হাওরে নেই আতঙ্ক: কৃষকের মনে স্বস্তি
বৈশাখ মানেই বৃষ্টি-বাদল, ঝড়-তুফান, শিলা বৃষ্টি, বজ্রপাত, প্রাণহানি, ফসল নষ্ট, পাহাড়ি ঢল, নদীতে উপচে পড়া পানি। কিন্তু না প্রকৃতি এবার কৃষকদের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এবার বৈশাখ মানেই ছিল রৌদ্রজ্জ্বল দিন। সামান্য বৃষ্টি ছিল তবে এতে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি হাওরের কৃষকদের। তাই হাওরে এখন আর নেই কোনো আতঙ্ক। সোনার ধান ঘরে তুলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা। চলতি বছর করোনা আর বৈশাখ মাসের শুরুতে যখন ধান পাকতে শুরু করে হাওরে হাওরে তখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের আগাম বন্যার সতর্ক বার্তা, সেই সাথে করোনার প্রভাবে বিশ^ব্যাপী খাদ্য সংকটের হুমকি। প্রশাসনসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনের অবিরত ধান কাটার তাগাদা প্রথম দিকে কৃষকদের একটু অস্বস্তিতেই ফেলে দিয়েছিল। অনেক কৃষক হতাশাগ্রস্ত হয়ে কাঁচা পাকা ধানও কেটে নিয়েছিলেন। সামান্য ঝড় বৃষ্টিতে কৃষকরা মনে করতেন এই বৃষ্টিতে মনে হয় বন্যা শুরু হলো। বোর ধানের বাম্পার ফলন, কৃষকরে মুখে সোনা ঝরা হাসি। বৈশাখ মাসে এমন অনুকূল আবহাওয়া অনেক দিন পর দেখতে পেলো হাওরবাসী। সুনামগঞ্জে এবার ২ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকার ফলে হাওরের ধান কাটা-মাড়াই প্রায় শেষের পথে। সেই সাথে বোর ধানের বাম্পার ফলন সব মিলিয়ে সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার হাওরাঞ্চলের কৃষক এখন দুশ্চিন্তা মুক্ত।
জানা যায়, চলতি বছর তাহিরপুর উপজেলার ২৩টি ছোট বড় হাওরে ১৮হাজার হেক্টরের বেশী জমিতে ইরি-বোর ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। বোর ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে বলেও স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। হাওরাঞ্চলে বিশেষ করে মেঘালয় সীমান্ত এলাকায় বছরে বছরে বৈশাখ মাসে যে বৃষ্টিপাত হয় চলতি বছর এমনটা দেখা যায়নি। উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বৃষ্টিপাত। ঝড় বৃষ্টি তেমন একটা নেই। সারা বৈশাখ মাস জুড়ে দু’একদিন বজ্রপাত হলেও তা বিগত বছরগুলোর তুলনায় কম। দিন ব্যাপী রোদ থাকলেও বৈশাখে তেমন গরম পড়েনি হাওরে। প্রতি দিনের ধান প্রতি দিনই রোদে শুকিয়ে গোলায় তুলছেন কৃষক। টাংগুয়ার হাওর পাড়ের কৃষক সাজিদ নুর বলেন, এবার আমাদের স্বস্তির বৈশাখ। হাওরের কাটা-মাড়াই প্রায় শেষ। বর্তমানে ধান মাড়াই খলায় কৃষক ধান শুকানো ও খর শুকানোতে ব্যস্ত। দু’এক দিনের মধ্যে এ ব্যস্ততাও কমে যাবে। মহালিয়া হাওর পাড়ের মানিকখিলা গ্রামের কৃষক শাহজাহান জানান, বন্যার সতর্ক বার্তায় প্রথম দিকে তিনি সামান্য কাঁচা-পাকা ধান কেটেছেন। তার মতে এবার বৈশাখটা খুব ভালো ছিল। মেঘ বৃষ্টির তেমন ভোগান্তি নেই। তিনি জানান, আগামী দু’এক দিনের মধ্যে অধিকাংশ কৃষকের ধান শুকানোও শেষ হয়ে যাবে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, বৈশাখ মাসের আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষকদের মনে এখন আর কোন প্রকার আতঙ্ক নেই। কৃষকরা কোন প্রকার ক্ষতি ছাড়াই বোর ধান কাটতে পেরেছেন। কিন্তু বৈশাখের শুরুতে আগাম বন্যার সতর্কবার্তার কারণে কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার জন্য কৃষকদের দ্বারে দ্বার গিয়ে ধান কাটতে বলেছি। অনেক কৃষক কাঁচা পাকা ধান কেটেছিলেন। এখন বোরো ধানের বাম্পার ফলনে স্বস্তিতে আছেন কৃষক পরিবার। তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান উদ দৌলা বলেন, একদিকে করোনা অন্য দিকে বন্যায় আশংকায় কৃষক পরিবারে মত আমরাও উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় ছিলাম। বর্তমানে ধান কাটা মাড়াই প্রায় শেষ। বোর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায়, সেই সাথে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা খুশি। সেই সাথে আমরাও একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছি। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিজেন ব্যানার্জি বলেন, করোনা ও আগাম বন্যার সতর্ক বার্তায় বোর ধান কাটা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত ছিলাম। আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষক নিশ্চিন্তে ধান কেটে মাড়াই দিয়ে শুকিয়ে গোলায় তোলতে পেরেছেন। এতে করে কৃষকদের পাশাপাশি আমাদেরও স্বস্তি লাগছে।