সৈয়দ আশরাফের প্রতি শেখ হাসিনা আস্থা বাড়ছে!
পীর হাবিবুর রহমান-
আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জনপ্রিয়তা বাড়ছেই। সর্বত্র দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নানা জায়গায় তার নাম আলোচিত হচ্ছে। সরকার ও দলে সর্বােচ্চ সময় দিচ্ছেন সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কিন্তু জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠছেন সৈয়দ আশরাফ। বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে নানা যুক্তি থাকলেও অনেকের কাছেই রহস্যময় হয়ে উঠছে।
স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম একজন নির্লোভ, দেশপ্রেমিক ও আত্মত্যাগী নেতা হিসেবে আমৃত্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বস্ত স্বজন ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবার-পরিজনসহ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতাসীন খুনি মোশতাক চক্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ না করায় তাকে কারাজীবন নিতে হয়। আরো ৩ জন সতীর্থের সঙ্গে জেলহত্যাকাণ্ডে নৃশংসার শিকার হতে হয়। সৎ পিতার সৎ সন্তান হিসেবে যুক্তরাজ্যের মূলধারার রাজনীতিতে জায়গা করে নেওয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ডাকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরে এসেছিলেন। ১৯৯৬ সাল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন। একজন ভদ্র বিনয়ী অজাতশত্রু রাজনীতিবিদ হিসেবে দলের সবার শ্রদ্ধা ও স্নেহ কুড়াতে বেশি সময় নেননি।
৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকারের বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ওয়ান ইলেভেনে কঠিন বৈরী পরিস্থিতি মোকাবেলা করে পিতার মতো নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বাসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে টানা দুই দফা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীও করা হয়। কিন্তু দল এবং মন্ত্রণালয়ে সময় দিতে না পারার অভিযোগ ডালপালা মেলতে থাকে তার বিরুদ্ধে। দলে প্রচলিত হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও টেলিফোনে তাকে পান না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে যেদিন তাকে সরিয়ে দেওয়া হয় সেদিনই ঘরে-বাইরে তার প্রতি মানুষের আস্থা ও সহানুভূতি দৃশ্যমান হয়ে উঠে। গণমাধ্যম বলতে গেলে একজন নিভৃতচারী রাজনীতিবিদ মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফের পাশে দাঁড়িয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা শুধু সৈয়দ আশরাফকেই নয় জেলহত্যাকাণ্ডে নিহত বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত চার সহচরের সন্তানদেরকেও বোনের মমতা দিয়ে দলে এবং ক্ষমতায় মর্যাদার সাথে প্রতিষ্ঠিত করেন। সৈয়দ আশরাফ ও সোহেল তাজের প্রতি বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার হৃদয়নিঃসৃত স্নেহ-মমতা ও আবেগ অনুভূতির নজির দেশের মানুষ বারবার দেখেছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বাদ পড়ে সৈয়দ আশরাফ রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে পরিবারকে সময় দিতে লন্ডন চলে যেতে চেয়েছিলেন। বিমানের টিকেটও কাটা হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যারা তাকে আটকে দেন। তার ওপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বায়িত্ব অর্পিত হয়।
আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিলে সরকার ও মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে পরিশ্রমী ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার মধ্য দিয়ে সৈয়দ আশরাফকে যখন এই দায়িত্ব থেকে বিদায় করা হয় তখন আরেক দফা তার প্রতি নেতাকর্মীদের আবেগ অনুভূতি ও সমর্থন দৃশ্যমান হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা স্নেহের হাত দিয়ে অনুজকে পাশে পাশে রেখে তাকে দিয়েই ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করান। কিন্তু সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি যে আবেগঘন বক্তব্য রাখেন তা কাউন্সিলরদের আবেগ আপ্লুত করেছিল। আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া অনেকেই এখনও সৈয়দ আশরাফের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা-সম্মান হারাননি। এদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় সরকার ও দলকে যতটা সময় দেওয়ার প্রয়ােজন সৈয়দ আশরাফ ততটা দিতে ব্যর্থ হলেও তুমুল জনপ্রিয়তা নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বিদায় নিয়েছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে তিনি কখনও কোন গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেননি। রোজ প্রেসবিফ্রিং করেননি। কিন্তু যখন যেটি প্রয়োজন সেটি সময়মতো ইতিবাচকভাবে বলতে ভুল করেননি। অতিকথন, ক্ষমতার দম্ভ যেমন তাকে স্পর্শ করেনি তেমনি গণমাধ্যমের সমালোচনায় ব্যক্তিগত আক্রোশ পোষেননি। একজন উদার পশ্চিমা গণতান্ত্রিক রাজনীতিবিদের মতোই তিনি নীরবে নিভৃতে পথ হেঁটেছেন। সেই পথ থেকেই এখনও বিচ্যুত হননি। তদবিরবাজ, মতলববাজ, সুবিধাবাদীরা যেমন তার কাছে ভিড়তে পারেননি তেমনি দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারে নুন্যতম কলঙ্কের ছিটেফোটাও তার গায়ে লাগেনি।
দলের ভেতরে বাইরে কাউকেই তিনি ব্যক্তিগত আক্রমণ বা আঘাত করে কথা বলেননি। আমাদের আদর্শিক রাজনীতি পূর্বসূরিদের উত্তরাধিকারিত্ব বহন করে পথ হাঁটা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সরকার ও দলে সময় না দিলেও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এই মুহুর্তে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ঈর্ষণীয় ইমেজের পর নেতাদের মধ্যে তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও তার প্রতি আস্থা হারাননি। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনের সকল দুর্বলতা, বিভক্তি কাটিয়ে উঠে দলকে ভোটের লড়াইয়ে শক্তিশালী রুপ দিতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন। দিবারাত্রি সংগঠনের জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়নের ব্যাপারে তার একটি ভূমিকা থাকবে। কিন্তু পার্লামেন্টারি বোর্ড বা দলের সাধারণ সম্পাদকের বাইরে যার মতামতকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন তিনি সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ক্লিন ইমেজের শক্তিশালী জনপ্রিয় প্রার্থীদের একিট তালিকা তৈরিতেও তিনি অন্যতম ভূমিকা রাখছেন। দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, প্রশাসনিক দায়িত্বে দৌঁড়ঝাপ দৃশ্যমান নয় অথচ দলের ভেতরে বাইরে জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয় এমন রাজনীতিবিদ কোন দলেই সাম্প্রতিককালে দেখা যায়নি। সৈয়দ আশরাফের এই কারিশমার রহস্য কারো জানা নেই। বিষয়টি সবার কাছেই বিস্ময়কর।