২৮ কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশ
অ্যামিকো ফার্মাসিউটিক্যালসসহ আরও ২৮টি ওষুধ কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক (পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন) স্টেরয়েড ও ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধের উৎপাদন ও বিপণন বন্ধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন বিশেষজ্ঞসহ পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করে এই ওষুধ কোম্পানিগুলোর মধ্যে যেসব কোম্পানি জিএমপি নীতিমালা অনুসরণ করছে তাদের লাইসেন্স দেওয়ার জন্য বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। সোমবার এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
২৮টি ওষুধ কোম্পানি হলো- অ্যামিকো ফার্মাসিউটিক্যালস লি., এজটেক ফার্মাসিউটিক্যালস লি., বেঙ্গল টেকনো ফার্মা লি., বেনহাম ফার্মাসিউটিক্যাল লি., সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লি., ডিসেন্ট ফার্মা লি., ডা. টিমস ফার্মাসিউটিক্যালস লি., গ্লোবেক্স ফার্মাসিউটিক্যালস লি., গ্রিনল্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লি., ইনোভা ফার্মাসিউটিক্যালস লি., ম্যাক্স ড্রাগস লি., ম্যাডিমেট ল্যাবোরেটরিজ লি., মডার্ন ফার্মাসিউটিক্যালস লি., মিসটিক ফার্মাসিউটিক্যালস লি., ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিজ লি., অর্গানিক হেলথকেয়ার লি., ওয়েস্টার ফার্মা লি., প্রিমিয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লি., প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লি., সীমা ফার্মাসিউটিক্যালস লি., হোয়াইট হর্স ফার্মাসিউটিক্যালস লি., মমতাজ ফার্মাসিউটিক্যালস লি., ইউনিক ফার্মাসিউটিক্যালস লি., ইউনিাইটেড ক্যামিকেল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লি., এফএনএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লি., টেকনো ড্রাগস লি. ইউনিট-১, ইউনিট-২, ইউনিট-৩।
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা ‘গুড মেনুফ্যাক্টরি প্র্যাকটিস (জিএমপি)’ অনুসরণ না করে ২৮টি কোম্পানি নিম্নমানের অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড ও ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন করছে। এতে জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে।”এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা ‘জিএমপি (গুড ম্যানুফ্যাকটরি প্র্যাকটিস)’ অনুসরণ না করে ২৮টি কোম্পানি নিম্নমানের অ্যান্টিবায়েটিক, স্টোরাইড ও ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন করছে। এতে জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে’। ‘ওষুধের মান ঠিক রাখতে উৎপাদন পদ্ধতি, লোকবল, ফ্যাক্টরির অবস্থান, পদ্ধতি, প্যাকেট, বোয়িংসহ অনেক বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে জিএমপি নীতিমালায়। এ নীতিমালাটি আমাদের দেশের প্রচলিত আইনেও স্বীকৃত। ফলে জিএমপি লঙ্ঘন করে ওষুধ উৎপাদন সম্ভব নয়’।
রিট আবেদনে বলা হয়, ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২ এর ১৫ (১) ধারা অনুসারে প্রতিটি ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি অবশ্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জিএমপি অনুযায়ী ওষুধ উৎপাদন করবে। ১৫ (২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ওষুধ কোম্পানি জিএমপি অনুসরণ না করে, তবে সে সকল কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল অথবা সাসপেন্ড করা যেতে পারে’। ১৭ ধারায় নিম্নমানের ওষুধ প্রস্তুত, মজুদ, অথবা বিক্রির জন্য সর্বোচ্চ ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা অনধিক এক লাখ টাকা জরিমানাসহ শাস্তি অথবা উভয় দণ্ডের শাস্তির বিধান রয়েছে’। মনজিল মোরসেদ বলেন, নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনের অভিযোগ এনে জাতীয় সংসদের স্পিকারের অনুমতিক্রমে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করে তাদের উৎপাদিত অ্যান্টিবায়োটিক, স্টোরাইড ও ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ উৎপাদন বন্ধের সুপারিশ করে। কিন্তু এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় জনস্বার্থে এ রিট আবেদনটি করা হয়। এর আগে একই হাইকোর্ট বেঞ্চের নির্দেশে ২০টি কোম্পানির সকল ধরনের ওষুধ ও ১৪টি কোম্পানির সকল ধরনের এন্টিবায়োটিক উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে। মানসম্মত ওষুধ উৎপন্ন না করায় এ সকল কোম্পানির লাইসেন্সও বাতিল করে দেন হাইকোর্ট।
উৎপাদন বাতিল হওয়া আগের ২০টি ওষুধ কোম্পানি হলো- এক্সিম ফার্মাসিউটিক্যাল, এভার্ট ফার্মা, বিকল্প ফার্মাসিউটিক্যাল, ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যাল, ড্রাগল্যান্ড, গ্লোব ল্যাবরেটরিজ, জলপা ল্যাবরেটরিজ, কাফমা ফার্মাসিউটিক্যাল, মেডিকো ফার্মাসিউটিক্যাল, ন্যাশনাল ড্রাগ, নর্থ বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যাল, রিমো কেমিক্যাল, রিদ ফার্মাসিউটিক্যাল, স্কাইল্যাব ফার্মাসিউটিক্যাল, স্পার্ক ফার্মাসিউটিক্যাল, স্টার ফার্মাসিউটিক্যাল, সুনিপুণ ফার্মাসিউটিক্যাল, টুডে ফার্মাসিউটিক্যাল, ট্রপিক্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল এবং ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড। অ্যান্টিবায়েটিক ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি বাতিল করা ১৪টি কোম্পানি হলো- আদ-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যাল, আলকাদ ল্যাবরেটরিজ, বেলসেন ফার্মাসিউটিক্যাল, বেঙ্গল ড্রাগস, ব্রিস্টল ফার্মা, ক্রিস্ট্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল, মিল্লাত ফার্মাসিউটিক্যাল, এমএসটি ফার্মা, অরবিট ফার্মাসিউটিক্যাল, ফার্মিক ল্যাবরেটরিজ, পনিক্স কেমিক্যাল, রাসা ফার্মাসিউটিক্যাল এবং সেভ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড।