ডিসেম্বরে শুরু হচ্ছে ঘৃণাস্তম্ভের নির্মাণকাজ
আগামী ডিসেম্বরে শুরু হবে ঘৃণাস্তম্ভ তৈরির কাজ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে এর নকশা তৈরির কাজ শুরু করেছে। আগামী ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের আগেই এর নির্মাণ কাজ শেষ করতে চায় সরকার। অবশ্য এটি নির্মাণের স্থান হিসেবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে প্রাথমিকভাবে বিবেচনায় রাখা হলেও বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের বিপরীতে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামসদের প্রতি ঘৃণা জানাতে জাতীয়ভাবে ঘৃণাস্তম্ভ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন এ বিষয়ে সরকারের কাছে বার বার দাবি জানিয়ে আসছে। এ দাবিটির বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে সংসদেও আলোচনায় এসেছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ২০১৪ সালের ১২ মার্চ সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় ঘৃণাস্তম্ভ নির্মাণের সরকারি পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ‘মুক্তিযোদ্ধা স্তম্ভের’ পাশাপাশি রাজাকারদের প্রতি নতুন প্রজন্মের সন্তানদের ঘৃণা জানানোর জন্য ঘৃণাস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।’ এরপর ওই বছরের ১৮ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়সহ সারাদেশে ঘৃণাস্তম্ভ নির্মাণের কথা জানান।
আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানাতে স্মৃতিস্তম্ভের মতো স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতি ঘৃণা জানাতে তৈরি করা হচ্ছে ঘৃণাস্তম্ভ। মুক্তিযোদ্ধা দিবসে এই স্তম্ভে এসে বাঙালিরা জুতা নিক্ষেপসহ বিভিন্নভাবে ’৭১-এর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ও স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতি তাদের ঘৃণা প্রকাশ করবে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগীরা যে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মতো জঘন্য অপরাধ করেছে; নতুন প্রজন্ম এই স্তম্ভের মাধ্যমে তার জন্য ঘৃণা জানতে পারবে৷ গত ৭ জুন বাজেট আলোচনা ও ২০ জুন সংসদের প্রশ্নোত্তরেও এই পরিকল্পনার কথা আবারও জানান মন্ত্রী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজ শুরুর পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে নকশা প্রণয়ন করার জন্য স্থপতিদের দায়িত্ব দিয়েছি। নকশা চূড়ান্ত হলেই নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।’ আগামী ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের আগেই স্তম্ভ তৈরির কাজ শেষ করার বিষয়ে মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘ঘৃণাস্তম্ভে বাঙালি জাতি গণহত্যায় জড়িতদের নানাভাবে ঘৃণা জানাবে। এই স্তম্ভে গণহত্যাসহ মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির ওপর নির্মম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হবে।’ ঘৃণা স্তম্ভটি কোথায় নির্মাণ হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয়ভাবে যে ঘৃণা স্তম্ভটি করা হবে, তার জন্য ৩/৪টি স্থানকে প্রাথমিকভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এর মধ্য থেকে কোনও একটিকে বেছে নেওয়া হবে। প্রাথমিক বিবেচনার স্থানগুলোর মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানও রয়েছে তবে, এটি এখনো চূড়ান্ত নয় বলে জানান মন্ত্রী।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়াও মিরপুর বধ্যভূমি ও রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে ঘৃণাস্তম্ভ নির্মাণের স্থান হিসেবে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের কোনও নকশা করতে চাইলে আমাদের মাধ্যমেই করানো হবে। তবে, এখনও হাতে নকশা প্রণয়নের কোনও চিঠি আসেনি। দফতরে এসেছে কি না জানি না, ঈদের পর অফিস খুললে জানাতে পারবো। আর মন্ত্রণালয় আমাদের বাইরের কাউকে দিয়ে নকশা করাচ্ছেন কিনা সেটাও আমাদের জানা নেই। এক প্রশ্নের জবাবে কাজী নাসির বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক যে সাংস্কৃতিক বলয় হচ্ছে, তা আমাদের তত্ত্বাবধানেই হচ্ছে। কাজেই এখানে নতুন কোনও স্থাপনা হলে সেটা অবশ্যই আমাদের নজরে আসবে। স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামসদের প্রতি ঘৃণা জানাতে সরকারিভাবে এই প্রথমবারের মত ঘৃণাস্তম্ভ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিলেও মুক্তিযুদ্ধ সমর্থিত বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র পরিসরে স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে এই ঘৃণা স্তম্ভ তৈরির কাজ বেশ আগেই শুরু হয়েছে।