প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাস দমনে অবশ্যই অর্থ এবং অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। সন্ত্রাসীদের কোনো ভৌগোলিক সীমা নেই, ধর্ম নেই। সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ডের কমান্ডার এডমিরাল হেরি বি হ্যারিস (জুনিয়র) গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের সশস্ত্রবাহিনী বিভাগে (এএফডি) তার অফিসে সৌজন্য সাক্ষাত্কালে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, এডমিরাল হ্যারিস এই অঞ্চলে তাদের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কার্যক্রম নিয়ে   আলোচনা করেন এবং এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তথ্য বিনিময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনা বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার লোকদের সঙ্গে ভিডিওকনফারেন্সের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের হুমকি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তোলার জন্য সরকারের পদক্ষেপের বিষয় এডমিরাল হ্যারিসকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, এই উদ্যোগে অত্যন্ত ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে এবং জনগণ সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, যেখানে বিভিন্ন ধর্ম বিশ্বাসের লোকরা একসঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করছে। তিনি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের পরে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর সহায়তার কথা স্মরণ করেন।জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদানের প্রশংসা করে এডমিরাল হ্যারিস বলেছেন, গোটা বিশ্ব বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের নিবেদিত সেবায় বিস্মিত। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র এবং পাশাপাশি দুই দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক বিরাজমান। এক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা জোরদারের সুযোগ রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সেনা সদস্যদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের সাফল্য বিবেচনার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মাঠ পর্যায়ে সাফল্য এবং প্রশিক্ষণে দক্ষতাই সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড হওয়া উচিত। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব ভবিষ্যতে জাতির উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা চিন্তা করে এবং গণতন্ত্রকে সুসংহতকরণে দক্ষ এমন দেশ প্রেমিক কর্মকর্তাদের হাতে থাকা উচিত। গতকাল রবিবার ঢাকা সেনানিবাসস্থ সেনা সদর দপ্তরে আর্মি সিলেকশন বোর্ড-২০১৭’র বৈঠকে তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি যে, জাতির উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাবে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অগ্রযাত্রায় তাদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। কাজেই এ কথা মাথায় রেখেই ভবিষ্যতে দক্ষ এবং দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাদের কাছেই নেতৃত্বের দায়িত্ব অর্পণ করা উচিত।’ প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের নেতৃত্ব গ্রহণে ক্ষেত্রে চারটি বিশেষ গুণ থাকতে হবে। সেগুলো হচ্ছে-একজন কমান্ডার, কর্মকর্তা এবং প্রশিক্ষক হওয়ার জন্য প্রথমত, সেনা কর্মকর্তাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস থাকতে হবে। দ্বিত্বীয়ত, তাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। দেশ ও সমাজের সেবার মানসিকতা এবং উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। তৃতীয়ত, তাদের মাঠ পর্যায়ের সাফল্য থাকতে হবে এবং চতুর্থত, তাদের অবশ্যই নেতৃত্বের যোগ্যতা, পেশাগত এক্সিলেন্স, নিয়মানুবর্তিতা, সততা এবং নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর সিলেকশন বোর্ডের সদস্যদের প্রতি তার দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস থাকার উল্লেখ করে বলেন, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন-সিলেকশন বোর্ডের সদস্যরা সকল ব্যক্তিগত পছন্দ, অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আস্থাশীল, দক্ষ এবং দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাদেরই পদোন্নতির জন্য নির্বাচন করবেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনা প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহম্মদ শফিউল হক, মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, প্রতিরক্ষা সচিব আখতার হোসেন ভূইয়া এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।

সেনা সদস্যদের জাতীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এ ধরনের কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেনাবাহিনীর সদস্যরা যেভাবে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য ও সহমর্মিতা প্রদর্শন করেছে তা জনগণের প্রভূত প্রশংসা ও বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করেছে। সেনাসদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাঙ্গামাটিতে উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালীন দুইজন সেনা কর্মকর্তাসহ পাঁচজন সহকর্মীকে হারানোর ব্যথা নিয়ে রোজা রেখে আর্তমানবতার সেবায় আপনাদের এই আত্মত্যাগ একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমি সেনাবাহিনীর সদস্যদের আত্মত্যাগকে গভীর সমবেদনার সাথে স্মরণ করছি।

সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ও জঙ্গি তত্পরতা দমনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ও সিলেটের আতিয়া মহলে সেনাবাহিনীর কমান্ডো ইউনিটের জঙ্গিবিরোধী অভিযান দেশে ও বিদেশে সেনাবাহিনীর উন্নত প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ৭ দশমিক ২ শতাংশ জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ তার সরকারের নেতৃত্বে দেশের সুষম আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের একটি খণ্ডচিত্রও তুলে ধরে বলেন, তার সরকারের এই মেয়াদেই একইসঙ্গে মুদ্রাস্ফীতি দুই অংকের সংখ্যা থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ফলে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৭২ বছরে উন্নীত হয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn