বন্যায় ৩৭২৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত
পিইসি-জেএসসি পরীক্ষার্থীরা বড় ক্ষতির মুখে
বন্যায় বিভিন্ন জেলার লাখ লাখ শিশুর লেখাপড়া বিঘ্নিত হয়েছে। বানভাসি অনেক শিশুর বই খাতা পানিতে ভেসে গেছে। কারওবা বই ভিজে নষ্ট হয়েছে। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষাসমাপনী এবং জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার্থীরা। এক সপ্তাহ আগে কুড়িগ্রাম, দিনাজপুরসহ উত্তরের কয়েকটি জেলার বানের পানি নেমে গেছে। কিন্তু ওইসব এলাকার লেখাপড়া শুরু হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল-মাদ্রাসা মেরামতই শুরু হয়নি। দু’মাস পর এই চারটি বড় পরীক্ষা শুরু হবে। ফলে ক্লাস শুরু না হওয়ায় দীর্ঘদিন লেখাপড়ার বাইরে থাকা এসব শিশু ও তাদের অভিভাবকরা চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন।শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের একাডেমিক পুনর্বাসনে সরকারের উদ্যোগ খুবই ধীরগতির। যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপারে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় যথেষ্ট তৎপর। কিন্তু শিক্ষার ক্ষেত্রে সে ধরনের তৎপরতা বা আন্তরিকতা দেখা যাচ্ছে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের শিগগিরই লেখাপড়ার মূল সে াতে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার শনিবার বলেন, ‘এক অঞ্চল থেকে বানের পানি নেমে আরেক অঞ্চলে বন্যা তৈরি করছে। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখনও পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এ ব্যাপারে কাজ চলছে।’ তিনি বলেন, ‘বন্যায় শিক্ষার দুই ধরনের ক্ষতি হয়েছে। একটি একাডেমিক, অপরটি অবকাঠামোগত। অবকাঠামোগত মেরামতে আমাদের পূর্ণ প্রস্তুতি আছে। একাডেমিক ক্ষতি পোষাতে যে শিশুর বই ভেসে গেছে, তাকে বই দেয়া হবে। যে ক’দিন ক্লাস বন্ধ ছিল, সে ক’দিনের ক্ষতি পোষাতে প্রয়োজনে বাড়তি ক্লাস নেয়া হবে। এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া আছে।’সরকারি হিসাব অনুযায়ী, চলমান বন্যায় এখন পর্যন্ত ৩২ জেলায় তিন হাজার ৭২৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান মেরামতে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। মাঠপর্যায় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি) এ কথা জানানো হয়েছে। তবে এই দুই দফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বন্যা শেষ না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও এর আর্থিক ক্ষতি নিরূপণের কাজ এখনও শেষ হয়নি। বন্যাকালীন কিছু জেলায় প্রাথমিক পর্যায়ে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা নেয়া যায়নি। মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল-মাদ্রাসায় অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বেশির ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষাসমাপনী (পিইসি) এবং জুনিয়র স্কুল ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেএসসি-জেডিসি) পরীক্ষার্থীরা। স্কুল বন্ধ থাকায় এসব শিক্ষার্থীর ক্লাস, অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পরীক্ষা নেয়া যায়নি।
গণসাক্ষরতা অভিযানের (ক্যাম্পে) নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘সাধারণত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পিইসি-জেএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এবার জুলাই-আগস্ট কেটে গেল বন্যার পানি নিয়ে। অনেক শিশু লেখাপড়া করতে পারেনি। কারও বই নষ্ট হয়ে গেছে। অবকাঠামোগত ক্ষতি পোষানো হয়তো সোজা, কিন্তু লেখাপড়ার ক্ষতি পোষানো কঠিন।’ তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল হয়ে গেছে। আমার মতে, একাডেমিক ক্ষতি পোষাতে শিশুদের ছুটি কিছুটা কমানো যায়। পাশাপাশি, সরকার পরীক্ষা নিয়েও ভাবতে পারে। কেননা, জোড়াতালি দিয়ে কোনোভাবে পরীক্ষা না নেয়াই ভালো।’ তিনি ঈদের ছুটির পর পুর্ণোদ্যমে লেখাপড়া শুরুর ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন।
ক্যাম্পের উপ-পরিচালক কেএম এনামুল হক বলেন, ‘বন্যায় শিশুদের লেখাপড়ার ক্ষয়ক্ষতি দেখতে আমরা কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় গিয়েছি। আমরা লক্ষ করেছি, ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন বা সড়ক মেরামতে যে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা দেয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে হিসাব চাওয়া আর পাঠানোর মধ্যে পদক্ষেপ সীমাবদ্ধ। আমরা আশা করব, সরকার ঈদের ছুটির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান মেরামত করবে। যাতে ঈদের ছুটির পর ক্লাস কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে শুরু করা যায়। নইলে শিশুরা বিশেষ করে পিইসি-জেএসসি পরীক্ষার্থীরা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্যায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান চলে যায় পানির নিচে। এতে কোনোটি আংশিক আবার কোনোটি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার প্রাক্কালে নদীভাঙনেও পড়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের আসবাপত্র, বই-খাতাসহ স্কুলের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক স্থানে স্কুলের মেঝে দেবে গেছে। স্কুলে ঢোকার রাস্তা নষ্ট হয়েছে। বিপরীত দিকে, ঘরবাড়ির সঙ্গে অনেক স্থানে শিশুদের বই খাতা ভেসে গেছে। সবমিলিয়ে বন্যাপ্রবণ জেলার শিশুদের লেখাপড়া বিঘিœত হয়েছে।
ডিপিই উপ-পরিচালক নুরুল আমিন জানান, বিভিন্ন জেলা থেকে দৈনিকই ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ও তালিকা আসছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বন্যাপ্রবণ এলাকায় প্রায় ২২ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ডিপিই’র একজন কর্মকর্তা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল পুনর্নির্মাণে এখন পর্যন্ত ২৩ কোটি টাকা লাগবে বলে প্রাথমিক হিসাবে পাওয়া গেছে। তবে পানি নেমে গেলে আসল চিত্র বেরিয়ে আসবে।
অপর দিকে মাধ্যমিক স্তরে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক হাজার ৫৫৮টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘অবকাঠামোগত ক্ষতি চিহ্নিত এবং তা মেরামতে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরকে (ইইডি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একাডেমিক ক্ষতি পোষাতে দুই ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সাধারণত প্রত্যেক জেলায় মোট চাহিদার ৫ শতাংশ বেশি বই বাফার স্টকে (আপদকালীন চাহিদা মেটাতে) বছরের শুরুতেই পাঠিয়ে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে যার বই লাগবে তাকে দেয়া হবে। যদি কোথাও বাফার স্টকের বইও নষ্ট হয়ে থাকে, তাহলে পার্শ্ববর্তী জেলা প্রয়োজনে ঢাকা থেকে পাঠানো হবে। এ ছাড়া জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করা হবে।’এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা সচিব বলেন, অবকাঠামোগত ক্ষতিপূরণে টাকার একটি হিসাব আমরা পেয়েছি, তবে তা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। এর আগে সেটি বলা ঠিক হবে না। তবে মাউশি এবং ইইডি’র দু’জন কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত মাঠপর্যায় থেকে আসা তথ্য অনুযায়ী বন্যায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২২ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে ইইডির প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা জানান, ‘আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছেলেমেয়েদের ক্লাসে বসার পরিবেশ তৈরি করে দেয়া। যেখানে ইতিমধ্যে পানি নেমে গেছে, সেখানে ছোটখাটো সংস্কার দ্রুত শুরু হবে। যদি কোথাও বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে থাকে ও দীর্ঘমেয়াদি নির্মাণকাজ প্রয়োজন পড়ে, তাহলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে দেয়া হবে। এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষা কর্মকর্তা এবং ইইডির স্থানীয় প্রকৌশলীরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করছেন।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার শনিবার বলেন, ‘এক অঞ্চল থেকে বানের পানি নেমে আরেক অঞ্চলে বন্যা তৈরি করছে। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখনও পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এ ব্যাপারে কাজ চলছে।’ তিনি বলেন, ‘বন্যায় শিক্ষার দুই ধরনের ক্ষতি হয়েছে। একটি একাডেমিক, অপরটি অবকাঠামোগত। অবকাঠামোগত মেরামতে আমাদের পূর্ণ প্রস্তুতি আছে। একাডেমিক ক্ষতি পোষাতে যে শিশুর বই ভেসে গেছে, তাকে বই দেয়া হবে। যে ক’দিন ক্লাস বন্ধ ছিল, সে ক’দিনের ক্ষতি পোষাতে প্রয়োজনে বাড়তি ক্লাস নেয়া হবে। এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া আছে।’সরকারি হিসাব অনুযায়ী, চলমান বন্যায় এখন পর্যন্ত ৩২ জেলায় তিন হাজার ৭২৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান মেরামতে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। মাঠপর্যায় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি) এ কথা জানানো হয়েছে। তবে এই দুই দফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বন্যা শেষ না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও এর আর্থিক ক্ষতি নিরূপণের কাজ এখনও শেষ হয়নি। বন্যাকালীন কিছু জেলায় প্রাথমিক পর্যায়ে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা নেয়া যায়নি। মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল-মাদ্রাসায় অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বেশির ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষাসমাপনী (পিইসি) এবং জুনিয়র স্কুল ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেএসসি-জেডিসি) পরীক্ষার্থীরা। স্কুল বন্ধ থাকায় এসব শিক্ষার্থীর ক্লাস, অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পরীক্ষা নেয়া যায়নি।
গণসাক্ষরতা অভিযানের (ক্যাম্পে) নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘সাধারণত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পিইসি-জেএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এবার জুলাই-আগস্ট কেটে গেল বন্যার পানি নিয়ে। অনেক শিশু লেখাপড়া করতে পারেনি। কারও বই নষ্ট হয়ে গেছে। অবকাঠামোগত ক্ষতি পোষানো হয়তো সোজা, কিন্তু লেখাপড়ার ক্ষতি পোষানো কঠিন।’ তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল হয়ে গেছে। আমার মতে, একাডেমিক ক্ষতি পোষাতে শিশুদের ছুটি কিছুটা কমানো যায়। পাশাপাশি, সরকার পরীক্ষা নিয়েও ভাবতে পারে। কেননা, জোড়াতালি দিয়ে কোনোভাবে পরীক্ষা না নেয়াই ভালো।’ তিনি ঈদের ছুটির পর পুর্ণোদ্যমে লেখাপড়া শুরুর ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন।
ক্যাম্পের উপ-পরিচালক কেএম এনামুল হক বলেন, ‘বন্যায় শিশুদের লেখাপড়ার ক্ষয়ক্ষতি দেখতে আমরা কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় গিয়েছি। আমরা লক্ষ করেছি, ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন বা সড়ক মেরামতে যে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা দেয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে হিসাব চাওয়া আর পাঠানোর মধ্যে পদক্ষেপ সীমাবদ্ধ। আমরা আশা করব, সরকার ঈদের ছুটির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান মেরামত করবে। যাতে ঈদের ছুটির পর ক্লাস কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে শুরু করা যায়। নইলে শিশুরা বিশেষ করে পিইসি-জেএসসি পরীক্ষার্থীরা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্যায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান চলে যায় পানির নিচে। এতে কোনোটি আংশিক আবার কোনোটি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার প্রাক্কালে নদীভাঙনেও পড়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের আসবাপত্র, বই-খাতাসহ স্কুলের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক স্থানে স্কুলের মেঝে দেবে গেছে। স্কুলে ঢোকার রাস্তা নষ্ট হয়েছে। বিপরীত দিকে, ঘরবাড়ির সঙ্গে অনেক স্থানে শিশুদের বই খাতা ভেসে গেছে। সবমিলিয়ে বন্যাপ্রবণ জেলার শিশুদের লেখাপড়া বিঘিœত হয়েছে।
ডিপিই উপ-পরিচালক নুরুল আমিন জানান, বিভিন্ন জেলা থেকে দৈনিকই ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ও তালিকা আসছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বন্যাপ্রবণ এলাকায় প্রায় ২২ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ডিপিই’র একজন কর্মকর্তা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল পুনর্নির্মাণে এখন পর্যন্ত ২৩ কোটি টাকা লাগবে বলে প্রাথমিক হিসাবে পাওয়া গেছে। তবে পানি নেমে গেলে আসল চিত্র বেরিয়ে আসবে।
অপর দিকে মাধ্যমিক স্তরে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক হাজার ৫৫৮টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘অবকাঠামোগত ক্ষতি চিহ্নিত এবং তা মেরামতে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরকে (ইইডি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একাডেমিক ক্ষতি পোষাতে দুই ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সাধারণত প্রত্যেক জেলায় মোট চাহিদার ৫ শতাংশ বেশি বই বাফার স্টকে (আপদকালীন চাহিদা মেটাতে) বছরের শুরুতেই পাঠিয়ে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে যার বই লাগবে তাকে দেয়া হবে। যদি কোথাও বাফার স্টকের বইও নষ্ট হয়ে থাকে, তাহলে পার্শ্ববর্তী জেলা প্রয়োজনে ঢাকা থেকে পাঠানো হবে। এ ছাড়া জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করা হবে।’এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা সচিব বলেন, অবকাঠামোগত ক্ষতিপূরণে টাকার একটি হিসাব আমরা পেয়েছি, তবে তা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। এর আগে সেটি বলা ঠিক হবে না। তবে মাউশি এবং ইইডি’র দু’জন কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত মাঠপর্যায় থেকে আসা তথ্য অনুযায়ী বন্যায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২২ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে ইইডির প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা জানান, ‘আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছেলেমেয়েদের ক্লাসে বসার পরিবেশ তৈরি করে দেয়া। যেখানে ইতিমধ্যে পানি নেমে গেছে, সেখানে ছোটখাটো সংস্কার দ্রুত শুরু হবে। যদি কোথাও বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে থাকে ও দীর্ঘমেয়াদি নির্মাণকাজ প্রয়োজন পড়ে, তাহলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে দেয়া হবে। এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষা কর্মকর্তা এবং ইইডির স্থানীয় প্রকৌশলীরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করছেন।’