ওয়েছ খছরু–হবিগঞ্জে বসেই পরিকল্পনা হয় ব্যাংকের বুথ লুটের। এ কারণে গত রমজান মাস থেকে শামীম ও জাহির সিলেটে রেকি করছিল। লুটের জন্য নিরাপদ বুথ খুঁজছিল। এরমধ্যেই তাদের নজরে আসে শেরপুরের ইউসিবিএল ব্যাংকের বুথ। বরই গাছের আড়ালে থাকা ওই বুথ লুট করার জন্য তারা কয়েক দফা রেকি করে। সুযোগ বুঝে ১৩ই সেপ্টেম্বর ভোররাতে ওই বুথে হানা দেয়। অস্ত্রের মুখে প্রহরীকে জিম্মি করে লুটে নেয় প্রায় ২৫ লাখ টাকা। সিলেটের আলোচিত ঘটনা এটি।
অতীতে কখনো এ ধরনের ঘটনা সিলেটে ঘটেনি। মুখে মুখোশ ও হাতে গ্লাভস পরে এই অপারেশনে অংশ নিয়েছিলো চারজন। সিসিটিভি ফুটেজে সব পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিলো। কিন্তু অপরাধী শনাক্ত করা যাচ্ছিলো না। সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিনের নির্দেশে ডিবির দুই ডিসি সাইফুল ও ইখতিয়ারের ওপর ছিল আভিযানিক দায়িত্ব। ঘটনার পর থেকেই শুরু হয় অনুসন্ধান। প্রযুক্তিসহ নানা বিষয়ে অভিযানের পর ব্যাংক লুটে জড়িত চারজনকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
গতকাল সিলেট জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে চারজনকেই হাজির করা হয়। এরপর অভিযানের আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন পুলিশ সুপার। ঘটনার পরপর হবিগঞ্জের আব্দুল হালিমের বাড়িতে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করার পর চারজন চার দিকে চলে যায়। কেউ যায় ঢাকায়, কেউ বাড়িতেও থেকে যায়। ঘটনায় জড়িত চারজনেরই বাড়ি হবিগঞ্জে। এরমধ্যে মূল পরিকল্পনাকারী হচ্ছে শামীম আহমদ ও সাফি উদ্দিন জাহির। তাদের পরিচয় হয় দুবাইয়ে। দেশে ফেরার পর তাদের টিমে এনে যুক্ত করে একই জেলার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ ও আব্দুল হালিমকে।
পুলিশ জানায়- ঘটনার দিন রাতে মোটরসাইকেলে তিনজন ও বাসে করে একজন শেরপুরে আসে। সেখানে আসার পর তারা মুখোশ ও হাতে গ্লাভস পরে। এরপর ভোররাতে হানা দেয় ব্যাংকের বুথে। ঘটনার পর তারা চারজনই একই মোটরসাইকেলে হবিগঞ্জে চলে যায়। সেখানে আব্দুল হালিমের বাড়িতে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে চারজন চলে যায়। প্রত্যেকের ভাগে প্রায় ৫ লাখ টাকা করে পড়ে। এদিকে- ঘটনার পর পুলিশ সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে। চলে প্রযুক্তিগত অনুসন্ধানও। এরমধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ইউনিটের সহযোগিতা নেয় সিলেটের ডিবি পুলিশ।
সিলেটের গোয়েন্দা ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলামসহ ঢাকার সাইবার ইউনিটের সদস্যরা প্রথমে রাজধানী থেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নুর মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করে। আর তাকে গ্রেপ্তারের পর পরই পুলিশের কাছে সব তথ্য চলে আসে। এরপর গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঢাকা ও হবিগঞ্জ থেকে শামীম ও আব্দুল হালিমকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানতে পারে বুথ লুটের প্রধান গ্রেপ্তারকৃত শামীম আহমদ। তবে- তার প্রধান সহযোগী হচ্ছে হবিগঞ্জ পৌরশহরের বাসিন্দা সাদি উদ্দিন জাহির।
গত বুধবার সন্ধ্যায় গোয়েন্দা পুলিশ পৌর শহরের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে জাহিরকে গ্রেপ্তার করে। এরপর পূর্বে গ্রেপ্তারকৃত তিনজনসহ মোট চারজনকে সিলেটে নিয়ে আসা হয়। গতকাল দুপুরে সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদ অভিযান সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, শেরপুরের ব্যাংক লুটকারীদের সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গলের একটি মিলে লুটকারীদের সঙ্গে তাদের সাদৃশ্য রয়েছে। একই ধরনের ড্রেসআপ ও কাপড় ছিল তাদের। ফলে পুলিশ ধারণা করে দুটি ঘটনা একই গ্রুপের। যেহেতু ঘটনার পর ওরা মোটরসাইকেলযোগে হবিগঞ্জ সড়ক অভিমুখে চলে গেছে; এ কারণে পুলিশ হবিগঞ্জ কেন্দ্রিক তদন্ত শুরু করে। আর পুলিশি তদন্তে অপরাধী শনাক্ত হয় এবং তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ব্যাংকের বুথ লুটের ঘটনা সিলেটে এবারই প্রথম। এ কারণে ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে কারণে পুলিশ আরও বেশি তৎপর হয়ে উঠেছিলো। পুলিশ সুপার জানান- ডিএমপি ডিবি কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত শামীম আহমেদ ও সিলেট জেলা ডিবি কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত সাফি উদ্দিন জাহির দীর্ঘদিন দুবাইয়ে থাকা অবস্থায় তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। এক সময় দু’জনই দেশে ফিরে চুরি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে যায়। শেরপুরে এটিএম বুথ লুটের ঘটনাটিও শামীম ও জাহিরের পরিকল্পনাতেই বাস্তবায়িত হয়।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে শামীমের বাসা তল্লাশি করে ঘটনায় ব্যবহৃত তার পালসার মোটরসাইকেল এবং পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। এদিকে- গ্রেপ্তারকৃত শামীম ও জাহির দুবাইয়ে ছিল। ওমানে থাকাকালে শামীম একইভাবে একটি ব্যাংকের টাকা লুটের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে ৮ বছর কারাগারে ছিল। এরপর দুবাইয়ে আসার পর জাহিরের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। জাহিরকে নিয়ে দেশে এসে ওমানের মতো ব্যাংক লুটের ধান্ধায় মেতে ওঠে তারা। সিলেটের শেরপুরের ওই ব্যাংক লুটের পরিকল্পনা তারা হবিগঞ্জে বসেই করেছিলো। এরপর অপারেশনের পর তারা হবিগঞ্জেই ফিরে যায়।
এদিকে- পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ের পর চারজনকেই গতকাল দুপুরে সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ড চায়। আদালত তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিডিয়া লুৎফর রহমান জানিয়েছেন- আদালত রিমান্ডে দেয়ায় তাদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ তথ্য জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৮৭ বার