আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনের হাওয়া বইছে ঢাকা-২ আসনে। এই আসন থেকে আগামী নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে এবার নতুন-পুরনো হিসাব-নিকাশ কষতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে। পুরনো মুখ হিসেবে আছেন টানা দুইবারের এমপি ও বর্তমান সরকারের খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং নতুন মুখ হিসেবে এলাকাবাসীর কাণ্ডারি হতে চান টানা দুইবারের পুরস্কারপ্রাপ্ত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ। এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে কে আগামী নির্বাচনে নৌকার টিকিট নিয়ে লড়বেন তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ইতোমধ্যে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনের জন্য কাকে বেছে নেন তার দিকেই তাকিয়ে আছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

মূলত ঢাকা-২ আসনটি শিল্পাঞ্চল কেরানীগঞ্জের সাতটি ইউনিয়ন, কামরাঙ্গীরচর থানা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তিনটি ওয়ার্ড এবং সাভারের তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই আসনটিতে নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। কেরানীগঞ্জের হজরতপুর, কলাতিয়া, তারানগর, শাক্তা, রোহিতপুর, কস্তা ও কালিন্দী ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শাহীন আহমেদের। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড, কামরাঙ্গীরচর থানা, সাভারের ভাকুর্তা, আমিনবাজার ও তেঁতুলঝোরা ইউনিয়নে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের একক আধিপত্য রয়েছে।

এই আসনের নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পছন্দের প্রার্থীর ছবিসংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন। আগামী নির্বাচনের জন্য কে বেশি গ্রহণযোগ্য এমন এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইদুল ইসলাম মাদবর বলেন, ঢাকা-২ আসনে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের বিকল্প দেখছি না। স্বাধীনতার পরে অনেকেই এলাকার উন্নয়নে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু কেউ কথা রাখেননি। অপরিকল্পিত কামরাঙ্গীরচর পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলেছেন বর্তমান এমপি। ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেনও একই কথা জানালেন। তার মতে, কামরাঙ্গীরচর রাজধানীর সন্নিকটে হলেও আগে এই এলাকার অবস্থা হ-য-ব-র-ল ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েই কামরুল ইসলাম এলাকার আমূল পরিবর্তন করেছেন।

যেটা সবার মুখে মুখে। তবে হজরতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন আয়নাল আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে শাহীন আহমেদকে এগিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর অনেক মামলা হামলার শিকার হয়েছি। জেল খেটেছি। ওই দুর্দিনের সময় পাশে পেয়েছিলাম একমাত্র শাহীন আহমেদকে। তৃণমূলকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আমাদের সুখে-দুঃখে, সাধারণ মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় কোনো দ্বিধা ছাড়াই ছুটে আসেন। স্থানীয় এমপি তৃণমূল থেকে বিচ্ছিন্ন।

তাই এলাকার মানুষ এখন আগামী নির্বাচনে তরুণ নেতৃত্ব শাহীন আহমেদকে চায়। তারানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ফারুক বলেন, ঢাকা-২ আসনে স্থানীয় প্রতিটি সংগঠনসহ প্রত্যেক মানুষের সাথে যার একটি আস্থার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন তিনি হলেন শাহীন আহমেদ। যিনি শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য দুইবার শ্রেষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যানের পুরস্কার পেয়েছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনে এলাকার জনগণ তাকে এমপি হিসেবে দেখতে চায়। কেরানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য ও রোহিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলী বলেন, ঢাকা-২ আসনে নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত। কেরানীগঞ্জে শাহীন আহমেদের এবং কামরাঙ্গীরচর, ভাকুর্তা, আমিনবাজার ও তেঁতুলঝোরা ইউনিয়নে মন্ত্রীর একক আধিপত্য রয়েছে। আগামী নির্বাচনে নেত্রী যাকে নমিনেশন দেবেন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাকে জিতিয়ে আনার চেষ্টা করব।

তরুণ নেতা হিসেবে আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের প্রত্যাশা করেছেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি। জনগণ সব সময় নেতাদের কাছে পেতে চায়। বিগত দুইটি উপজেলা নির্বাচনে আমি সেটা প্রমাণ করেছি। এককালে বিএনপি অধ্যুষিত কেরানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান গড়তে সাংগঠনিকভাবে ভূমিকা রেখেছি। তিনি বলেন, বর্তমান এমপি একজন পূর্ণমন্ত্রী হলেও তার চেষ্টায় এলাকায় কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়নি। নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। তৃণমূল থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন।

শাহীন আহমেদ বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে জনপ্রিয়তায় আমি এগিয়ে আছি। তৃণমূল থেকেও আমার নামই উঠে আসছে। আগামী নির্বাচনে জনপ্রিয়, সাংগঠনিকভাবে দক্ষ ও তৃণমূলের রাজনীতিরের সাথে গভীর সম্পর্ক আছে এমন প্রার্থীকে নেত্রী মনোনয়ন দেন তাহলে আমাকেই দিতে হবে।

ওয়ান-ইলেভেনের দুঃসময়ে আদালত অঙ্গনে সক্রিয় ভূমিকার কারণে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের নেক নজরে ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। দুঃসময়ের সঙ্গে থাকার পুরস্কার হিসেবে টানা দুইবার দলীয় টিকিট পেয়ে এমপি হয়েছেন। নবম জাতীয় নির্বাচনে মহাজোট সরকারের আইন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বর্তমান সরকারের খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে ঢাকা-২ আসন থেকে নেত্রী তাকে মনোনয়ন দেবেন এমন প্রত্যাশা অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, ঢাকা-২ আসনের মানুষের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন। নির্বাচনকে সামনে রেখে যে ধরনের প্রস্তুতি নেয়া দরকার সেইভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn