হাসান হামিদ এর কলাম
সরকার কি অস্বস্তিতে?
রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির সভা হয়েছে। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ দাবি করেছেন, পঞ্চম সংশোধনীর রায়ের ৩৫৪ প্যারা অনুযায়ী বিএনপি অবৈধ হয়ে যেতে পারে। তাই ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে বিএনপির লাফালাফির কিছু নেই বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। সরকার বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচনে যাবে কি যাবে না, বিএনপি বৈধ নাকি অবৈধ হবে এরকম স্পর্শকাতর বিষয়ে এতো সহজ মন্তব্য করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সরকার কি তবে কিছু বিষয় নিয়ে বেশি অস্বস্তিতে পড়েছে?
পঞ্চম সংশোধনী আইন জাতীয় সংসদে অনুমোদিত হয় ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল। এই আইন দ্বারা সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের সংশোধন করা হয় এবং তাতে ১৮ প্যারাগ্রাফ নামে একটি নতুন প্যারাগ্রাফ যুক্ত করা হয়। এতে বলা হয় যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখসহ ওই দিন থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত (ওই দিনসহ) সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের যে কোনো ঘোষণা বা আদেশ বলে সম্পাদিত সংবিধানের সকল সংশোধনী, সংযুক্তি, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন ও বিলুপ্তি বৈধভাবে সম্পাদিত বলে বিবেচিত হবে এবং কোনো কারণেই কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনালে এসবের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না। ২০০৫ সালে মুন সিনামা হল নিয়ে মামলার এক পর্যায়ে হাইকোর্ট পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করেন। পরে আপিলের মাধ্যমে এ আদেশ স্থগিত করে তৎকালীন বিএনপি সরকার। পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের বিপক্ষে করা লিভ টু আপিল ২০০৯ সালের ৩ জানুয়ারী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তা বাতিল করে দেয়। কিন্তু ৬ নং ধারায় আনীত সংশোধনী বহাল রাখার আদেশ দেয়া হয়।
কিছুদিন আগের ঘটনা। তিস্তাকে এড়িয়ে তোর্সা, সঙ্কোশ ও রাইদাক নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিকল্প প্রস্তাবে বিব্রত বাংলাদেশ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গত ৮ এপ্রিল বৈঠকে তিনি বুঝিয়ে দিলেন তিস্তা চুক্তি করতে চান না। মমতার এ প্রস্তাবে সরকার কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছিল।
এরপর চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে সরকার। চালের মজুদ কমে যাওয়াকে এই দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বলছে সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা সরকারকে বিপদে ফেলতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এবার সরকারি হিসেবেই চালের মজুদ গত ৭ বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। তাছাড়া আমদানিতে শুল্ক সুবিধা না কমালে বাইরে থেকে চাল এনেও দাম কমানো যাবে না। খাদ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১৩ জুন পর্যন্ত মজুদের পরিমাণ এক লাখ ৯১ হাজার মেট্রিক টন চাল। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরের এই সময়ে খাদ্যগুদামে চাল মজুদ ছিল পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার মেট্রিক টন। যা চলতি বছরের তুলনায় তিন লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন বেশি ছিল। চালের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। তারপরও সরকার বিষয়টি স্বীকার করছে না। তারা বলছে, মজুদ সন্তোষজনক। যদি সন্তোষজনকই হয়, তাহলে দাম কেন কমছে না?
সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীবাসীকে আতঙ্কে ফেলেছিলো চিকুনগুনিয়া। এতে মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।এ রোগ থেকে বাঁচতে তেমন কোন আধুনিক উদ্যোগ গ্রহন করতে পারেনি দুই সিটি কর্পোরেশন। উল্টো মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে মশারি টাঙিয়ে দিতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আনিসুল হক। তার এ কথায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাসহ অসন্তুষ্ট হয়েছেন নগরবাসীও।
চিকুনগুনিয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই সম্প্রতি বৃষ্টির কারণে দেশের প্রধান দুই শহর পানিতে ডুবে যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীর খালগুলোর অবস্থা ভালো না। কিন্তু কৃত্রিম পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা খুবই ভালো। ঠিকমত পানির পাম্পগুলো চালালে ঢাকা শহরে পানি জমতো না। আর মানুষের ভোগান্তিও হতো না। অথচ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা একে অপরের উপর দোষারোপ করছে।
সম্প্রতি বরগুনা জেলার এক স্কুল ছাত্রীর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে নিমন্ত্রণ কার্ড ছাপালে আওয়ামী লীগ নেতা ইউএনওকে হেনস্তা করে। যে কারণে সরকারকে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছিল। যদিও এ ঘটনার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছিল দলটির হাইকমান্ড। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থানীয় পর্যায়ে সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চলছে। এ অবস্থায় মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে ক্ষুব্ধ করা ঠিক হয়নি। তাছাড়া নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা রকম অপতৎপরতা চলতে পারে সরকার বিরুদ্ধে। এসব ঠেকানোর জন্যেও মাঠ প্রশাসনকে লাগবে। কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা সাদা পানি গোলা করায় ব্যস্ত।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত ৭ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলন করার সময় পুলিশের ছোঁড়া টিয়ার শেলের আঘাতে এক ছাত্রের চোখ হারাতে বসেছেন। পুলিশের কিছু অতি উৎসাহী সদস্যের কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। যার প্রভাব পরছে সরকারের উপর।
বগুড়ায় মা-মেয়েকে ধর্ষণের পর মাথা ন্যাড়া করে স্থানীয় শ্রমিকলীগ নেতা। এ ঘটনা দেশের গণমাধ্যমগুলোর প্রধান শিরোনাম হয়। যার কারণে বহিষ্কার করতে হয় ঐ নেতা কে কিন্তু জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শ্রমিকলীগের হাইকমান্ডকে বলার পর অভিযুক্ত শ্রমিকলীগ নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা নিয়েও হ-য-ব-র-ল অবস্থায় আছে সরকার। সাংবাদিক সমাজ মনে করছে, তাদের কণ্ঠ বন্ধ করার জন্য সরকারের এ আইন তৈরী করা। অন্যদিকে, নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা কিছু ছড়ানো বন্ধ করতে এটি অনেক বেশি প্রয়োজন বলে মনে করছে দলটির নেতারা। এর আগে বাজেট নিয়ে সরকারকে বেশ বিতর্কে পড়তে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ভ্যাট ও শুল্ক না বাড়িয়েই বাজেট পাস করেছে সংসদ। সম্প্রতি পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড় ধসে বেশকিছু মানুষ মারা গেছে তা নিয়েও সরকার একটু সমালোচিত হয়েছে। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা তাই কারো সমালোচনা করলে যৌক্তিকভাবে করবেন। নইলে ফলাফল উল্টো হতে পারে।