নিজস্ব প্রতিবেদক।।

সিলেটে আলোচিত খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলার বদরুলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী আবদুল কুদ্দুস। তবে বিবাদী বদরুল ও তার আইনজীবীরা মামলার রায়ে ন্যায়বিচার হয়নি বলে দাবি করেছেন। বুধবার দুপুরে রায় ঘোষণার পর আদালত থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যারয় ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সহ-সম্পাদক বদরুল আলম চিৎকার করে স্লোগান দিয়ে বলতে থাকেন, ‘জন্মেছি এই দেশে, মরব এই দেশে। আমার ওপর অবিচার করা হয়েছে। জয় বাংলা।’

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বদরুলের আইনজীবী সাজ্জাদুর রহমান এ রায়কে ‘আবেগপ্রবণ রায়’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘আদালত আবেগপ্রবণ হয়ে এই রায় দিয়েছেন। আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আশা করছি, সেখানে ন্যায়বিচার পাব।’ ঘটনার দিন বদরুল নেশাগ্রস্ত ছিল উল্লেখ করে তার খালাসের দাবি জানিয়েছিলেন সাজ্জাদুর রহমান।

এদিকে মামলার বাদী খাদিজা আক্তার নার্গিসের চাচা আবদুল কুদ্দুস রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এ রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘সকলের সহযোগিতায় ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ সুগম হয়েছে।’

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি একেএম সামিউল ইসলাম বলেন, ‘এ রায় ঐতিহাসিক। ৩২৬ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার সর্ব্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, আর যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে তার জন্য এ রায় দৃষ্টান্তমূলক হিসেবে থাকবে।’

গত বছরের ৩ অক্টোবর সিলেট এমসি কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার পর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম কুপিয়ে আহত করে খাদিজাকে। ঘটনাস্থল থেকে জনতা ও এমসি কলেজ শিক্ষার্থীরা বদরুল আলমকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন।

বদরুলের চাপাতির আঘাতে খাদিজার মাথার খুলি ভেদ করে মস্তিষ্কও জখম হয়। খাদিজাকে কোপানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। হামলার পর প্রথমে খাদিজাকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে ও পরে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৪ অক্টোবর বিকেলে অস্ত্রোপচার করে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় তাকে। পরে ১৩ অক্টোবর তার লাইফ সাপোর্ট খোলার পর ‘মাসল চেইন’ কেটে যাওয়া তার ডান হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়। ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তিন দফা অস্ত্রোপচারের পর শরীরের বাঁ পাশ স্বাভাবিক সাড়া না দেওয়ায় চিকিৎসার জন্য স্কয়ার থেকে সাভারের সিআরপিতে পাঠানো হয়। সিআরপিতে তিন মাসের চিকিৎসা শেষে ২৪ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ফেরেন কলেজছাত্রী খাদিজা।

ঘটনার পরদিন খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস বাদী হয়ে দণ্ডবিধির ৩০৭, ৩২৪ ও ৩২৬ ধারায় শাহপরাণ থানায় বদরুলকে একমাত্র আসামি করে মামলা করেন। ওইদিনই বদরুলকে বহিষ্কার করে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বদরুলের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকে ও খাদিজা সিলেট সদর উপজেলার আউশা গ্রামের মাসুক মিয়ার মেয়ে।

গত বছরের ৮ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগরীর শাহপরাণ থানার এসআই হারুনুর রশীদ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ১৫ নভেম্বর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। ২৯ নভেম্বর আদালত বদরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn