দেশের ছয় জেলায় আগাম বন্যার কারণ খুঁজতে নির্দেশনা দিতে যাচ্ছে সরকার। পাশাপাশি আগামী দিনে এ ধরনের বন্যা হলে কী করণীয় হতে পারে তা-ও জানাতে বলা হবে। দু-একদিনের মধ্যে সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার ডিসিকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টির কারণে আগাম বন্যা হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় মনে করে, এর পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। এ কারণেই ডিসিদের কাছে নির্দেশনা পাঠানো হবে। ডিসিরা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ মাঠপর্যায়ে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কারণ ও সুপারিশগুলো পাঠাবেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জেলা পর্যায় থেকে আগাম বন্যার কারণ ও করণীয় সম্পর্কে প্রতিবেদন আসার পর এ নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা হবে। জাতীয় বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন। এরপর সরকারের ঊর্ধ্বতনদের কাছে রিপোর্ট দেয়া হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, জাতীয়ভাবে চুলচেরা বিশ্লেষণের আগে সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ নিয়ে আলাদাভাবে বসা হবে। এছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ নিয়েও বসা হবে। এদিকে আজ বেলা সাড়ে ১১টায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বসছে আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সমন্বয় কমিটির উচ্চপর্যায়ের সভা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সভাপতিত্বে এ সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, হাওরাঞ্চলে অকাল বন্যায় আট লাখ ৫০ হাজার ৮৮টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছয় জেলায় দুই লাখ ১৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের দুই হাজার ৮৬০টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ১৫ হাজার ৩৪৫টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছয় জেলায় মোট ২১৩ দশমিক ৯৫ টন মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে; সুনামগঞ্জে তিন হাজার ৯০২টি হাঁস ও চারটি মহিষ মারা গেছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্যে বলা হয়েছে, সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার হাওর এলাকা বন্যাকবলিত হওয়ায় ওই জেলাগুলোর ৬২টি উপজেলার ৫১৮টি ইউনিয়নের ৮,৫০,০৮৮টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে ও অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় ২,১৯,৮৪০ হেক্টর জমির বোরো ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ১৮,২০৫টি ঘর-বাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ত্রাণসামগ্রী বিতরণের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক ৫৮৭টি কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn