সুফিয়ান ইসমাইল-

গত ২১ শে জুন সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে যা ঘটেছিল তা কোনদিনই ভুলতে পারবেন না জামিল মুখতার ও তার কাজিন রেশাম খান। পূর্ব লন্ডনে একজন শ্বেতাঙ্গ তাদের ওপর ভয়াবহ এসিড হামলা চালায়। এতে জামিল কোমায় চলে যান। মডেলিংয়ে উচ্চকাঙ্খী ছিলেন রেশাম। তার সেই স্বপ্ন এখন শেষ হয়ে গেছে। তাদের পরিবার মনে করে এটা হলো ইসলামবিদ্বেষী ঘৃণা প্রসূত অপরাধ। কিন্তু এখানে হতাশার কথা হলো, মূলধারার মিডিয়াগুলোর বেশির ভাগই এ খবরকে কভার স্টোরি করতে ব্যর্থ হয়। তারা এটাকে ছোট একটি ঘটনা হিসেবে দেখে। কিন্তু এক্ষেত্রে জামিল ও রেশাম যদি হতেন জেমস ও রেবেকা, আর হামলাকারী হতেন এশিয়ান তাহলে কমপক্ষে একদিন ধরে তারা তাদের ছবি দিয়ে সংবাদ শিরোনাম করতো। বৃটেনে অমুসলিমদের থেকে বৃটিশ মুসলিমদের অনেকটা আলাদা করে দেখা হয়। এই ট্রাজেডি এবারই প্রথম নয়। স্মরণ করুন মোহাম্মদ সালিম ও মুশিন আহমেদের কথা। তাদের প্রথমজনকে ছুরিকাঘাত ও পরের জন লাথি মারতে মারতে হত্যা করা হয়েছে। রাজনীতিক জো কক্স ও লি রিগবির হত্যাকান্ড নিয়ে যেভাবে কাভারেজ দেয়া হয়েছিল তার সঙ্গে এ ঘটনাটি একটি তুলনা করে দেখুন। পরে উল্লেখ করা এ দুটি নাম আমাদের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে গেঁথে গেছে। অন্যদিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের বাইরে মোহাম্মদ সালিম ও মুহসিন আহমেদের নাম অচেনাই রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে রিপোর্টিংয়ে দুর্বলতাই একমাত্র কারণ নয়। এর সঙ্গে রয়েছে মুসলিমদের ওপর হামলা। তাদের ওপর যে হামলা হয় তাকে সন্ত্রাস বা টেরোরিজম বলা হয় না। কোনো শ্বেতাঙ্গ হামলা চালালে তাকে সন্ত্রাস বা দিয়ে অন্য শব্দ ব্যবহার করে রিপোর্ট করা হয়। এতে বৃটিশ মুসলিমদের সামে মিডিয়ার দ্বিমুখী নীতি ফুটে ওঠে। জো কক্স’কে যখন ডান-পন্থি এক সন্ত্রাসী হত্যা করে তখন তার কঠোর সমালোচনা করে রিপোর্ট প্রকাশ করে দ্য সান, ডেইলি মেইল। তবে ওই রিপোর্ট প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশ না করায় ডেইলি মেইলকেও শুনতে হয়েছে তীব্র সমালোচনা। বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। ফিন্সবুরি পার্ক ট্রাজেডির অব্যবহিত পরেই স্কাই নিউজের আশীষ যোশীকে মসজিদের বাইরে ঘিরে ধরেন উত্তেজিত মুসলিমরা। তারা মুসলিমদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিয়ে হত্যাকা-কে সন্ত্রাসী কর্মকা- হিসেবে আখ্যায়িত করার দাবি জানান। আসল সত্য কথা হলো এখন আমাদের সমাজের বিভিন্ন অংশে ইসলামভীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। বৃটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৃটিশ মুসলিমদের ‘পূর্ণাঙ্গ সুরক্ষা’ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ সপ্তাহে আমি তাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে একটি চিঠি লিখেছি। তাকে সেই প্রতিশ্রুতি রাখার আহ্বান জানিয়েছি। তিনি কিছু ‘ট্রাবলিং’ পরিসংখ্যানও দিয়েছিলেন। তথ্যে দেখা যাচ্ছে বৃটেনে বছরে মুসলিম বিরোধী ঘৃণাপ্রসূত অপরাধ ঘটে প্রায় ৭ হাজার। ২০১৬ সালের মার্চ থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে বৃটেনে মুসলিম বিরোধী অথবা ইসলাম বিরোধী টুইট করা হয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯২০টি। যা প্রতিদিন ৩৯৩টির সমান। ন্যাশনাল ইকুয়ালিটি প্যানেল দেখতে পেয়েছে যে, সমান যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মুসলিমরা শতকরা ১৩ থেকে ২১ ভাগ কম বেতন পান। বিবিসির এক গবেষণায় দেখা গেছে, চাকরি প্রত্যাশিদের মধ্যে সাক্ষাৎকারের জন্য অন্যদের থেকে তিন গুণ কম ডাকা হয় মুসলিমদের। চাইল্ডলাইনের গবেষণায় দেখা গেছে, খেলাধুলার ক্ষেত্রে মুসলিম শিশুরা বর্ণবাদের শিকার হচ্ছে। এমনটা বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৬৯ ভাগ। মুসলিম শিশুদের ‘বোমারু’ অথবা ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যা দেয়া হয়। তাদেরকে ঘন ঘন এমন গালি শুনতে হয়। উপরন্ত ২০১০ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ক্ষমতায় আসা কনজার্ভেটিভ সরকার ইসলামবিদ্বেষ বা ইসলামভীতি মোকাবিলা করতে পারতো। তারা কার্যত মূলধারার মুসলিম সংগঠনগুলোকে বয়কট করেছে। এর পরিবর্তে একটি ক্ষুদ্র অংশের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেছে, মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে যাদের বিশ্বাসযোগ্যতায় ঘাটতি আছে। আমরা যখন মুসলিমদেরকে সমানভাবে দেখবো তখনই চূড়ান্তভাবে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
(লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn