সৌদি-আমিরাতি চোখে কাতারের অপরাধ!
তামীম রায়হান :: মাতৃভূমি পুনরুদ্ধারে ফিলিস্তিনের গাজায় সশস্ত্র লড়াই করে যাচ্ছে হামাস। আর ওদিকে রামাল্লায় আলোচনার টেবিলে বসে আঙুল চোষে ফাতাহ।সৌদি আরবের বক্তব্য, হামাস জঙ্গি, ফাতাহ আমাদের সঙ্গী। কাতার বলছে, হারানো ভূমি ফিরে পেতে ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাসের সশস্ত্র সংগ্রাম তাদের অধিকার। এ নিয়ে সৌদি ও কাতারের মধ্যে দ্বন্দ্ব অনেক দিনের পুরনো। গতকাল সৌদিআরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আলজুবাইল হামাসকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী আখ্যা দিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি-আমিরাতের জোটবদ্ধ অপপ্রচারে যখনই কাতারের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয়ের অভিযোগ তোলা হয়, তখনই টিভির পর্দায় এর প্রমাণ হিসেবে কাতারের আমির শেখ তামিমের সঙ্গে হামাস নেতা খালেদ মিশালের সাক্ষাতের ছবি দেখানো হয়।
সৌদি আরবের এই অন্ধ বিদ্বেষ বারবার আমাকে অবাক করে। হামাস কি ফিলিস্তিন ছাড়া অন্য কোনো দেশে সশস্ত্র তৎপরতা চালাচ্ছে যে তাদের জঙ্গি আখ্যা দিতে হবে! নিজেদের ভিটেমাটি উদ্ধারে যে লড়াই, সেটা যদি জঙ্গিবাদ হয় তবে পৃথিবীর সব মুক্তিযুদ্ধ জঙ্গিবাদ হতে বাধ্য। কাতার হামাসকে সমর্থন করে, কিন্তু তাই বলে হামাসবিরোধী ফাতাহকে এভাবে কোনোদিন অভিযুক্ত করেনি তারা।
বিধ্বস্ত গাজায় সুবিশাল নগরী নির্মাণ করে দিয়েছে কাতার। (সঙ্গের ছবিটি সেই পরিকল্পিত নগরীর আংশিক উদ্বোধনের ছবি) কিন্তু ফাতাহকে ভালোবেসে সৌদি-আমিরাত কী দিয়েছে রামাল্লায়? গাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে সরকারি কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের বেতন-বোনাস দিয়েছে কাতার। এসব যদি হয় জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা, তবে কি ইসরাইলের সঙ্গে কোলাকুলি করে শান্তির খাতায় নাম লেখাতে হবে সবাইকে!
এ পর্যন্ত সংঘটিত সবগুলো আরব বিপ্লবে কাতার গণমানুষের পক্ষে থেকেছে- এটাই কাতারের অপরাধ। সিরিয়ার জল্লাদ বাশার আল আসাদের পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছে আমিরাত, ইয়েমেনের পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট এবং হুথি নেতা আব্দুল্লাহ সালেহর পরিবার আমিরাতে, মোসাদের সব আরব গুপ্তচর থাকে আমিরাতে- এই হচ্ছে সৌদি-আমিরাতের শান্তি-সম্প্রীতির উদাহরণ। যারা আজ কাতারকে অবরুদ্ধ করেছে, তারা শিগগিরই অনুতপ্ত হবে এমন ভ্রাতৃঘাতী অস্থির ও অন্যায্য সিদ্ধান্তের কারণে, কাতার চিরকাল মাথা উঁচু করে থাকবে আপন মহিমায়। আয়তনে বড় বলে আপনাকে মুরব্বি মানতে হবে- এই প্রথা অনেক আগেই ভেঙেছে কাতার।
লেখক: গণমাধ্যম গবেষক, মানবাধিকার বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কাতার