হঠাৎ কাসেম ও একটি মোটিভেটেড রিপোর্ট
সেজুল হোসেন(ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে)
বাংলাদেশের যে সময়ে কাসেম সাহেব পড়ার টেবিলে, পাঠ্যবইয়ের চিপায় অবস্থান করেছিলেন তখন লেখার ভালো-মন্দ বিচারের মাপকাটি ছিল না আপনার-আমার কাছে। রূচিও তৈরি হয়নি ভালো কিছু পড়ার। ফেসবুক-টুইটার ছিল না। ছিল না প্রযুক্তির উৎকর্ষতা, ছিল না অবাধ তথ্য প্রবাহ। আঞ্চলিক রেডিও, সাদাকালো বিটিভি ছাড়া গ্রামের শতভাগ ধর্মপ্রাণ শিক্ষিত মানুষদের কাছে (জীবনের আসল মানে না বুঝে, না জেনে, অবচেতনে) ফাজায়েলে আমল, দোজখের আজাব-বেহেস্তের শান্তি, স্বামী-স্ত্রীর মধুর মিলন আর কাসেম বিন আবু বাকারই ছিল ভরসা। পাঠ্যবই থেকে রেহাই পাবার জন্য, স্রেফ বিনোদনের জন্য কিংবা স্রেফ সময় কাটানোর জন্য দুপুরের পর গোসল করে, মাথায় তেল দিয়ে, চিরুনি দিয়ে চুলে ফিতা কেটে কাসেম সাহেব পড়েছি আপনি আমি অনেকেই। এখন স্বীকার করি না। করলে এই ডিজিটাল যুগে ইজ্জত থাকে না, লোকে বলবে ‘খ্যাত’! গত কয়েক যুগে আপনার-আমার পাঠরুচি এবং বই কেনার ব্যাপারে সচেতনতা এমন একটা স্বস্তিকর জায়গায় পৌঁছেছে একদা কাসেম সাহেবের দুয়েকটা বই পড়েছি এটা স্বীকার করলে নিজের কাছেই অস্বস্তি হয়। তাই হঠাৎ ঘুম থেকে উঠার মতো করে অনেকেই বলেন- ‘কাসেম বিন আবার কে’?
পৃথিবীর রং রূপ বদলে গেছে। আলোচনা থেকে হারিয়ে গেছেন কাসেম। তাঁর লেখা যে সাহিত্য না সেটা পরিষ্কার। টিকে থাকার জন্য কিংবা বাংলা সাহিত্যে নতুন কোনও ভাষাভঙ্গি উপহার দেওয়ার জন্য লিখেননি তিনি এটাও সত্য। নিছক প্রকাশনা সংস্থায় চাকরির সুবাদে আর নিজে ধার্মিক প্রকৃতির বলে লেখায় শরিয়া মোতাবেক রোমান্টিকতা দেখানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। শরিয়ার ভিতরে থাকতে পারেননি তিনি এবং তাঁর বোরকার ভিতরে থাকা চরিত্র, এই যা।
লেখকের নাম ও লেখা জনপ্রিয় হলেই যে সেটা সাহিত্য হয় না, কাসেম সাহেব বড় প্রমাণ। এবছর বইমেলায় অনেকের বই নাকি মুরির মতো বিক্রি হয়েছে। তাই বলে সেগুলোকে আমরা সাহিত্য বলবো? কাসেম তখন জনপ্রিয় ছিলেন, এই যুগেও কাসেম টাইপ লেখক আছেন। মোটা মোটা বই করেন। সুনীল, শ্যামলের মতো বিখ্যাত হওয়ার খায়েশ। সে যুগের কাসেম সাহেবের পাঠকের মতো এ যুগের কাসেম সাহেবদেরও পাঠক আছে। তাই বলে এগুলোকে সাহিত্য বলবো? প্রশ্ন এখানে না। প্রশ্ন হলো এই হেফাজতি বাস্তবতায় বিদেশী পত্রিকায় কাসেম সাহেব-সংশ্লিষ্ট নিউজ কেন ?
কাসেম সাহেব এমন কেউ না যে ওই রিপোর্টারকে টাকা দিয়ে নিজের নাম-যশ বাড়ানোর জন্য রিপোর্ট করাবেন। রিপোর্টটি নিজ দায়িত্বে করেছেন ওই রিপোর্টার। যিনি জামায়াতে ইসলামী দল করেন বলে শুনেছি। কি কারণ এই রিপোর্টের সেটাই আলোচনার বিষয় হওয়া উচিৎ। ভান করতে হবে না। কাসেম সাহেবকে না চিনলেও চলবে। ওই লোক যে কোনও দল করে না আজ নিজেই এক টিভিতে বলেছে।
যুদ্ধাপরাধের বিচারে জামায়াত নেতাদের ফাঁসি, হেফাজতের আস্ফালন, ব্লগার হত্যা, জঙ্গি হামলাসহ নানা বাস্তবতায় বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে, ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে পোট্রে করার কোনও বিদেশী ষড়যন্ত্র আছে কিনা, থাকলে তাদের কি লাভ সে আলোচনাতো চলছেই। যেটা গুরুত্বের সাথে দেখা দরকার সেটা হলো কারা, কোন ঘরানার সাংবাদিকরা বিদেশী পত্রিকায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে? এএফপির রিপোর্টার সত্যি যদি জামায়াতে ইসলামীর হয়, তাহলে এএফপির কাছে বাংলাদেশ মানে তা-ই, যা লালন করে ওই জামায়াতি রিপোর্টারের মন ও মেধা।
সুতরাং কাসেম সাহেবকে দিয়ে বাংলাদেশের সাহিত্য রিপ্রেজেন্ট করানোর ধান্ধা যে বাস্তবতায় যে মাথা থেকে এসেছে সেই মাথা নিয়ে অালোচনা করি চলুন। খামোখা দরিদ্র ও প্রায় বিলুপ্ত এক লেখকের লেখায় সাহিত্যমূল্য খুঁজে সময় ও মেধা নষ্ট করবেন না।