বিএনপি নির্বাচনে যাবে, যাবে না
স্টেশন এখনো অনেক দূর। তবে রাজনীতি এরইমধ্যে উঠে গেছে নির্বাচনি ট্রেনে। সরব মসনদের কাণ্ডারিরা। জবাব দিচ্ছেন বিরোধীরাও। প্রধান ইস্যু একটি- বিএনপি নির্বাচনে যাবে, যাবে না। সরকারি দলের নেতারা প্রতিদিনই বলছেন, নিবন্ধন বাঁচাতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে। এবং সেটা শেখ হাসিনার অধীনেই। অন্যদিকে, বিএনপি নেতারা বলছেন, নিবন্ধন দিয়ে রাজনীতি হয় না। দলটির কোনো কোনো নেতা এও বলছেন, প্রয়োজনে কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। তবুও শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি।
দৃশ্যত ভোট নিয়ে এক ধরনের প্রচারণা এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে বিএনপির স্নায়ুর পরীক্ষাই যেন নেয়া হচ্ছে। বিএনপির নিবন্ধন আর নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা কথা বলছেন না, এমন দিন খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি দলের ভেতরে এরইমধ্যে নির্বাচনি প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে। বগুড়ার জনসভায় নৌকায় ভোট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগে ইশতেহার তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তৃণমূল পর্যায়ে কোন্দল নিরসনের। নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ব্যাপারে নেয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। বিশেষকরে এমপিদের তাগাদা দেয়া হয়েছে নির্বাচনি এলাকায় দলের মধ্যে কোনো কোন্দল যেন না থাকে তা নিশ্চিত করতে। তাদের নির্বাচনি প্রস্তুতিরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে বর্তমান সংসদের কতজন এমপি আগামী নির্বাচনে দলীয় টিকিট পান তা নিয়েও চলছে আলোচনা। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজনীতিতে নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আওয়ামী লীগের। তবুও দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, বিএনপি নির্বাচনে আসলে তাদেরকে কিছুটা হলেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। যে কারণে পুরোদমে নিজেদের প্রস্তুত করছে আওয়ামী লীগ। তাছাড়া, রাজনীতিতে কখনো কখনো হঠাৎই বদলে যায় পরিস্থিতি। এমন কিছু যেন না হয় সে ব্যাপারেও সতর্ক ক্ষমতাসীনরা।
অন্যদিকে, বিএনপি শিবিরে এখন নানা দুশ্চিন্তা। আগামী নির্বাচন প্রশ্নে দলটির কার্যক্রম এখনো আলাপ-আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা এখন পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার মামলা নিয়েই চিন্তিত রয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের দু’টি মামলার বিচার কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ দুটি মামলার রায়ের ওপর বহুলাংশে নির্ভর করছে বিএনপির রাজনীতির ভবিষ্যৎ। খালেদা জিয়াকে যদি কারাগারে যেতে হয় সেক্ষেত্রে বিএনপির রাজনীতির প্রেক্ষাপট হবে একরকম। আর তিনি যদি মুক্ত অবস্থায় থাকেন সেক্ষেত্রে বিএনপির রাজনীতির প্রেক্ষাপট হতে পারে অন্যরকম। তবে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের অনেকে মনে করেন, খালেদা জিয়ার সাজা হলেও তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে সংবিধান বা আইনে কোনো বাধা নেই। বিএনপির ভেতরেই অনেকের আশঙ্কা রয়েছে, খালেদা জিয়াকে যদি কারাগারে যেতে হয়, তবে দলটির ভেতর এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। ভাঙন তৈরির সম্ভাবনাও অনেকে নাকচ করছেন না। আলোচনা রয়েছে, ভঙ্গুর সে অংশ নির্বাচনে অংশ নিতেও পারে। তবে পরিস্থিতি যাই হোক দলীয় ঐক্য জোরদারের দিকেই মনোনিবেশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। যদিও দলটি ঘিরে বিশেষকরে তার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের ঘিরে ওঠা ধোঁয়াশা এখনো কাটেনি। এ ব্যাপারে তিনি কোনো পদক্ষেপও নেননি বা নিতে পারেননি। এই পরিস্থিতিতেও ভবিষ্যৎ নির্বাচন নিয়ে কোনো কার্যকর প্রস্তুতি নেই বিএনপিতে।
জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের গত কয়েকটি নির্বাচনে নানা চমক তৈরি করেছিলো। তবে আগামী নির্বাচনেও দলটি এমন চমক তৈরি করতে পারবে বলে তেমন কেউ মনে করেন না। তবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বসে নেই। জোট গঠনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কয়েকটি ছোট দল নিয়ে তিনি চেষ্টা করছেন নির্বাচনি জোট গঠন করার। দুঃসময় কাটানো জামায়াত ইতিমধ্যে নিবন্ধন এবং প্রতীক দুটিই হারিয়েছে। আগামী নির্বাচনে দৃশ্যত জামায়াতের কোনো ভূমিকা থাকবে না বলেই মনে হচ্ছে।
যে যাই বলুক ভোটের রাজনীতি এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে এ রাজনীতি আরো জটিল হবে সে কথা এখনই হলফ করে বলা যায়।