ওয়াশিংটনের আপত্তি সত্ত্বেও সৌদি আরব ও রাশিয়া নেতৃত্বাধীন দেশগুলো তেল উত্তোলন কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে সৌদি আরবকে এর জন্য পরিণতি ভোগ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এমন প্রত্যয় ঘোষণা করে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছেন। ওদিকে হোয়াইট হাউজে তার সহযোগীরা ঘোষণা করেছেন সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করছে হোয়াইট হাউজ। বাইডেন প্রশাসন মঙ্গলবার এ ঘোষণা দিয়েছে। এর একদিন আগে ডেমোক্রেট দলের প্রভাবশালী সিনেটর, সিনেট ফরেন রিলেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান বব মেনেনডেজ বলেছেন, সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি সহ সব রকম সহযোগিতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এরপর সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জো বাইডেন বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে তারা যা করছে তার জন্য পরিণতি ভোগ করতে হবে। আমি কি ভাবছি আর আমার মনে কি আছে তা এখন বলছি না। তবে হবে, পরিণতি ভোগ করতে হবে। এ খবর দিয়ে অনলাইন আল জাজিরা বলেছে, গত সপ্তাহে ওপেক+ গ্রুপ বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের চাপকে উপেক্ষা করে দিনে ২০ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন কমিয়ে দেবে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি তেল রপ্তানিকারক সৌদি আরব। তারা বলেছে, এই সিদ্ধান্ত তেলের মূল্যের জন্য নয়, তেলের বাজারকে স্থিতিশীল করতে নেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সুদের হার বাড়িয়ে দেয়া এবং বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, তেলের উত্তোলন কমিয়ে দেয়ার কারণে বিশ্বজুড়ে মূল্য বৃদ্ধি পাবে। যা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসনে অব্যাহত অর্থ যোগান দিয়ে যাবে। ওদিকে নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। এমন সময় তেলের উত্তোলন কমিয়ে দেয়াকে বাইডেন প্রশাসনের জন্য হোঁচট হিসেবে দেখেন কেউ কেউ। ওয়াশিংটন থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক কিমবারলি হলকেট বলেছেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষই সুবিধা পাবে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই প্রেসিডেন্টের রাজনীতির জন্য শুভ নয়। অন্য একটি বিষয়ে হোয়াইট হাউজ হয়তো খুশি হবে না। তা হলো, রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ছে সৌদি আরব। তেল উত্তোলন কমিয়ে দেয়ার পক্ষে কথা বলেছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান। মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত নির্ভেজাল অর্থনৈতিক এবং সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সদস্য দেশগুলো। তিনি আল আরাবিয়া টেলিভিশনকে বলেন, ওপেক+ সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে দায়ী। তারাই সঠিক সিদ্ধান্ত নেন। ওদিকে তেল উত্তোলন কমিয়ে দেয়ার পক্ষে কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও। তিনি বলেছেন, আমাদের সিদ্ধান্ত কারো বিরুদ্ধে নয়। বৈশ্বিক বাজারে তেলের স্থিতিশীলতা আনতে আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে জ্বালানির ভোক্তা এবং উত্তোলন, সরবরাহকারী উভয়েই স্বস্তি পাবেন। স্থিতিশীলতা আসবে। আস্থা বাড়বে। সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য স্থাপনে সহায়ক হবে। পুতিন আরও উল্লেখ করেন সেন্ট পিটার্সবার্গে তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে।
এর আগে জুলাইয়ে সৌদি আরব সফর করেন জো বাইডেন। তিনি সাক্ষাৎ করেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে। তবে তার আগে ২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার জন্য সৌদি আরবকে দায়ী করেছিল মার্কিন প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ক্রাউন প্রিন্স সৌদি আরবের শাসকগোষ্ঠীর সমালোচক ওই সাংবাদিককে হত্যার অনুমোদন দিয়েছিলেন। তবে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রিন্স মোহাম্মদ। বলেছেন, এ ঘটনা ঘটেছে আমার সময়ে। জুলাইয়ে তাই প্রিন্স মোহাম্মদকে বাইডেন বলেছিলেন, তিনি মনে করেন এই হত্যার জন্য দায়ী প্রিন্স মোহাম্মদ। সিএনএনকে জো বাইডেন বলেছেন, তিনি সৌদি আরব সফরে গিয়েছিলেন তেলের জন্য নয়। তার ভাষায়, আমি সেখানে গিয়েছিলাম এটা নিশ্চিত করতে যে, আমরা মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরে যাচ্ছি না। ওদিকে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পর্যালোচনা করছে বাইডেন প্রশাসন। ওয়াশিংটনে আইনপ্রণেতা এবং বিদেশি মিত্রদের সঙ্গে এ নিয়ে শলাপরামর্শ হচ্ছে। হোয়াইট হাউজে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, এই সম্পর্ক কিভাবে এগিয়ে নেয়া উচিত সে বিষয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করবেন বাইডেন। আমি মনে করি তিনি সেই সম্পর্কের বিষয়ে এখনই আলোচনা শুরু করতে ইচ্ছুক। আমার মনে হয় না এ বিষয়ে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে বা অপেক্ষা করা উচিত। ওদিকে মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে অবস্থিত সৌদি আরবের দূতাবাস একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে কৌশলগত বলে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এতে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় অগ্রগতি হয়েছে। সৌদি আরবের কিছু সমর্থক যুক্তি দেখিয়েছেন যে, ওয়াশিংটন ও রিয়াদের মধ্যে নিরাপত্তামুলক সম্পর্ক পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে যাবে এমন নয়। নেড প্রাইস বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন ইরানের বিষয়কে এড়িয়ে যাবে না। সৌদি আরবের কাছে যুক্তরাষ্ট্র যেসব অস্ত্র বিক্রি করে তার বেশির ভাগই তৈরি করা হয়েছে ইরানের হুমকির বিষয়টি মাথায় রেখে। নেড প্রাইস বলেন, নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ আছে। এসব চ্যালেঞ্জ আসছে ইরান থেকে। ইরান শুধু ওই অঞ্চলেই নয়, তার বাইরেও হুমকি সৃষ্টি করছে। তাদের এই হুমকি থেকে আমাদের চোখ বন্ধ করে রাখিনি।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১৩৬ বার