ভারতের যৌনপল্লীতে বাড়ছে বাংলাদেশি নারীদের সংখ্যা
ভারতের যৌনপল্লীতে বাংলাদেশি নারীদের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। লোভনীয় চাকরি ও উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশি শিশু, কিশোরী এবং নারীদের ভারতে পাচারের পর সেখানকার বিভিন্ন যৌনপল্লীতে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। নারী ও শিশু পাচারের উদ্বেগজনক এ তথ্য তুলে ধরে ভারতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুম্বাইতে বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার সামিনা নাজ বলেন, ২০১৪ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত আমরা ৩৫০ জনের বেশি বাংলাদেশি নারীকে দেশে ফেরত আসার জন্য ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করেছি। এছাড়া, এখনও অল্পসংখ্যক নারী আছেন, যাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। আমরা এ ধরনের কোনও খবর পেলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়ে থাকি।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কূটনীতিক বলেন, এ ধরনের ঘটনায় দেখা যায়, অনেক নারী অন্তঃসত্ত্বা থাকেন, বা তারা বাচ্চার মা হয়ে যান। এক্ষেত্রে আমরা বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন যোগাড় করে লিখে দেই, এ বাচ্চার বাবা একজন ভারতীয় নাগরিক। তিনি বলেন, এটি একটি মানবিক বিষয় এবং বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সময়ে এ বিষয়টি আলোচিত হলে ভালো হয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের যশোর অঞ্চলের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল কাজী তৌফিকুল ইসলাম বলেন, গত মার্চে পেট্রাপোল সীমান্তে ভারতের বিএসএফ মানবপাচার নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করে এবং সেখানে আমাদের দাওয়াত দেওয়া হয়। তিনি বলেন, সেখানে ভারতের দুটি এনজিও সেদেশের বিভিন্ন পতিতালয়ে বাংলাদেশি নারীদের ওপর তাদের গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করে। সরকারের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাংলাদেশের মেয়েদের প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচার করা হয়। কিন্তু ভুক্তভোগী নারীরা পাচারের সময়ে ধরা পড়লে এটি স্বীকার করতে চান না ।
গত ছয় মাসে শুধুমাত্র যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্তে ১৫০ থেকে ২০০ জনকে অবৈধ উপায়ে সীমান্ত অতিক্রমকালে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয় এবং এরমধ্যে এক-তৃতীয়াংশই নারী। এদিকে রাষ্ট্রদূত মোয়াজ্জোম আলী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ভারতের যৌনপল্লীতে বাংলাদেশি নারীদের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে বা উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর অবস্থা বাংলাদেশের মতো হলেও সেখানকার যৌনপল্লীগুলোতে তাদের নারীদের সংখ্যা বাংলাদেশি নারীদের তুলনায় কম। ভারতের সেসব রাজ্যে জনসচেতনতামূলক প্রচারণার কারণে এটি ঘটছে বলে তিনি মনে করেন। রাষ্ট্রদূত চিঠিতে বলেছেন, কোলকাতা, মুম্বাই, গোয়া, পুনে ইত্যাদি শহরে বাংলাদেশি নারীদের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এবং সংঘবদ্ধ চক্র এ কাজটি করছে। যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর নারীরা বেশি সংখ্যায় পাচারের শিকার হয়ে থাকেন। রাষ্ট্রদূত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আগামী চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশ মাধ্যম আয়ের দেশে উন্নিত হবার প্রত্যয় রাখছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে শিশু, কিশোরী ও নারীদের পাচার দেশের ভাবমূর্তির জন্য অত্যন্ত নেতিবাচক বলে তিনি মনে করেন।