শিক্ষামন্ত্রীর পা জাপটে ধরলেন শিক্ষকরা
শিক্ষামন্ত্রীর পা জাপটে ধরে ও সড়কে শুয়ে পড়ে এমপিওভুক্তির দাবি জানালেন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ননএমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠনের শিক্ষক-কর্মচারীরা। বেলা ১২টার দিকে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে শিক্ষামন্ত্রীর গাড়িবহর থামিয়ে এ দাবি জানান তারা। এসময় শিক্ষামন্ত্রী অর্থমন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় করার পর তাদের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় যশোর উপশহরের ক্রীড়া উদ্যানে দেশের ৮টি শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগে আয়োজিত ৪৬ তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন শেষে শিক্ষামন্ত্রী সার্কিট হাউসে ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে।
শিক্ষামন্ত্রীর যশোর আসার খবর পেয়ে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুই হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সার্কিট হাউস সংলগ্ন প্রেসক্লাব যশোরের সামনে অবস্থান নেন। তবে সকাল ৯টায় মন্ত্রী তার নির্ধারিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে চলে যান। এসময় মন্ত্রীর ফিরে আসার জন্য মানববন্ধন সহকারে ননএমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা অপেক্ষায় থাকেন। পরে বেলা ১২টার কিছু আগে মন্ত্রীর গাড়িবহর প্রেসক্লাবের সামনে পৌঁছালে তারা মানববন্ধন ছেড়ে সড়ক অবরোধ করে গাড়িবহরের গতিরোধ করেন।
এসময় শিক্ষকরা বিভিন্ন ধরণের স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে শিক্ষকরা সড়কে শুয়ে পড়েন। অনেকটা বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে নামেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এসময় একজন নারী শিক্ষক ভিড় ঠেলে গিয়ে মন্ত্রীর পা জাপটে ধরে কান্নাকাটি শুরু করেন। ওই নারী শিক্ষক বৈষম্যের কারণে তাদের মানবেতর জীবনযাপনের বিষয়টি তুলে ধরে এমপিওভুক্তির দাবি জানান।মন্ত্রী ওই নারী শিক্ষকের মাথায় হাত দিয়ে তাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন। পুলিশ সদস্যরা তাকে দ্রুত ওই স্থান থেকে সরিয়ে দেন। এরপর শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেন শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। একইসঙ্গে শিক্ষকদের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
পরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা যে আচরণ করছেন তাতে শিক্ষক সমাজের মানহানি হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। কিন্তু অর্থমন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় না হওয়ায় কিছু হচ্ছে না। এ নিয়ে মন্ত্রী পর্যায়ে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। আমাকে শুনতে হয়েছে আমি সরকারের মন্ত্রী না শিক্ষকদের। আমি বরাবর বলি আমি শিক্ষকদের মন্ত্রী। শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে, এর মান উন্নয়ন করতে হলে শিক্ষকদের বেতন দিতে হবে। সেজন্য আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। অর্থমন্ত্রীর হাত-পায়ে ধরেছি। অনেক কষ্টে তিনি কিছুটা নরম হয়েছেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বৈষম্য নিরসনে অর্থ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে একটি কমিটি করেছে। এ কমিটি অর্থ ছাড়ের ব্যাপারে চেষ্টা করছে। শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নে আমি দোযখে যেতেও রাজি। প্রয়োজনে আবারও অর্থমন্ত্রীর হাত-পায়ে ধরবো। তবে আপনারা এ ধরণের আচরণ করে অর্থ প্রাপ্তির রাস্তা বন্ধ করে দিয়েন না।’
তিনি আরও বলেন,‘আমি ঢাকায় গিয়ে অর্থমন্ত্রীকে বলবো যশোরের শিক্ষকরা আপনাকে সালাম দিয়েছেন। তাদের ব্যাপারে একটু নজর দেওয়ার আবেদন করেছেন। আপনারা দোওয়া করেন যাতে অর্থমন্ত্রীর মন একটু নরম হয় তাহলেই সব সমস্যা কেটে যাবে। বক্তব্য শেষ হলে শিক্ষকরা মন্ত্রীর কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। এরপর তারা সড়ক ছেড়ে দিলে মন্ত্রীর গাড়ি বহর সার্কিট হাউসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।এসময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সচিব সোহরাব হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল আলীমসহ দেশের সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও যশোরের জেলা প্রশাসক।