হাওর ডুবানো সেই ঠিকাদার এবার ডুবালো সড়ক
জগন্নাথপুরে প্রতিমন্ত্রী এম.এ মান্নানের শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন ম্লান করতে একটি সড়কের কাজ অসমাপ্ত রেখে জনগণকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে কষ্ট দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে হাওরের বোরো ফসল ডুবানো এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে জগন্নাথপুর উপজেলাবাসীর ক্ষোভের অন্ত নেই। গত কয়েকদিন বৃষ্টিপাতে ভাঙাচোরা এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে আছে। গতকাল বুধবার (০৫ জুলাই) ভারীবর্ষণে ওই সড়কের অধিকাংশ জায়গা ডুবে গেছে। উপজেলাবাসী জানান- জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম.এ মান্নানের নেতৃত্বে জগন্নাথপুরের শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়িত হচ্ছে। কিন্তু সুযোগসন্ধানী কিছু রাজনৈতিক ঠিকাদারের কারণে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ম্লান করতে দিনের পর দিন সড়কের কাজ অসমাপ্ত রেখে মানুষদেরকে কষ্ট দেয়া হচ্ছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়- উপজেলার ভবেরবাজর-নয়াবন্দর-গোয়ালাবাজার সড়কের ১১ কিলোমিটার অংশে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকার কাজের ঠিকাদারী পায় সজিব রঞ্জন দাশের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ওই ঠিকাদার জগন্নাথপুরের নলুয়া ও মইয়ার হাওরের ফসলরক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজের বরাদ্দ নিয়ে সময়মতো কাজ না-করায় হাওর তলিয়ে যায়। জগন্নাথপুরের হাওরডুবির খলনায়ক ঠিকাদার সজিব রঞ্জন দাশের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবার জগন্নাথপুরের মানুষকে ভবেরবাজর নয়াবন্দর-গোয়ালাবাজার সড়কে কাজ না করে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে ফেলে দিয়েছে।
জানা গেছে- সজিব রঞ্জন দাশের ব্যবসায়িক অংশিদার (সাব-কন্ট্রাক্টর) জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য সৈয়দ মাসুম আহমদ কাজ নিয়ে কিছু কাজ করে অধিকাংশ কাজ ফেলে রেখেছেন। ২০১৬ সালের ১৩ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ওই সময়ে কাজ শেষ হয় মাত্র ৩৫ শতাংশ। তাও আবার নিয়ম অনুয়ায়ী ৫০০ মিটার ভাঙার পর ৫০০মিটারের কাজ শেষ করে আরো নতুন ৫০০ মিটার ভাঙার কথা থাকলেও মেশিনের টাকা বাঁচাতে পুরো সড়কের অংশ ভেঙে রেখেছেন। এলজিইডির ওই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান জানান- আমরা চারবার ঠিকাদারকে তাগিদপত্র দিয়ে কাজ শেষ করানোর চেষ্টা করে ৩৫ শতাংশ থেকে ৪২ শতাংশ কাজ করিয়েছিলাম। গত বছরের অক্টোবর মাসে চুক্তি বাতিলের চিঠি দিলে ঠিকাদার ২০১৬ সালেল ১৭ নভেম্বর হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়ে কাজের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য রিট পিটিশন দায়ের করেন। যার প্রেক্ষিতে ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়। ওই সময়ে আরো কিছু কাজ করেন। পরবর্তীতে আরো তিন মাস সময় বৃদ্ধির আবেদন করেন। আদালত আরো তিন মাসের সময় বাড়িয়ে দেন। যার সময়সীমা উত্তীর্ণ হয় চলতি বছরের ৩০ মে। ওই সময়ে কাজের বিল উত্তোলন করেন ১ কোটি ৯৭ লাখ ৯২ হাজার ৫৪২ টাকা। কিন্তু আদালতের সময়সীমা ও নির্দেশনার সময় পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদার কাজ ফেলে এলাকার লাখো মানুষকে জনদুর্ভোগে ফেলে রেখেছেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক উক্ত সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াতকারী জুবেদ খান বলেন- সড়কটির কারণে ক্ষমতাসীন দলের একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে এখন আমাদের লজ্জা হয়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় সড়কটির কাজ ফেলে ঠিকাদাররা জনগনকে দুর্ভোগে ফেলেছেন। দ্রুত সড়কটির কাজ শেষ করতে এলজিইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে আশু পদক্ষেপ কামনা করেন তিনি। আশারকান্দি ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান জাবেদ আহমদ বলেন- ভবেরবাজার-নয়াবন্দর-গোয়ালাবাজর-কাঁঠালখাইড় সড়কের দুর্ভোগের কথা বর্ণনা করার ভাষা নেই। বড় যানবাহন চলাচল অনেকদিন ধরে বন্ধ। গতকয়েক দিনে বৃষ্টির পানিতে সড়কের অধিকাংশ ডুবে গেছে। যে কোন সময় সড়কে সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে সাবকন্ট্রাক্টর সৈয়দ মাসুম আহমদ বলেন- কাজ নিয়ে কোন রাজনীতি নয়। দরপত্রের সঙ্গে কাজের কোন মিল নেই। কাজ শুরু করার সময় সড়কের ক্ষতি হয়েছে। সড়কের ধরন পরিবর্তন হয়েছে। বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিষয়ের প্রমাণপত্র অফিসে জমা আছে। আমি যেটুকু কাজ করেছি ওই কাজের বিল না-দিয়ে কাজ বাতিলের চিঠি দেয়ায় আদালতের শরণাপন্ন হলে আদালত থেকে সময় পাই। ওই প্রাপ্ত সময়ের মধ্যে কাজ করি। এরপর বৃষ্টি হওয়ায় আর কাজ করাতে পারিনি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন- সড়কটির কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে অনেক আকুতি-মিনতি করেছি। তিনি নিজেও উক্ত সড়ক নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন বলে জানান। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সড়কের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।