সৌদি আরবে বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছে। এক্ষেত্রে দায়ী করা হচ্ছে গৃহকর্মীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো, রিক্রুটমেন্ট অফিসগুলোকে। বলা হচ্ছে, দক্ষ প্রশিক্ষক ছাড়াই এসব গৃহকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ফলে তারা সৌদি আরবের ভাষা, রীতিনীতি ও প্রথা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পান না। এ জন্য যারা সৌদি আরবে যান গৃহকর্মী হিসেবে তাদের বেশির ভাগই দেশে ফিরে আসেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার নারী গৃহকর্মী সৌদি আরব থেকে ফিরে এসেছেন দেশে।
সৌদি আরবের শ্রম মন্ত্রণালয় যেসব ওয়ার্ক ভিসা দিয়েছে তার শতকরা প্রায় ৬০ ভাগই অসাড় হয়ে পড়ে আছে রিক্রুটমেন্ট অফিসগুলোতে। এসব ফাইলের ওপর পড়েছে ধূলির আস্তরণ। এ ছাড়া রয়েছে নানা জটিলতা। ফলে ঢাকায় প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন এমন অনেক নারী সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে যেতে অনিচ্ছুক। ঢাকায় বিশেষ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন এমন নারীদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নানা কারণে সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে যেতে চান না। এসব কারণের মধ্যে অন্যতম হলো ভাষা, প্রচলিত রীতি-নীতি ও প্রথা। এ ছাড়া এক্ষেত্রে বেশ কিছু জটিলতা সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশের রিক্রুটমেন্ট অফিসগুলো। তারা অযথাই ফি বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যায্য শর্ত জুড়ে দিয়েছে।
সৌদি আরবের সরকারি পত্রিকা অনলাইন সৌদি গেজেটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে মূল প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে আল মদিনা নামে একটি পত্রিকা। ওই সূত্র বলেছেন, ঢাকায় প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন এমন নারীদের মধ্যে সৌদি আরবে কাজ পাওয়ার জন্য দ্বিতীয় পরিকল্পনা বা বিকল্প কাজ পাওয়ার আগ্রহ দেখা দিয়েছে। ঢাকায় যেসব বেসরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে সেখানে প্রশিক্ষণ দেয়ার মতো যথেষ্ট অভিজ্ঞ লোক নেই। যারা ঢাকা ত্যাগ করবেন এমন গৃহকর্মীদের দেশ ছাড়ার পূর্ব মুহূর্তে যে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন তা দিতে পারছে না ওইসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। অথবা সৌদি আরবের জীবন যাপন কেমন সে বিষয়ে প্রশিক্ষক বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জানাই নেই। এসব লোক তাদেরকে শুধু শিখাচ্ছেন কিভাবে ময়দা বা আটা মাখতে হয় এবং তা দিয়ে কিভাবে উপাদেয় খাদ্য বানাতে হয়। ওই সূত্রটি বলেছেন, যেসব মানুষ সৌদি আরব যাবেন বা যাচ্ছেন তাদেরকে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশ সরকারের। ওই পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল প্রশিক্ষণ সময়সীমা বর্তমানের ৩০ দিন থেকে বাড়িয়ে ৯০ দিন করার। তিনি আরো বলেন, নিবন্ধিত সব গৃহকর্মীকে অবশ্যই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যোগ দিতে হবে এবং যারা নির্ধারিত সময়সীমা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ নিতে ব্যর্থ হবেন তারা সৌদি আরবে কাজে যেতে অনুমতি পাবেন না। তিনি আরো বলেছেন, সৌদি আরবে প্রকৃতপক্ষে যেসব নারী গৃহকর্মী যান তাদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৫০ ভাগই কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান এবং তারা দেশে ফিরে যাওয়াকেই বেছে নেন। জেদ্দায় একটি রিক্রুটমেন্ট অফিসের মালিক আবদুল্লাহ আল গামদি বলেছেন, সৌদি আরবে গিয়ে বাংলাদেশি গৃহকর্মীদের কাজ করতে অস্বীকৃতি জানানোতে পরিস্থিতিতে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ থেকে যখন গৃহকর্মী নেয়া শুরু হয়েছে তখন থেকে প্রায় ৫০ হাজার গৃহকর্মী দেশে ফিরে গেছেন। কারণ, সৌদি আরবে পৌঁছার পর তারা কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান। এর কারণ কি? এর কারণ হলো, তারা সৌদি আরবের জীবনযাপনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন না। সৌদি আরবে যে রীতিনীতি, প্রথা তার সঙ্গে নিজেদের মিলিয়ে নিতে পারেন না। অন্য আরো কয়েকটি সূত্র মতে, বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী নিয়োগের বিষয়ে সৌদি আরবের শ্রম মন্ত্রণালয় যাদেরকে ওয়ার্ক ভিসা দিয়েছে তার শতকরা প্রায় ৬০ ভাগই রিক্রুটমেন্ট অফিসে ধুলোবালির স্তরে ঢাকা পড়েছে। বলা হচ্ছে, ফি বাড়িয়ে ও অসামঞ্জস্য কিছু শর্ত আরোপ করেছে বাংলাদেশের রিক্রুটমেন্ট অফিসগুলো। এর মাধ্যমে তারাই ইস্যুটিকে জটিল করে তুলেছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn