে বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে ছাতকের নিজগাও, রাসনগর, বনগাও, পুরান নোয়াকোট, ধনীটিলা, রতনপুর, বাগান ও গাংপার নোয়াকোট থেকে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারত না। বর্তমানে বাঁশ-কাঠের সাঁকো দিয়ে পারাপার হলেও পাকা সেতু নির্মাণ হলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সহজ হবে। এছাড়া সোনাই নদীতে সেতু নির্মাণ হলে এই অঞ্চলে যোগাযোগ সহজ ও পণ্য পরিবহন সাশ্রয়ী হবে। ছাতক-দোয়ারার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে সহজেই কৃষিপণ্য সিলেটে বাজারজাত করা যাবে। সোনাই নদীর সেতুটি তাদের দুর্ভোগ লাঘব কববে বলে জানা স্থানীয়রা।
এলজিইডি সূত্রে জান যায়, প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজ প্রকল্পের অধীনে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সেতুটি নির্মিত হবে। ৬০ দশমিক ৬ মিটার (১৯৭ ফুট) দীর্ঘ ও সাত মিটার (২১ ফুট) প্রস্থের এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে ৫ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার ৩৮৫ টাকা। কিশোরগঞ্জের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমএস মমিনুল হক এর নির্মাতা। প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হবার কথা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ছাতক-এর উপজেলা প্রকৌশলী আফছর আহমদ সিলেটভিউকে জানান, সেতুর কাজ গত বছরের নভেম্বর মাসে শুরু হয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি ছিল এবছরের ডিসেম্বরের দিকে কাজ শেষ করবো। সেতুর দুই প্রান্তের ৩৫ মিটার পাইলিং ইতিমধ্যেই শেষ। তবে মধ্যখানের পাইলিং নিয়ে জটিলতায় এসেছে। পাইলিং ৪১ মিটার যাবার কথা থাকলেও নিচে পাথরের কারণে ৩৬ মিটারে গিয়ে সেটি আটকে আছে। গত তিন মাস ধরে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেও এর গভীরে যাওয়া যাচ্ছে না। নতুন করে সয়েল টেস্ট করা হয়েছে, প্রযুক্তি ব্যবহার করেও এ পরিস্থিতি হতে উত্তরণের করা যাচ্ছে না। কিন্তু নির্দেশ আছে পাইলিং ৪১ মিটারই করতে হবে। বিষয়টি নেয়ে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলা হচ্ছে। এ কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সন্দেহ আছে। আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১২২ বার