স্বামী-সন্তানের লাশ নিয়ে দেশে ফেরার অপেক্ষায় আসমা
কফিন বন্দী ছেলের লাশকে দেশে ফেরত নিতে গিয়ে স্বামীকেও হারালেন বাংলাদেশি নারী আসমা বেগম। ক্যান্সারে মৃত ছেলে আসাদ মন্ডলের (১৫) লাশ দেশে ফেরত নিয়ে যেতে সোমবার দুপুরের দিকে ভারত-বাংলাদেশের পেট্রোপোল-বেনাপোল সীমান্তে অপেক্ষা করছিলেন মা আসমা এবং বাবা রফিক মণ্ডল। সেখানে দুপুরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন রফিক। এরপর স্থানীয় বনগা মহুকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এখন ছেলে ও স্বামীর লাশ নিয়ে অসহায় অবস্থা ঢাকার গাজীপুরের হাতিমার গোবিন্দ বাড়ি গ্রামের আসমা বেগমের।
ক্যান্সারে আক্রান্ত ছেলে আসাদ মণ্ডলের চিকিৎসা করাতে গত ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আসেন রফিক ও আসমা দম্পতি। কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে চিকিৎসাও শুরু হয় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আসাদের। কিন্তু ছয়দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর রবিবার রাত ৮টার দিকে চিকিৎসকদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আসাদ।
আসাদের লাশ বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সোমবার সকালের দিকে পেট্রোপোল সীমান্তে এসে পৌঁছায় রফিক ও আসমা। কিন্তু আসাদের লাশ দেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা থাকায় বেলা গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়। এরইমধ্যে পাশের একটি শুলভ শৌচালয়ে (টয়লেটে) যান রফিক মণ্ডল। কিন্তু সেখানে গিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন রফিক। সঙ্গে সঙ্গেই শুলভ শৌচালয়ের কর্মী রামেশ্বর রায় তাঁকে স্থানীয় বনগাঁ মহুকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা দেয় চিকিৎসকরা। খবর দেয়া হয় স্বামীর পথ চেয়ে বসে থাকা স্ত্রী আসমাকেও। তিনিও দ্রুত হাসপাতালে ছুটে আসেন। কিন্তু হাসপাতালে এসে স্বামীকে আর জীবন্ত দেখতে পাননি আসমা। একদিকে ছেলের লাশ, অন্যদিকে স্বামীর মৃত্যু। মাথায় তখন আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা তৈরি হয় আসমার। কান্নায় ভেঙে পড়েন আসমা।
রামেশ্বর জানান, ‘ওই ব্যক্তি শৌচালয়ে যেতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় এবং রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এরপর আমি দৌড়ে এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানেই সে মারা যায়’। আসমা জানান, ‘ছেলে অন্ত প্রাণ ছিল রফিকের। ছেলের শোকেই আমার স্বামী চলে গেল’। পরজন্মে ঠিক এভাবেই রফিক ও আসাদকে ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছেন আসমা। বনগাঁর তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস জানান, ‘আমরা চেষ্টা করছি যাতে আজ রাতের মধ্যে ওর পোস্ট মর্টেমের কাজ শেষ করা যায়। একইসঙ্গে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের কাগজপত্র সংগ্রহ করে আগামীকালই যাতে তারা দেশে ফিরতে পারে সে চেষ্টা করা হচ্ছে’।