সুনামগঞ্জের হাওরে প্রায় ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়াল সড়ক নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। একইসঙ্গে এলাকায় সব ঋতুতে চলাচল উপযোগী সড়ক বা সাবমার্সিবল (ডুবন্ত) রোডও তৈরি করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। একনেকের মঙ্গলবারের সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একনেকের অন্য সদস্যরা শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষ থেকে সভায় অংশ নেন।
সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দেশের দুটি মাত্র জেলা সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা পাশাপাশি থাকার পরও সড়কপথে পরস্পর যোগাযোগ বিহীন অবস্থায় রয়েছে। এ দুই জেলার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। উড়াল সড়ক এ দুই জেলার সংযোগ স্থাপন করবে। পাশাপাশি এলাকার অন্যান্য গ্রামীণ সড়কও উন্নত করা হবে। ‘হাওর এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এর আওতায় অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে হাওর অঞ্চলে সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণ, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারজাতকরণে সহযোগিতা এ প্রকল্পের লক্ষ্য।
প্রকল্পভুক্ত এলাকা হলো সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলা এবং নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলা। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করা হবে। এতে ব্যয় হবে তিন হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে দেশীয় অর্থে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কাজের মধ্যে রয়েছে- ১০ দশমিক ৮১ কিলোমিটার এলিভেটেড সড়ক উন্নয়ন, ৯৭ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার অল সিজন উপজেলা সড়ক, ২০ দশমিক ২৭ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়ন, ১৬ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার সাবমার্জিবল উপজেলা সড়ক, ২২ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার সাবমার্সিবল ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়ক এবং ৫৭টি ব্রিজ ও ১১৮টি কালভার্ট নির্মাণ (মোট দৈর্ঘ্য পাঁচ হাজার ৬৮৮ মিটার)।
এলজিইডি বলছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে হাওর এলাকায় ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সারা বছর উৎপাদিত কৃষি পণ্য, মৎস্য সম্পদ ইত্যাদি দ্রুত ও সুলভে পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। গতিশীল হবে গ্রামীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এছাড়াও প্রকল্পটি গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণে অবদান রাখবে। তবে এলজিইডির এমন প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ সংস্থাটি সাধারণত তুলনামূলক ছোট দৈর্ঘের (১০০-২০০ মিটার) সেতুর কাজ করে থাকে। এ ব্যাপারে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নিয়ে শুরুতেই প্রশ্ন ছিল। সড়ক ও সেতু বিভাগ আপত্তিও দিয়েছিল। অবশেষে এলজিইডি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সবার সঙ্গে যেন সমন্বয় করে কাজটি করা হয়।
একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো- নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ১১৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকার ‘অবকাঠামোগত পুনর্গঠনের মাধ্যমে মেরিন একাডেমির আধুনিকীকরণ’; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এক হাজার ৬৩৫ কোটি ১০ লাখ টাকার ‘আরিচা (বরঙ্গাইল)-ঘিওর-দৌলতপুর-নাগরপুর-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়ক (আর-৫০৬) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’; ১৭৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকার ‘নড়াইল শহরাংশের জাতীয় মহাসড়ক (এন-৮০৬) প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন’; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পাঁচ হাজার ৮৮৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ‘এস্টাবলিশিং ডিজিটাল কানকেটিভিটি’; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ৪ হাজার ৮১৯ কোটি ৭০ লাখ টাকার ‘রুরাল ট্রান্সপোর্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট-২ (আরটিআইপি-২) (তৃতীয় সংশোধিত)’; এক হাজার ৪৫৪ কোটি ২৮ লাখ টাকার ‘সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত); পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক হাজার ১৭২ কোটি ৩১ লাখ টাকার ‘খুলনা জেলার পোল্ডার নং-১৪/১ পুনর্বাসন’ ও ৭৫৭ কোটি ৮১ লাখ টাকার ‘ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এনহেন্সমেন্ট প্রজেক্ট (কমপোনেন্ট-১, বিডব্লিউডিবি পার্ট)’ এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকার ‘মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার (প্রথম সংশোধিত)’।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১০৩ বার