৭ কেজি সোনা পেয়েও ফিরিয়ে দিল দুই পরিচ্ছন্নতাকর্মী
বিমানের ভিতরে যাত্রীর সিটের পিছনে পড়ে ছিল সাড়ে তিন কোটি টাকার সাত কেজি সোনা। চাইলেই যা আত্মসাৎ করা যেত। কিন্তু তা না করে ওই সোনা স্বেচ্ছায় জমা দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সে কর্মরত দুই পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো: আব্দুল কাদের ও মো: আলমাস হোসাইন। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান তাদের রাজস্ব যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন। বুধবার রাজধানীর আইডিবি ভবনে শুল্ক গোয়েন্দার সদর দপ্তরে সততার পুরস্কার হিসেবে ওই দুই পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। এ সময় নজিবুর রহমান বলেন, আমি সত্যিই অভিভূত এবং গর্ব অনুভব করছি। বাংলাদেশ সত্যিই এগিয়ে যাচ্ছে তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো এটি। বাঙালি জাতি যে সত্যেই উজ্জ্বল চরিত্রে অধিকারী তা আজ প্রমাণ হয়ে গেল। আজ আলমাস ও কাদের সেটা প্রমাণ করলো।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধারা যা করেছেন বর্তমানে সময়ে ওই দুইজন সেই একই কাজ করেছেন। বর্তমান সময়ে যুদ্ধ হচ্ছে অর্থনৈতিক যুদ্ধ। রাজস্ব আহরণের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আমরা দুজন নতুন যোদ্ধা পেলাম। তাদের আমি বলবো রাজস্ব যোদ্ধা। তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা উচ্চবিত্তের মুখোশ উন্মোচনের কাজ করছে। সে বিবেচনায় আলমাস ও কাদের সাদা মানুষের দলে। আমরা আরো দুজন সাদা মানুষ পেলাম। এ সময় শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, এয়ারক্রাফটের অভ্যন্তরে প্রাপ্ত স্বর্ণ নিজ উদ্যোগে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর একটি বিরল ঘটনা। এটি বিমানবন্দরে কর্মরত সকল এজেন্সির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি দৃষ্টান্তমূলক নজির। চোরাচালান প্রতিরোধে তাদের এ সততার স্বীকৃতিস্বরূপ শুল্ক গোয়েন্দার পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।
গত সোমবার দুপুর ২টার দিকে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট কোলকাতা হতে ঢাকায় অবতরণ করে। অবতরণের পরে এয়ারক্রাফটি ডিপ ক্লিন করার সময় পরিচ্ছন্নতাকর্মী ওই দুই কর্মী ১বি যাত্রী সিটের নিচে একটি প্যাকেট দেখতে পান। ওই প্যাকেটে চোরাচালানকৃত সোনা থাকতে পারে এই সন্দেহে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে জানায়। এরপর তারা শুল্ক গোয়েন্দাকে জানানোর পর শাহজালাল বিমানবন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে স্বর্ণভর্তি প্যাকেট হস্তান্তর করে।পরবর্তীতে সবার সামনে প্যাকেট খুলে প্রতিটি ১০ তোলা (১১৬ গ্রাম) ওজনের ৬০টি সোনার বার উদ্ধার করে। যার মোট ওজন প্রায় সাত কেজি। যার বাজার মূল্য সাড়ে তিন কোটি টাকা।
শুল্ক গোয়েন্দার অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওই দুজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী যখন দায়িত্বে ছিলেন তখন অন্য কোন নিরাপত্তা এজেন্সির লোকজন উপস্থিত ছিল না। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ইচ্ছে করলে এগুলো কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে নিজেরাই আত্মসাৎ করতে পারতেন। তাদের ব্যক্তিগত সততা ও দায়বদ্ধতা থেকে তারা এই সোনাগুলো সরকারের কোষাগারে জমা দেয়। নিম্ন বেতনভূক্ত হওয়া স্বত্ত্বেও এ ধরণের উদাহরণ অন্যদের জন্য অনুসরণীয়।