সিলেটের বন্ধ হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলছে
মো.এনামুল কবীর:-
সিলেটের বন্যা পরিস্তিতির উন্নতি হচ্ছে। পানি নামতে শুরু করেছে। সেই সাথে খুলতে শুরু করেছে বন্ধ হয়ে যাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে ১৮৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবির্ক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কচিকাঁচার কিচির মিচির আর দৌড়াদৌড়িতে মুখর হয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রিয় প্রাঙ্গণগুলো। চলছে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার তোড়জোড়ও। পূর্ব নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলা ছাড়া অন্যসব উপজেলায় আগামী ৬ আগস্ট এ পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। আর এ দুটি উপজেলায় তা শুরু হবে ১৬ বা ১৯ আগস্ট। তবে প্রায় ১ মাস বন্ধ থাকায় সিলেবাস সম্পন্ন না করেই পরীক্ষার টেবিলে বসতে হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের।
এবারের বন্যায় সিলেটের ৯ উপজেলার মোট ২০৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৩৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ ও আঙ্গিনায় পানি উঠে যাওয়া, কোথাও কোথাও রাস্তাঘাট হাঁটু ও কোমর পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে স্কুল বন্ধ রাখতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিদ্যার্জনে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসে। সেই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠার কোন সুযোগ না দিয়ে তাদের পরীক্ষার মুখোমুখী বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলা ব্যতিত অন্যসব সব উপজেলায় ৬ আগস্ট থেকে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি স্কুল বন্ধ রাখতে হয়েছে বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলায়। এ দুই উপজেলায় মোট ৯৬টি প্রাথমিক বদ্যালয়ের সাবির্ক কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়েছিলো।
বুধবার রাতে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ সিংহ জানান, এ উপজেলার বন্ধ হওয়া স্কুলগুলো খুলতে শুরু করেছে। তবে এখনও ২০টি বিদ্যালয় বন্ধ আছে। পানি নামছে। আশা করি খুব তাড়তাড়ি সেগুলোও খুলবে। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা গ্রহন প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘আগস্টের ১৬ বা ১৯ তারিখ আমরা পরীক্ষা শুরু করবো।’ ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, ‘এ উপজেলার বন্ধ হওয়া ৫১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সবগুলোই খুলেছে। ক্লাস শুরু হয়েছে তবে উপস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। রাস্তাঘাটে এখনও অনেক পানি।’ উপস্থিতি বৃদ্ধির ব্যাপারে অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, ‘এ উপজেলায় মাত্র একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া বাকী সবগুলোই (৩৬টি) খুলেছে। যথারীতি ক্লাস শুরু হয়েছে। যেটি বন্ধ আছে, সেটিও দুয়েকদিনের মধ্যে খুলে যাবে।’ আগস্টের প্রথম সপ্তাহের শেষের দিকেই বিয়ানীবাজার উপজেলায় দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা শুরু হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
গোলাপগঞ্জ উপজেলায় বন্ধ হওয়া প্রথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিলো ৪৩টি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন জানিয়েছেন, ‘এ উপজেলার বন্ধ হওয়া সবগুলো স্কুলই খুলেছে।’ তবে বাচ্চাদের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার তারিখ সম্পর্কে তার তেমন কোন ধারনা নেই বলেই কথাবার্তায় মনে হলো। এছাড়া ফেঞ্চুগঞ্জের বন্ধ হওয়া ৯টি, জকিগঞ্জের ৮টি, দক্ষিণ সুরমার ১১টি ও জৈন্তাপুর উপজেলার ১টি স্কুল বন্যার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছিল। এই স্কুলগুলোতেও যথারীতি পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দ্রুত পরীক্ষার টেবিলে বসিয়ে দেওয়া হলেও তাদের প্রস্তুতির ব্যাপারে তেমন কোন উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। প্রায় মাস খানেক বন্ধ থাকায় তাদের সিলেবাস অপূর্ণই থাকছে। বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ সিংহ বলেন, ‘ও হয়ে যাবে। একটু বেশি বেশি ক্লাস নিয়ে সেটা করে দেওয়া হবে।’