২ বিচারপতির সাক্ষর জাল: আসামিদের গ্রেফতার ও জালিয়াতি তদন্তের নির্দেশ
হত্যা মামলায় হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে আগাম জামিন চেয়েছিলেন পাঁচ আসামি। জামিন না দেয়ায় আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেয় আদালত। কিন্তু সেই জামিন না মঞ্জুরের আদেশ আট সপ্তাহের আগাম জামিনে রূপান্তরিত হয়েছে! আর ওই আদেশ তৈরী করা হয়েছে হাইকোর্টের দুই বিচারপতির সাক্ষর জাল করে। ভয়াবহ এই জালিয়াতির ঘটনা নজরে আসার পর পাঁচ আসামিকে দ্রুত গ্রেফতারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে উচ্চ আদালতের নথি জালিয়াতির ঘটনায় কারা জড়িত তা তদন্ত করে বের করতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত ৬ মার্চ বগুড়ার শিবগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার নম্বর-৭। জি.আর নম্বর-৬৭/১৭। ওই মামলায় আসামি করা হয় ২৩ জনকে। গত ৮ জুন মামলার আসামি শিবগঞ্জ থানার দোবিলা গ্রামের মো. তৈয়ব আলী, বিহার পূর্বপাড়া গ্রামের মনতানজার রহমান, বিহার সোনাপাড়া গ্রামের মিনহাজ, রয়নগর কাজীপাড়া গ্রামের মো. সানাউল সানা ও বাসু বিহার গ্রামের মো. মিজান হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে আগাম জামিন চান। হত্যার মত গুরুতর অপরাধের অভিযোগ থাকায় হাইকোর্ট তাদের জামিন না মঞ্জুর করে আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেয়। এই মামলায় আসামিদের পক্ষে হাইকোর্টে আবেদনটি দাখিল করেন অ্যাডভোকেট মো. মতিউর রহমান উজ্জ্বল। জামিন নামঞ্জুরের পরেও বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সাক্ষর জাল করে প্রস্তুত করা হয় জামিন মঞ্জুরের আদেশ।
এ বিষয়ে আসামিদের আইনজীবী মতিউর রহমান উজ্জ্বল বলেন, জামিন নাকচের পর আসামিদের বলেছিলাম আপনাদেরকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। কিন্তু প্রায় দুই মাস পর রবিবার আসামিরা আমার সঙ্গে দেখা করে জামিনের আদেশের একটি কপি দেখান। এরপর তারা ওই আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি তুলে দেয়ার দাবি করে। কিন্তু আমি তাদেরকে বলি জামিন আবেদন হাইকোর্ট নাকচ করেছে। কিন্তু তারা আমার কথা বিশ্বাস করতে চাইনি। পরে আমি আমার এক জুনিয়র আইনজীবীকে সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠিয়ে জামিনের বিষয়ে খোজ নেই। তখন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা নথি পর্যালোচনা করে দেখতে পান যে, আদেশের যে কপি আসামিরা নিয়ে এসেছেন তাতে যে বিবিধ মামলার নাম্বার উল্লেখ করা হয়েছে সেটি বগুড়ার নয়, কুমিল্লার একটি মামলার। সেখানে একজন আসামির নিয়মিত জামিনের বিষয়ে আদেশ দেয়া হয়েছে। কোনো আগাম জামিনের আবেদন ছিলো না। এরপর ওইদিনই আমি বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে এনেছিলাম। আজ পুরো ঘটনা তুলে ধরার পর হাইকোর্ট আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়ে উপরোক্ত আদেশ দেয়। এ ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বরাবর একটি অভিযোগও দাখিল করা হয়েছে।
হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ বলেন, হাইকোর্ট আসামিদের জামিন দেয়নি। ওইদিন জামিন না মঞ্জুর করে আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দিয়েছিলো। জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ায় হাইকোর্ট অভিযুক্ত আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে ঘটনা তদন্তের জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।