স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে
প্রশ্ন: করোনার এই পরিস্থিতিতে মেগা প্রকল্পগুলোর সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে যদি বলতেন…
এম এ মান্নান : আমার জানামতে, মেগা প্রকল্পের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা হয়নি। তবে করোনার কারণে এমনিতেই বন্ধ হয়ে গেছে। শ্রমিক চলে গেছে, অনেক বিশেষজ্ঞ চলে গেছে, অনেক বিদেশি চলে গেছে, মাল আসছে না, জাহাজ-যোগাযোগ তো বন্ধ— এসবের প্রভাব পড়েছে। একটা বল্টু না পেলেই তো কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে কাজ বন্ধ হয়েছে। করোনা চলে যাওয়ার আগেই যখন এর ভাটা পড়বে, নেতিয়ে পড়বে, তখনই আমরাও কাজ শুরু করে দেব জোরেশোরে। ওর (করোনা) পুরোপুরি যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করব না। যখন দেখব যে, মাথা ঘুরিয়ে ফেলছে তখনই নেমে যাব মাঠে। তখন অবশ্যই মেগা প্রকল্পগুলোর ওপর প্রাধান্য থাকবে। জাতীয় অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে মেগা প্রকল্পগুলো। এগুলো প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক, সরকার কর্তৃক ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত আগের জায়গাতেই আছে, এগুলো এখনও জাতীয় প্রকল্প হিসেবেই আছে।
প্রশ্ন : কম অগ্রাধিকার ৩৩৬ প্রকল্পের বরাদ্দের অর্থ (চলতি অর্থবছর) করোনা মোকাবিলায় ব্যয় হবে— এমন খবরও বেরিয়েছে। আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি-না?
এম এ মান্নান : কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধ বা কমিয়ে দেয়া হবে বা এটা পুনর্বিন্যাস করা হবে। সিরিয়ালটাকে ঘুরিয়ে যেটা বেশি অগ্রগামী সেটাকে এগিয়ে রাখা। আমার জানামতে, এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা সরকারের ঊচ্চপর্যায়ের কাজ। এটা আমি করতে পারব না। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে করা হবে এটা। হয়তো এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে, কিন্তু এ মুহূর্তে আমি কিছুই বলতে পারছি না।
প্রশ্ন : আগামী অর্থবছরে কোন খাতগুলোর ওপর অধিক গুরুত্ব দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের?
এম এ মান্নান : প্রধানমন্ত্রী তো বলছেন, স্বাস্থ্য খাত এগিয়ে থাকবে, কৃষি খাত এগিয়ে থাকবে। এগুলো তো মোটামুটি ঘোষিতই এখন। তিনি এটা পরিবর্তন না করা পর্যন্ত আমার জানামতে, স্বাস্থ্য খাতই এগিয়ে আছে। আমার সুপারিশ হলো- স্বাস্থ্য, কৃষি, পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রাথমিক শিক্ষা— এসব খাতে জোর দিতে হবে। যা-ই হোক, আমার কথা তো শেষ কথা নয়। প্রথম কথাও নয়, মাঝের কথাও নয়। প্রধানমন্ত্রীই এগুলো ঘোষণা দেবেন। যখন ঘোষণা হয়ে আসবে, তখন আমি প্রকাশ করে আপনাদের জানাব।
প্রশ্ন : করোনার এই সময়ে দেশবাসীর প্রতি আপনার পরামর্শ কী হবে?
এম এ মান্নান : আমরা যদি নিজেকে সুরক্ষা দিতে পারি তাহলে গোটা জাতিই সুরক্ষিত থাকবে। আমি যদি ঘর থেকে কম বের হই, মুখ ঢেকে রাখি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকি— তাহলে তো আমার ঝুঁকি কমে গেল। এভাবে প্রতিটা ব্যক্তিই নিজের নিরাপত্তার জন্য দায়ী। শেষ কথা হলো, যতই বড় সরকার হোক না কেন, আপনার নিজের রক্ষা নিজেকে-ই করতে হবে। সেই চেতনা ও দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। এজন্য কোনো টাকা লাগে না। আপনি আপনার হাতটা ভালো করে ধোবেন, মুখটা ঢেকে রাখবেন, অহেতুক ঘোরাফেরা করবেন না— এটার জন্য কোনো টাকা ব্যয় হবে না। কাজ করেন, ঘরে বসে কাজ করেন, কারখানায়ও আপনি কাজ করেন, অসুবিধা কী? কিন্তু আপনি নিজেকে গুঁটিয়ে রাখবেন। এমনটি যদি প্রতিটা মানুষ করতে পারে, তাহলে তো আর… লাগে না।
প্রশ্ন: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার দাবি, করোনার কারণে দেশের অনেক মানুষ নতুন করে দরিদ্র হবে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আপনাদের আগাম কোনো চিন্তাভাবনা…
এম এ মান্নান : করোনাকে বিদায় দেয়াই আমাদের এখন প্রধান কাজ। সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতি যেটা নেতিয়ে পড়ছে, মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে, সেটাকে পুনরুজ্জীবিত করা। একটু একটু করে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে লেজের দিকে, পায়ের দিকে, নাড়াচাড়া করে এটাকে তুলে ফেলা।
প্রশ্ন: অনেক মানুষ এখন বিপদগ্রস্ত। যারা কাজ করে খেতেন, তাদের অনেকেই এখন হাত পাতছেন…
এম এ মান্নান : প্রত্যেকটা মানুষই যদি বিপদে পড়ে কে রক্ষা করবে? প্রথমে নিজেকেই আগে রক্ষা করতে হবে। তারপর হয়তো প্রতিবেশী, ভাই-ব্রাদার, সরকার আসবে এগিয়ে। কিন্তু প্রত্যেকটা ব্যক্তি যদি সত্যিকার সচেতন হন, তাহলে আগে চেষ্টা করতে হবে নিজেকে সুরক্ষার। আপনি যদি হাত-পা না নাড়েন, ঘরে বসে থাকেন, ঝিমিয়ে খাটের তলে আশ্রয় নেন, কেউ আপনাকে দেখবে না। সাহায্যও করবে না। আপনাকে বেরিয়ে আসতে হবে। চিৎকার দিতে হবে, কাজও করতে হবে, দৌড়াতে হবে, বলতে হবে— ব্যাস, তাহলেই তো হয়ে যায়। আপনি মুখ বন্ধ করে চুপচাপ বসে থাকবেন, অভিমান করে বলবেন যে, আমার তো অভ্যাস নাই, আমি তো এরকম করি নাই, তাহলে তো হবে না। অভ্যাস আছে কি নাই, সেটা বড় কথা নয়। খাইতে চাইলে বাহির হইতে হইব– ঠিক আছে? আপনি মহান পণ্ডিত ব্যক্তি হলেও অন্ততপক্ষে রান্না ঘরে গিয়েও খাবারটা চাইতে হইব আপনার স্ত্রীর কাছে বা কাজের লোকদের কাছে। খাবারের জন্য হাত পাততে হয়। হাত পাতা মানে ভিক্ষা নয়, হাত বাড়াতে হয়।