অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি বলেছেন, দেশের গ্রাম ও শহরের মধ্যে এখন কোন পার্থক্য নেই। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগসহ সবক্ষেত্রে মানুষ সমান সুফল ভোগ করছে। ৬০ থেকে ৭০ ভাগ এলাকা এখন উন্নত। আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে দারিদ্রতার কবল থেকে মুক্ত হবে বাংলাদেশ। তিনি আজ শনিবার বেলা ২টায় সিলেটে এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবি উন্নয়ন সংস্থা সীমান্তিকের ৪০ বছরে পদার্পন উপলক্ষে নগরীর মেন্দিবাগে সীমান্তিক কমপ্লেক্স মাঠে এ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী। আবুল মাল আবদুল মুহিত আরও বলেন, দারিদ্রমুক্ত সুখি-সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়তে জাতিসংঘ ২০৩০ সালের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশে তার বেশিরভাগই ২০২৪ সালের মধ্যে অর্জন করা সম্ভব হবে। সে লক্ষ্যে কাজ করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। তিনি বলেন, দারিদ্র্যতা দূরীকরণের ক্ষেত্রে শতভাগ অর্জন হলেও সবসময় ৭শতাংশ মানুষ রাষ্ট্রের উপর নির্ভর করে চলে; এরমধ্যে বিশেষ করে প্রতিবন্ধি শ্রেণির লোকজন উল্লেখযোগ্য। এটা পৃথিবীর উন্নত অনেক দেশেও আছে।
২০১৮ সালের মধ্যে দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্ভব হবে আশা করে তিনি বলেন, যদিও ২০২০ সালে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। দু’বছর আগেই এ লক্ষ্য পূরণ করতে আমরা সক্ষম হবো। অর্থমন্ত্রী বলেন, মানুষের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছে সরকার। সরকারি ও বেরসকারি বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে মানুষের দ্বোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এখন চিকিৎসার অভাবে বাংলাদেশের মানুষকে ভোগান্তির শিকার হওয়ার কোন সুযোগ নেই। এনজিও গোষ্ঠির প্রশংসা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এনজিও সংস্থাগুলোর বিকাশ খুব বেশি। বাংলাদেশে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এনজিও কার্যক্রম রয়েছে যা পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। মানুষের জীবন মান উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি এনজিও সংস্থাগুলোর এই ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে নার্সিং সেবা বিস্তৃত হচ্ছে। বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকায় এটা আরো তরান্বিত হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশের লোকজন এ সেবায় কাজ করছে। তাই, নার্সিং কলেজ বাড়ানো ও সেবা আরো বিস্তৃত করার দরকার রয়েছে।
সীমান্তিকের নার্সিং কলেজসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানব সম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকার প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সংস্থাটি তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যথাযথভাবে পালন করছে। সীমান্তিক এখন একটি বড় প্রতিষ্ঠান। তারা জাতীয় সংগঠন হিসেবে সারাদেশে স্বীকৃত। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য, পরিবার ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপদেষ্টা, বিএমআরসি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. সৈয়দ মুদাচ্ছের আলী। সংসদ সদস্য মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী, জাতিসংঘস্থ বাংলাদেশ মিশনের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. একে আব্দুল মোমেন, সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, জেলা প্রেসক্লাব সভাপতি আজিজ আহমদ সেলিম, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মুর্শেদ আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক আতিক এতে বক্তব্য দেন।
সীমান্তিকের চল্লিশ বছরের ইতিহাস ও কার্যক্রম তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক, রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির। সীমান্তিকের চেয়ারপার্সন অধ্যক্ষ মাজেদ আহমেদ চঞ্চলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সিলেটের স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতের উন্নয়ন ও সম্ভাবনা বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সীমান্তিকের নির্বাহী পরিচালক ড. আহমদ আল সাবির। সীমান্তিকের নির্বাহী পরিচালক কাজী মোকসেদুর রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে মানবসম্পদ উন্নয়নে অবদানের জন্য সাবেক সংসদ সদস্য শিক্ষাবিদ হাফিজ আহমদ মজুমদারকে এবং মুক্তিযুদ্ধ ও শিক্ষায় অবদানের জন্য ভাষাসৈনিক প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মো. আব্দুল আজিজকে সীমান্তিক পদক প্রদান করা হয়। হাফিজ মজুমদারের পক্ষে পদক গ্রহণ করেন বড় মেয়ে রানা লায়লা হাফিজ।
সীমান্তিক টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ তাপাদারের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য ও সীমান্তিকের সেক্রেটারি শামীম আহমদ, নারী সদস্য সাজনা সুলতানা হক চৌধুরী। প্রধান অতিথি সীমান্তিকের চল্লিশ বছরে পদার্পন স্বারক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির সীমান্তিক কমপ্লেক্স ভবনের উদ্বোধন করেন। এরআগে সকাল ১০টায় ধোপাদিঘীরপাড়স্থ বিনোদিনী হাসপাতাল থেকে মাছিমপুরস্থ সংস্থার কমপ্লেক্স পর্যন্ত র‌্যালির মাধ্যমে শুরু হয় দিনব্যাপি অনুষ্ঠানমালার। বিকেলে একই স্থানে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn