৫০ বেকার তরুণীর কর্মসংস্থান ও ২৫০ তরুণ-তরুণীকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ
জগন্নাথপুর উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের রসুলপুর বাজারে দরিদ্র মামার বাসায় থেকে খেয়ে না খেয়ে কোনরকম জীবনযাপন করছিলেন রবিদাস সম্প্রদায়ের মেয়ে মায়া রানী রবিদাস (২৫)। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর দরিদ্র মামার পরিবারের ঠাঁই নেয় মায়া। জুতা সেলাইয়ের কাজ করে মামা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন, তা দেখে চোখেমুখে সর্ষেফুল দেখেন মায়া। একদিন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে সেলাই প্রশিক্ষণের সুযোগের খবর পেয়ে ছুঁটে যান। বিনাপয়সায় তিন মাস প্রশিক্ষণ নেন। কিন্তু সেলাই মেশিন না-থাকায় আয় রোজকার করতে পারছিলেন না বিষয়টি তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কে অবহিত করলে চেয়ারম্যান ভাবনায় পড়েন এসব মেয়েদেরকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়। সেই ভাবনায় ইউনিয়ন পরিষদ মার্কেটে ৫০টি সেলাই মেশিন দিয়ে ইউনিয়নের হতদরিদ্র ৫০ জন নারীকের সাবলম্বী করার উদ্যোগ নিয়ে চালু করা হয় এম এস (মহিলা স্বাবলম্বী) ডিজাইন গার্মেন্স।
গতকাল বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয় অসহায় বেকার তরুনীদের পরিচালনায় এ গার্মেন্স। একইভাবে বেকার তরুণদেরকে কাজে লাগাতে প্রবাসীদের সহযোগীতায় কম্পিউটার প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়। তাদের মধ্যেও সনদপত্র বিতরণ করা হয়। পাটলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক এর সভাপতিত্বে ও ইউনিয়নের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের পরিচালনায় এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি হিেেসব বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ সাবেক সহ-সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিবীদ সিদ্দিক আহমদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আকমল হোসেন, বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম মশাহিদ,পাটলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজির হোসেন,পাটলী সোসাইটির সভাপতি আব্দুস শাহিদ খালিক, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি জমশেদ মিয়া তালুকদার,ইউপি সদস্য খালেদ মিয়া প্যানেল চেয়ারম্যান ওয়াহিদুর রাজা সহ ইউনিয়নের সকল সদস্য ও সদস্যাবৃন্দ।
পাটলী ইউনিয়নের সাতহাল গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা শামসুন্নাহার বেগম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলাই প্রশিক্ষন দিয়ে আমাদেরকে কাজে লাগিয়ে বাঁচার পথ তৈরী করে দিয়েছেন। এখন কাজ করে বাঁচতে পারব। পাটলী ইউনিয়নের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন,চেয়ারম্যান সিরাজুল হক একজন সৃজনশীল দক্ষ চেয়ারম্যান। ইতিমধ্যে তিনি ইউনিয়ন পরিষদ সড়ককে আলোকসজ্জায় সজ্জিতকরণ, ভিক্ষুক মুক্তসহ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে প্রশংসনীয় হয়েছেন। এবার তিনি বেকার তরুন তরুনীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গার্মেন্স স্থাপন ও আইটি ল্যাব স্থাপন করে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছেন। পাটলী ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র জানায়- ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে ৭২ জন তরুণীকে সেলাই প্রশিক্ষণ ও ২৫০ জন বেকার শিক্ষিত তরুণ-তরুণীকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। পাটলী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হেমেন্দ্র কুমার দাশ বলেন- চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের প্রচেষ্টায় ইউনিয়ন পরিষদের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রবাসী সংগঠনের উদ্যোগে দারিদ্রবিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচেছ। যার ধারাবাহিকতায় পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অর্থায়নে ৫০টি সেলাই মেশিন দিয়ে মিনি গার্মেন্স স্থাপন করা হয়েছে। আর প্রবাসীদের অনুদানে আইটি ল্যাবে কম্পিউটার্স প্রশিক্ষণ চলছে।
পাটলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক বলেন- বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান হিসেবে পাটলী ইউনিয়ন পরিষদ নানামুখি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। যারমধ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সেলাই প্রশিক্ষন ও প্রশিক্ষিত কর্মীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও বেকার তরুণদেরকে কম্পিউটার প্রশিক্ষন দিয়ে স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থা করেছি। তিনি বলেন- আমার স্বপ্ন রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ কে সত্যিকারের জনকল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে। পাটলী ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকান্ড বাংলাদেশের সকল ইউনিয়ণ পরিষদে ছড়িয়ে পড়বে এই প্রত্যাশা করেন চেয়ারম্যান সিরাজুল হক।