ছাতকে বিল-হাওরে কমেছে মাছ : দুঃশ্চিন্তা বেড়েছে জেলেদের
ছাতক উপজেলার বিল-হাওরে কমেছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। প্রতি বছর জেলেদের জালে নানা প্রজাতির মাছ জেলেদের জালে আটকা পড়লেও এবারের চিত্রটা ভিন্ন। সারাদিনে পানিতে জাল ফেলে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে দুই তিনশ’ টাকার মাছ ধরতে পারছেন না স্থানীয় জেলেরো। ছাতকের নাইন্দার হাওরের জেলে সমুজ আলী ব্যথিত কণ্ঠে এসব কথাই বললেন। গত মাসে সপ্তাহব্যাপী ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সরকারিভাবে মৎস্য সপ্তাহ পালন করা হয়েছে র্যালি, আলোচনা সভা করে। মৎস্য সপ্তাহ পালন উপলক্ষে উপজেলা পরিষদের সরকারি পুকুরে কিছু মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে। অথচ চলতি বছরে এখন পর্যন্ত কোন বিল-হাওরেই সরকারি ভাবে একটি মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়নি।
গত এপ্রিল মাসে আগাম পাহাড়ি ঢলে বোরো ফসলডুবির পর বিষাক্ত অ্যামেনিয়া গ্যাসের কারণে পুরো সুনামগঞ্জ জেলা জুড়ে মাছের মড়ক দেখা দেয়। ফলে বিল, হাওর, খাল নদীতে অনেক মাছ মরে ভেসে উঠে। আর সে মাছের সংকট এখনও কাঠেনি। দেখার হাওরের ছাতক অংশের জেলে কোরবান আলী বলেন- “বোরো ধান নষ্টর ফর ভাবছিলাম মাছ মাইরা বছরটা যাইবো। ইবার আমরার কখাল খারাপ, মনে খরছিলাম নয়া পানি অইলে মাছ ধরা পড়বো জালে। কিন্তু সারা দিন জাল বাইয়া বড় মাছ পাই না, যা পাই সব ছোট মাছ। টেংরা, পুটি, খইয়া, মলা, বাইম, চান্দা, রানী, বেড়া মাছ জালে ধরা পড়ছে। রুই, কাতলা, বড় বোয়াল, মিড়কা ও ঘইন্না মাছের দেখা মিলছে না। বিল-হাওরের দেশী প্রজাতির মাছ এখন বাজারে খুব কমই মিলছে। বাজারে এখন পুকুরের চাষের মাছই বিক্রেতারা হাওরের মাছ বলে বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে।”
জেলেদের আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বড় কষ্টে জীবন চলছে জেলেদের। যারা এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন, তাদের সময়মত কিস্তি পরিষোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেকে হাওর এলাকা ছেড়ে কাজের সন্ধানে বিভাগীয় শহর সিলেট ও রাজধানী ঢাকা চলে গেছেন। উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের হিসেব অনুযায়ী সরকারি নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৭ হাজার ৩০৮ জন। এর মধ্যে কার্ডধারী জেলের সংখ্যা ৫ হাজার ১৪০ জন। তবে বেসরকারি হিসেবে উপজেলায় জেলের সংখ্যা ৮ হাজারের অধিক বলে জানা গেছে।
পুরো উপজেলায় মৎস্যচায়ী রয়েছেন মোট ২ হাজার ১শ’ জন। মাছের পোনা ব্যবসায়ী রয়েছেন ২৫ জন। মোট পুকুর রয়েছে ৪ হাজার ৩৪৩টি, যার আয়তন ৬২১ হেক্টর। চলতি বছরে পুরো উপজেলায় মাছের উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন। চাহিদা ৮ হাজার ৭শ’ টন। উদ্বৃত্ত দেখানো হয়েছে ৪শ’১০ টন। তবে এখানে বিল-হাওরের তুলনায় পুকুরে চাষের মাছের উৎপাদনের সংখ্যাই বেশি। ছাতক উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. খালেদ কনক বলেন- চলতি বছরে বিল-হওরের মাছের পোনা অবমুক্ত করার কোন বাজেট পাওয়া যায়নি। হাওর-বিলে অবৈধভাবে কোণা জাল, কারেন্ট জাল দিয়ে অবাধে মাছ ধরা হচ্ছে, মাছের পোনা ধ্বংস করা হচ্ছে।