সরকারে’র আশ্বাস ও উদাসীনতার গল্প
হাসান হামিদ-
আমার সামান্য দাবী পুড়ে যাচ্ছে পেটের প্রান্তর-
ভাত চাই- এই চাওয়া সরাসরি- ঠান্ডা বা গরম
সরু বা দারুণ মোটা রেশনের লাল চাল হ’লে
কোনো ক্ষতি নেই- মাটির শানকি ভর্তি ভাত চাই
দু’বেলা দু’মুঠো পেলে ছেড়ে দেবো অন্য-সব দাবী।
(কবি রফিক আজাদ)
পত্রিকার পাতাজুড়ে যখন এক বাটি খিচুরি নিতে আসা মানুষের কোমর পানিতে সারাদিন ধরে দাঁড়িয়ে থাকার ছবি ছাপা হয় ঠিক সেসময় আমাদের খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সাহেব বলছেন, দেশে কোন খাদ্যসংকট নেই এবং পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে। গত ১৬ আগস্ট ২০১৭ বুধবার রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় একটি অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাহেবও বলেছেন, দেশে কোনো ধরনের খাদ্য সংকট নেই। এমনকি আগামীতেও খাদ্য সংকট হবে না। বোঝাই যাচ্ছে আমাদের রাজনীতির বড় মানুষগুলো বলছেন খাদ্য বিষয়ে বিন্দু সমস্যা এদেশে নেই। তাহলে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, মানুষকে তা ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছে না কেনো? আর যদি না দেওয়া হয়, তবে এই মজুদ কাদের জন্য, কোন সময়ের জন্য? আমরা কার কথা বিশ্বাস করবো; ত্রাণ নিতে আসা হাহাকার করা মানুষের দীর্ঘ লাইনের ছবি নাকি মন্ত্রী মহোদয়গণের আশ্বাস?
আমার এসব দেখে ও শুনে ফরাসি বিপ্লবের সেই ঘটনা মনে পড়ে যায়। বিপ্লবের প্রাক্কালে দুর্ভিক্ষের সময় ফরাসি চাষিরা যখন ক্ষুধায় মরছিল, রাজা ষোড়শ লুইকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছিল “ওরা রুটি খেতে পাচ্ছে না ” শুনে তখন নাকি রানি মেরি আঁতোয়াঁনেৎ বলে উঠেছিলেন, ‘কিল মঁজেঁ দ্য লা ব্রিওখ’ মানে হলো তাহলে ওরা কেক খাক। রুটি নাই তো কী! আমাদের মাননীয় মন্ত্রী হয়তো বলেও বসতে পারেন, এতো ত্রাণ নেওয়ার দরকার কী!
আমি একটু আগে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর ক্রিস্টা র্যাডার-এর বক্তব্য পড়ছিলাম। সেই বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, বন্যার ধকল কাটিয়ে ওঠা বহু মানুষ সব কিছু হারিয়েছেন। তারা বাড়িঘর, সহায় সম্পদ, ফসল সব হারিয়েছেন। এসব মানুষের এখনই খাদ্যের প্রয়োজন। দীর্ঘ মেয়াদের তাদের জন্য পূর্ণাঙ্গ খাদ্য নিরাপত্তা ভয়াবহ এক সংকটের মুখে। লন্ডন থেকে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এটা খুব সাধারণ কথা যে, মারাত্মক বন্যার পরে ভয়াবহ খাদ্যাভাবে পড়ার (ডিভাস্টেটিং হাঙ্গার) ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। বন্যায় বিপুল পরিমাণ কৃষিজমির ফসল ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে বন্যার্তদের কাছে খাদ্য সরবরাহ দেয়াটাও ঝুঁকিতে পড়েছে। গত বুধবার বাংলাদেশের বন্যা ও বন্যার্ত মানুষদের বিষয়ে এ কথা বলেছে জাতিসংঘ।
ডব্লিউএফপি বলেছে, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বহু পরিবার এখনও অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এখনও বাড়ি ফেরার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় নি। এসব মানুষ তীব্র খাদ্যাভাব ও দারিদ্র্যের মুখে পড়ার বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে। রয়টার্স লিখেছে, মৌসুমী বৃষ্টিপাতকে দক্ষিণ এশিয়ার কৃষকদের জীবনদায়ক হিসেবে দেখা হয়। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতি বছর এমন বৃষ্টিপাত হয়। এতে অনেক প্রাণহানী হয়। সম্পদের ক্ষতি হয়। কিন্তু অনেক বছরের মধ্যে এবারের বন্যা সবচেয়ে ভয়াবহ বলে দাবি করেছেন কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, কমপক্ষে ১০ হাজার হেক্টর (২৪ হাজার ৭১১ একর) জমির ফসল পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে আরো ৬ লাখ হেক্টর (১৪ লাখ ৮২ হাজার ৬৩২ একর) জমির ফসল। খাদ্য সহ দরকারি জিনিসপত্র কিনতে তিন মাসের জন্য এক লাখ বয়স্ক, অচল মানুষ, পুরুষছাড়া পরিবারকে চার হাজার টাকা করে দিচ্ছে ডব্লিউএফপি।
১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার বছর আমার জন্ম হয়। তারপর এলো ১৯৯৮ সালের বন্যা। তখন আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি। আর ২০০৪ সালের বন্যার সময় আমি সদ্য এসএসসি পাস করে সিলেট এমসি কলেজে ভর্তি হয়েছি। সেই বন্যায় আমাদের অনেক গাছ আর গ্রামের অনেকের বাড়িঘর ভাঙতে দেখেছি। বিগত সব বন্যাকে ছাড়িয়ে গেছে এবারের বন্যা। সেটারও কার্যকারণ আছে। অকালবন্যায় হাওরাঞ্চল ভেসে গেছে। ফসল হারিয়ে তারা দিশাহারা। পথে বসেছে লাখ লাখ মানুষ। হঠাৎ এমন অকালবন্যা কেন হলো? ব্যাপারটা এরই মধ্যে দেশবাসী জেনে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতি এই অকাল বন্যার বড় কারণ। হাওরের উজানে স্থায়ী বাঁধের টাকা বরাদ্দ হওয়ার পরও সময়মতো বাঁধ নির্মাণ না করায় পাহাড়ি ঢলে মুহূর্তের মধ্যে হাওরের ফসল ডুবিয়ে দিয়ে সবাইকে সর্বস্বান্ত করে দেয়। সরকার অবশ্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেপ্তার করেছে। কয়েকজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। সর্বনাশ হওয়ার পর কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে কী লাভ?
আমি সুনামগঞ্জ জেলার হাওর পাড়ের গ্রাম আবিদনগরে জন্মেছি। আমি পুরো শৈশব গ্রামে কাটিয়েছি এবং এ কারণেই বন্যা দেখে অভ্যস্ত। গ্রামীণজীবনে সবচেয়ে মজার মাস ছিল আষাঢ়-শ্রাবণ। তখন ফসল কাটা শেষ। আষাঢ়ের শেষে বিলে এসে বর্ষার পানি ঢুকত। তারপর সেই পানি বাড়তে বাড়তে খাল-নালা দিয়ে গ্রামের দিকে আসতে থাকত। আমরা অনেক সময় নালায় বাঁধ দিয়ে কিছুদিন পানি গ্রামে আসতে বাধা দিতাম। তারপর পানি ফুলে-ফেঁপে উঠলে আমাদেরই কোনো দুষ্টু বন্ধু সেই বাঁধ কেটে মজা করত। প্রবলবেগে পানি গ্রামের খাল-নালায় ঢুকত। আমরা বর্ষার নতুন পানিতে মাছ ধরার আনন্দে মেতে উঠতাম। আমরা স্কুল কামাই করে পানিতে ঝাপুর খেলতাম। পানির স্রোতে ভেসে যেতাম। আবার উজানে এসে নিজেকে স্রোতে ছেড়ে দিতাম। তখন ছিল স্বাভাবিক বর্ষা। বলা যায়, বর্ষার সময় গ্রামীণজীবনে ছিল সবচেয়ে আনন্দের সময়। বর্ষায় ছইওয়ালা নৌকায় চড়ে আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার বেশ চল ছিল। ছোটবেলায় মা-খালাদের সঙ্গে ছইওয়ালা নৌকায় চড়ে মামার বাড়ি যাওয়ার আনন্দ ছিল অপরিসীম। অধিকাংশ বিয়ের সময় নির্ধারণ করা হতো এই বর্ষাকালে। সব বরযাত্রী একসঙ্গে নৌকায় চড়ে মাস্তুলের মাথায় মাইকের হর্ন বেঁধে গান শুনতে শুনতে কনের বাড়িতে যেতাম। সে আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। সে সময় বিয়ের যাত্রায় মাইক ছিল অপরিহার্য বিষয়। বিয়ে হবে আর মাইক থাকবে না, সেটা কল্পনাই করা যেত না। বর্ষার কারণে অনেক দূর থেকে মাইকের আওয়াজ শোনা যেত। সেই স্বাভাবিক বর্ষা আমরা অস্বাভাবিক করে ফেললাম। আমরা মানে আমাদের পণ্ডিতরা—বিশেষ করে বন্যা বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের দর্শন আমাদের আনন্দময় জীবন বিষাদে ভরে তুলল। দেশটাকে নিয়ে গেল সর্বনাশের চূড়ায়। যে খাল দিয়ে আগে নৌকা চলত, সেই খাল ভরাট করে পাকা রাস্তা হয়েছে। সেই খাল দিয়ে এখন রিকশা-ভ্যান চলে। যদি সব ক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থা হয়, তাহলে বর্ষাকে দায়ী করা যায় কি?
আজকের জীবনবিনাশী বর্ষা কিন্তু প্রকৃতিসৃষ্ট নয়; মানবসৃষ্ট। ভৌগোলিক কারণে আমাদের দেশটার খানিক বেকায়দা স্থানে অবস্থান। আমাদের উত্তরে পাহাড়, দক্ষিণে সাগর। আমাদের সব নদীর উৎসমুখ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পাহাড় থেকে। তারা আমাদের দেশে প্রবাহিত সব নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে আমাদের নদীগুলোকে মেরে ফেলছে। আবার বর্ষায় তাদের সুবিধার জন্য সব বাঁধ খুলে দিলে আমাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে যাচ্ছে। যে তিস্তা নদী নিয়ে এত কথা, এত লেখালেখি, সেই তিস্তা নদীতে এখন পানি বিপত্সীমার ওপরে। অথচ শুকনো মৌসুমে তিস্তা শুকিয়ে আমাদের চাষাবাদে ভয়ংকর সংকট তৈরি করে। আর আমরা তিস্তার পানির জন্য হা-পিত্যেশ করি। বৈদেশিক রাজনীতির খেলা দেখি। নানা মুনির নানা মত শুনি। টক শোতে অনেক চাপাবাজি গিলি। সবই আমাদের ভৌগোলিক অবস্থার কারণে। এই ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে নানা দুর্যোগ আমাদের নিত্যসঙ্গী। তার ওপর যদি মানবসৃষ্ট বিপর্যয় নেমে আসে, তাহলে দেশবাসীর উপায় কী?
আমার জানতে ইচ্ছে করে, যে বাঁধগুলো ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম ভেসে গেল, রাতারাতি মানুষ পানিতে ভাসতে শুরু করল—সেই বাঁধগুলোর বর্তমান কী হাল, তার ধারণক্ষমতা কী অবস্থায় আছে—সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কি কোনো খোঁজখবর নিয়েছে? আমাদের মাননীয় পানিমন্ত্রী বলে দিলেন, ‘ইঁদুরের গর্ত দিয়ে পানি ঢুকে বাঁধ ভেঙে গেছে!’ তাহলে মাননীয় মন্ত্রী সাহেব বর্ষার আগে ইঁদুরের গর্তগুলো মেরামত করা হলো না কেন? তখন আপনি কোথায় ছিলেন? আপনার ইঞ্জিনিয়াররা কোথায় ছিলেন? তাঁদের কাজ কী? অনেক আগে এই বিভাগটির নাম দেওয়া হয়েছে শ্বেতহস্তী। শ্বেতহস্তী পাহাড় পরিমাণ খাদ্য ভক্ষণ করে, কিন্তু তাকে দিয়ে আর কিছু হয় না।
আজ এদেশের লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। তাদের ঘুমানোর জায়গা নেই। বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি নেই। খাদ্য নেই। পর্যাপ্ত ত্রাণ নেই। মনে রাখতে হবে, দেশের মানুষ ভীষণ কষ্টে আছে। এই কথাটা সরকারি দলের নেতাকর্মী, এমপি-মন্ত্রীদের বেশি করে মনে রাখা দরকার। আর শুরু হয়েছে ত্রাণ নিয়ে নানা রাজনীতি। প্রশাসনের দাবি, পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে। কিন্তু দুর্গতরা বলেছেন, খাদ্য সংকটে ভুগছেন তারা। আমি ব্যাক্তিগতভাবে খবর নিয়ে জেনেছে, সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ত্রাণের সংকট আছে বানভাসি এলাকায়। আমাদের দেশে এমনিতে ৪০-৪৫ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়, তার ওপর বর্তমান প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এতে খাদ্যশস্য আমদানির পরিমাণ যথেষ্ট বাড়বে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কাগজে দেখলাম ১৭-১৮ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করতে হবে। এর অর্থ এটা অতিরিক্ত বোঝা, অতিরিক্ত খরচ সরকারের জন্য। এমনিতেই ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব ঘাটতি হবে বিপুল। তার ওপর এই আকস্মিক বোঝা অর্থমন্ত্রীর ঘুমকে হারাম করতে পারে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেখছি, নাগরিকদের একটি অংশ বন্যার্তদের জন্য মানবিক আবেদন নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে, হাত পাতছে, বলা যায় রীতিমত ভিক্ষায় নেমে পড়েছে। অথচ ত্রাণ মন্ত্রণালয় বলছে পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে, খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে পর্যাপ্ত খাদ্য আছে, অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে সংকট সাময়িক। তাহলে তো দেশের এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ নাগরিকদের ত্রাণ সংগ্রহে নামার প্রয়োজন পড়ার কথা না। সরকারি ত্রাণ বন্যাকবলিত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সর্বোচ্চ তারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে পারেন। তাও যদি সরকার সেটা প্রয়োজন মনে করে। এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে এর প্রয়োজন নেই। কারণ আমাদের ক্যান্টনমেন্টগুলোতে এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় দক্ষ এবং উপযুক্ত পর্যাপ্ত লোকবল রিজার্ভ আছে। রাষ্ট্র এদের পিছনে প্রচুর টাকা খরচ করছে। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়, তারপরও বন্যার্তদের জন্য ভিক্ষায় নামতে হচ্ছে কেন আমাদের?
আসলে সরকার যতোটা বোকা ভাবছে সবাইকে, ততোটা বোকা কিন্তু সবাই না। ভিক্ষায় নামতে হচ্ছে কারণ, গণমাধ্যম যতটুকু দেখাচ্ছে তাতে আমরা দেখতে পাচ্ছি, মানুষ বানের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে, আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় ভেলা উল্টেপড়ে মারা যাচ্ছে, সাপে কাটায় মারা যাচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্র তাদের উদ্ধার করতে যাচ্ছে না। মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে আছে কিন্তু রাষ্ট্র তাদের খাবার পৌঁছে দিচ্ছে না। মানুষ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে কিন্তু চিকিৎসা পাচ্ছে না। মানুষের ঘরবাড়ি, ফসল, গবাদিপশু পানিতে ভেসে গেছে কিন্তু ক্ষতিপূরণে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে প্রশ্নটা তুলে মানবিক কাজ থেকে হাত গুটিয়ে বসে থাকার সুযোগ আমাদের নিঃসন্দেহে নেই। কিন্তু প্রশ্নটা তুলতে হচ্ছে, কারণ রাষ্ট্রকে আমরা ট্যাক্স দেই দায়দায়িত্ব যথাযথ পালন করবে বলে। কিন্তু আমরা দেখছি রাষ্ট্র তার দায়িত্ব মোটেই যথাযথভাবে পালন করছে না। এই মুহূর্তে রাষ্ট্রের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু বন্যা হওয়া উচিত থাকলেও তার সমস্ত মনোযোগ সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয়ে আদালতের দেওয়া একটি রায়ের উপর। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্র যখন তার বিপদগ্রস্ত নাগরিকদের জন্য যথেষ্ট কিছু করছে না তখন রাষ্ট্রকে নাগরিকরা ট্যাক্স কী যুক্তিতে দিবে সে প্রশ্ন তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমাদের সবাইকে এটা মনে রাখতে হবে, বন্যা গত বছরও হয়েছিল, এবছর হয়েছে, হয়ত আগামী বছরও হবে। কিন্তু প্রতিবছর ত্রাণ সংগ্রহের আবেগ আমাদের থাকবে না। দুর্যোগকালীন মুহূর্তে রাষ্ট্র যদি যথাযথ ভূমিকা পালন না করে, নাগরিকরা সংকট মোকাবেলায় যতই এগিয়ে আসুক তা খুব বেশি কাজে দেয় না। যাই হোক, লেখাটি শেষ করবো মাননীয় প্রধান্মন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়ে। খবরে দেখলাম, বন্যাদুর্গত এলাকায় প্রত্যেক মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আগাম বন্যার খবর সরকার জেনেছে। খাদ্যের অভাব যাতে না হয়, এ জন্য আগেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একটি মানুষও যেন না খেয়ে কষ্ট না পায়, সেটাই সরকারের লক্ষ্য। বন্যার্তদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা জানি ও বিশ্বাস করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের সাথেই আছেন।
লেখক – গবেষক ও সদস্য, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ।