সৌদিতে আটক রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিপাকে বাংলাদেশ
সৌদি আরবের বিভিন্ন কারাগারে আটক ২৭৩ মিয়ানমার নাগরিককে নিয়ে বিপাকে পড়েছে সরকার। সৌদি কর্তৃপক্ষ চায়, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী এসব রোহিঙ্গা নাগরিককে এখনই ফেরত দিতে। এ জন্য জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেলের কাছে একটি তালিকা হস্তান্তর করেছে তারা। কনস্যুলেট অফিস ওই তালিকাটি স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এমন ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে, গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী ছয় মিয়ানমার নাগরিককে সৌদি আরব ফেরত পাঠানোর পর তাদের বাংলাদেশ গ্রহণ না করা নিয়ে। তাই ছয় জনকে পুনরায় সৌদি আরবে ফেরত পাঠানো এবং ২৭৩ রোহিঙ্গা নাগরিকদের তালিকা নিয়ে গত ১৩ই নভেম্বর সুরক্ষা সেবা বিভাগে এক উচ্চ পর্যায়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়।সভায় নেয়া সিদ্ধান্তে বলা হয়, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী মিয়ানমারের নাগরিকদের বিমানবন্দর থেকে চিহ্নিত করে সৌদি আরবে পুনরায় ফেরত পাঠানো যাবে না। তাদের কারাগারে ফেরত, মিয়ানমারে পাঠানো বা কক্সবাজারের কোনো রোহিঙ্গা আশ্রয় ক্যাম্পে জায়গা দেয়া হবে। ২৭৩ জন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী বার্মিজ নাগরিকদের পাসপোর্ট জব্দ করে কালো তালিকাভুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় শ্রম বাজারগুলোর মধ্যে সৌদি আরব অন্যতম। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী নাগরিক বসবাস করছে। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগ ও অপরাধের কারণে প্রায় দেড় হাজার বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী নাগরিক জেলখানা বা অস্থায়ী হাজতখানায় আটক রয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী মিয়ানমারের নাগরিকও রয়েছে। গত ৮ই সেপ্টেম্বর ছয় জন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশ বিমানবন্দর থেকে পুনরায় সৌদি আরবে ফেরত পাঠানো হয়। এনিয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেলের কাছে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে তাদের ফিরিয়ে নেয়ার অনুরোধ জানায়। এ সময় সৌদি কর্তৃপক্ষ ২৭৩ জনের একটি তালিকা কনসাল জেনারেলের কাছে দেয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. রাখাল চন্দ্র বর্মণের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ছয় জনকে ফেরত পাঠানো এবং ২৭৩ জনের তালিকা নিয়ে আলোচনা হয়। এ সভায় সুরক্ষা সেবা বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর এবং বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সভায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান, সৌদি আরবে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত বিদেশি নাগরিকদের জেলখানায় আটক করে রাখে। সাজার মেয়াদ শেষে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। সৌদি আরবের নিয়ম অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কখনো সৌদি আরবে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে অস্থায়ী হাজতিরা তিন বছর পরে পুনরায় সৌদি আরবে প্রবেশ করতে পারে। বর্তমানে সৌদি আরবের বিভিন্ন কারাগারে আটক ২৭৩ জন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীকে মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের সৌদি কর্তৃপক্ষ যেকোনো সময় বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে। সভার আলোচনায় বলা হয়, সৌদি আরবের বিভিন্ন কারাগারে আটক বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে শনাক্ত করা ব্যক্তিদের অনুকূলে ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করার আগে ভেরিফিকেশন করার সুযোগ থাকলে ভেরিফিকেশন করা প্রয়োজন। বাংলাদেশি নাম-ঠিকানা সঠিক থাকলে তাদের অনুকূলে ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করা প্রয়োজন। অনেক সময় দালালদের মাধ্যমে ট্রাভেল পারমিট সংগ্রহ করে বাংলাদেশে আসলে তাদের ফেরত না পাঠিয়ে কারাগারে পাঠানো প্রয়োজন। পরে ভেরিফিকেশন করে তাদের নাগরিকত্ব অনুযায়ী মিয়ানমারের নাগরিক হলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো যেতে পারে। সৌদি আরবের বাংলাদেশ মিশনকে ভেরিফিকেশনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পত্র দেয়া যায়। সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। সেখানে শ্রমবাজার ভালো। সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক আরো উন্নতি করার জন্য কাজ করা প্রয়োজন। তাদের অসন্তোষের কারণ হয় এমন কাজ বর্জন করা প্রয়োজন। সৌদি সরকারের সঙ্গে পারস্পরিক আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা প্রয়োজন। সভায় আলোচনার পর চারটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।