মাহমুদুল হাসান, গাজীপুর।।

মাত্র দশ বছর বয়সে বড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন টাঙ্গাইলের মো. শাকিনুর ইসলাম খাঁন বাবুল। অবশেষে সেই শিশু বাবুল বাড়ি ফিরেছেন ৩৮ বছর বয়সী মধ্যবয়সী যুবক রূপে। প্রায় ২৮ বছর পর বাড়ি ফিরেছেন তিনি। টাঙ্গাইল মির্জাপুর উপজেলার বাঙ্গলা গ্রামের মরহুম আব্দুস সবুর খাঁনের চার সন্তানের তৃতীয় সন্তান বাবুল। বাবুলের মেজ ভাই মো. নাঈম খান দুলাল জানান, লেখাপড়ায় অমনোযোগী চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র থাকা অবস্থায় ১০ বছর বয়সে বাবুলকে মটর মেকানিকের কাজ শেখার জন্য দেয়া হয় গাজীপুরের শিববাড়ি এলাকাস্থ তার ফুপার গাড়ির গ্যারেজে।

সেটা মেনে নিতে পারেননি শিশু বাবুল। মাস তিনেক পর বাবুল বিষয়টি নিয়ে তেজগাঁও এলাকায় বসবাসরত ভাই দুলালের সঙ্গে আলাপ করতে যায়। দুলাল এ বিষয়টি নিয়ে বকাঝকা করলে বাবুলের প্রচণ্ড রাগ হয় তার। পরে তেজগাঁও থেকে বাবুল বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে আর ফিরে আসেনি। পরিবারের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ করেও সন্ধান মেলেনি বাবুলের।

তিনি বলেন, দীর্ঘ ২৮ বছর পর গত বছরের মার্চের প্রথম দিকে বাবুলের খোঁজ পাওয়া গেছে বলে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা থেকে তাদের বাড়িতে খবর পাঠানো হয়। থানা থেকে জানায় বাবুল নামের এক ব্যাক্তিকে ডাকাতি মামলায় ঢাকার সুত্রাপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার হওয়া বাবুলের স্থায়ী ঠিকানায় মির্জাপুরের তাদের বাড়ির ঠিকানা উল্লেখ আছে।

যে ভাইকে সকলে মৃত ভেবেছে, সেই ভাইকে জীবিত সন্ধান পেয়ে সকলে আনন্দিত হয়। পরে দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়া শেষে বুধবার (২২ মার্চ) সে ছাড়া পায়। বুধবার গাজীপুরে ভাইয়ের বাসায় একদিন থেকে আজ বৃহস্পতিবার বাড়ি পৌঁছলে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। ২৮ বছর পর স্বজন ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত মা, ভাই, বোন আত্মীয় ও প্রতিবেশী সকলে। বাবুলকে এক নজর দেখতে উৎসুক এলাকাবাসীর ভিড়। সংবাদ পেয়ে দুর দুরান্ত থেকে দেখতে এসেছে অনেকে।

বাবুল জানান, তেজগাঁও থেকে বাড়ি ফেরার পথে মহাখালী এলাকায় তাকে বহনকারী মিশুক-এর সঙ্গে একটি প্রাইভেট কারের সংঘর্ষ হয়। এতে গুরুত্বর আহত হলে স্থানীয়রা অজ্ঞান অবস্থায় বাবুলকে তুলে নিয়ে একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে কুষ্টিয়া জেলার পোড়দা এলাকা কাপড় ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেনের (৪০) সঙ্গে তার পরিচয় হয়। বাবুলের পাশের বেডে ইকবালের এক আত্মীয় ভর্তি ছিল। কোনো আত্মীয় স্বজন হাসপাতালে ১০ বছরের আহত বালক বাবুলের খোঁজ না করায় ইকবাল তাকে সঙ্গে করে কুষ্টিয়া নিয়ে যায়। বাবুল দুইমাস পর সেখান থেকে পালিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার কালীবাজার এলাকায় চলে আসে। সেখানে আলামিন নামের এক ফার্নিচার ব্যবসায়ীর ভাড়া মেস বাড়িতে থেকে তিন বছর চাষারা এলাকার পিসিগিন সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। পরে তিনি সেখান থেকে নারায়নগঞ্জ বন্দর এলাকায় চলে যান। সেখানে তিনি বছর ছাপাখানায় কাজ করেন। পরে দু’বছর তিনি একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে বাবুর্চির সহকারী হিসেবে কাজ করেন।
পরের কয়েক বছর তিনি ঢাকার সূত্রাপুর এলাকায় থেকে প্রথমে হেলাপার ও পরে ট্রাকের ড্রাইভার হিসেবে কাজ করেন। এসময় আমিন নামের এক হেলপার একটি লুন্ঠিত মোবাইল সেট কিনে পুলিশের হাতে ধরা পরে। গ্রেফতারকৃত আমিন বাবুল ড্রাইভারের অধীনে কাজ করে জানালে পুলিশ বাবুলকে ধরে ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার দেখায়। গত বছরের ১৭ জানুয়ারি তিনি গ্রেফতার হন। পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের সহায়তায় তিনি বুধবার জামিন পান।

বাবুল জানান, মাঝে মধ্যে বাড়ি ফিরে যেতে খুব ইচ্ছে করতো। কয়েকবার তিনি বাড়ির কাছে গিয়েও আবার ফিরে চলে গেছেন। প্রায় ৮ বছর আগে তার বাবার মৃত্যুর খবরটি তার জানা ছিল না। প্রায় ২৮ বছর বাবা-মা, ভাই-বোন সকলকে কষ্ট দিয়েছেন সে জন্য তিনি দুঃখিত ও লজ্জিত। তাদের হক ঠিকমতো পালন করতে পারেননি। তবুও তার বিপদের দিনে পরিবারের সদস্যরাই এগিয়ে এসেছে এজন্য তিনি কৃতজ্ঞ। জীবনের অর্ধেক সময় অভিমানেই নষ্ট হয়েছে এখন সামনের দিনগুলো পরিবারের সকলের সঙ্গে আনন্দে কাটাতে চান বাবুল। সেজন্য সকালের নিকট দোয়া চেয়েছেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn