মো. মমিনুল ইসলাম

গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল বলেছিলেন, ‘ম্যান ইজ পলিটিক্যাল এনিমেল (অর্থাত্ মানুষ জন্মগতভাবেই রাজনীতি করে)।’ কিন্তু দুঃখজনকভাবে দিন দিন আমাদের দেশের শিক্ষিত তরুণরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের তারুণ্য জরিপ ২০১৭-তে দেখা যায় বাংলাদেশের ৬৫% তরুণ রাজনীতিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে অর্থাত্ তারা রাজনীতি পছন্দ করে না। এছাড়া আমাদের দেশের অনেক শিক্ষিত তরুণ-তরুণীর ফেসবুক প্রোফাইলের পলিটিক্যাল ভিউজে লেখা থাকে “আই ডন্ট লাইক পলিটিক্স” অর “নো ইন্টারেস্ট ইন পলিটিক্স” যা দেশের জন্য অশনিসংকেত। দিন দিন রাজনীতির প্রতি শিক্ষিত তরুণদের যেভাবে অনীহা প্রকাশ পাচ্ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনীতি মেধাশূন্য হয়ে পড়বে। আর রাজনীতিতে প্রবেশ করবে অশিক্ষিত ও অসৎ চরিত্রের লোকেরা। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ ও জাতি। রাজনীতি কী? রাজনীতি হচ্ছে রাজার নীতি বা নীতির রাজা। রাজনীতিকরাই সরকার গঠন ও পরিচালনা করে থাকে। একটি দেশের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে থাকে রাজনীতিকদের দ্বারাই।
বেশ ক’মাস পূর্বে বাংলাদেশের বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি আ. হামিদ বলেছিলেন, “রাজনীতি এখন ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে গেছে”। এছাড়া পত্রিকার এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের শতকরা ৭০% আইন প্রণেতা ব্যবসায়ী যা খুবই দুঃখজনক ও হতাশাজনক। অনেক অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত ব্যবসায়ী টাকা ও প্রতিপত্তির জোরে পার্লামেন্ট মেম্বার হচ্ছেন, মন্ত্রী হচ্ছেন অর্থাত্ রাজনীতিক হচ্ছেন। অথচ সেখানে যদি উচ্চশিক্ষিত এবং মেধাবী তরুণরা যেতে পারতো তাহলে নিশ্চয়ই তা দেশের জন্য অধিক মঙ্গলজনক হতো।  এদেশের সোনালি অতীত অত্যন্ত গৌরবের। এ দেশের প্রতিটা আন্দোলন সংগ্রামের প্রথম সারিতে ছিল দেশের শিক্ষিত তরুণরা। স্বাধিকার আন্দোলনেও সর্বপ্রথম ঝাঁপিয়ে পড়েছিল প্রতিটা কলেজ, ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া মেধাবী শিক্ষার্থীরাই। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ছিষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, ’৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এমনকি ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধেও নিজেদের জীবন উত্সর্গ করেছিল বিভিন্ন মেধাবী ছাত্রনেতারাই। পাকিস্তান সরকারের সকল প্রকার দুঃশাসন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম রাস্তায় নেমেছিল দেশের রাজনীতি সচেতন মেধাবী তরুণরাই, ৬০-৭০-এর দশকে প্রতিটি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ছিল আন্দোলন সংগ্রামের দূর্গ। আর কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছিল ছাত্র সংসদ আর এখান থেকেই প্রতিবছর বের হতো মেধাবী ছাত্রনেতা যাদের অনেকে জাতীয় পর্যায়েও নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। যেমন: বর্তমান বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, নুরুল আলম সিদ্দিকী প্রমুখ ছাত্রনেতারা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন এবং তাদের অনেকে বঙ্গবন্ধুর সহচরও ছিলেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আজকে রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব ছাত্র সংসদগুলো বিলুপ্ত প্রায় আর যা দেশে মেধাবী রাজনীতিক তৈরির ক্ষেত্রে আরেকটি অশনিসংকেত। কারণ, এসব ছাত্র সংসদগুলো মেধাবী রাজনীতিক তৈরির নির্ভরযোগ্য সংগঠন।  কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজকে অনেক অশিক্ষিত ও সন্ত্রাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা হচ্ছেন। আর তাদের দ্বারা সংগঠিত হচ্ছে হত্যা, গুম, খুন, ধর্ষণ, ইভটিজিং ইত্যাদি নানা অপকর্ম, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির জোরে এসব অপকর্ম করে অনেকে আবার পার পেয়ে যাচ্ছেন।  তরুণদের রাজনীতিতে অনাগ্রহের কারণ সম্পর্কে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেছেন, দেশে পরস্পর অবিশ্বাসের রাজনীতি এবং প্রতিহিংসা ও দোষারোপের রাজনীতির ফলে তরুণরা রাজনীতিতে আগ্রহ হারাচ্ছে। আমাদের রাজনীতিবিদের বুঝতে হবে রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাদেরকে পিছিয়ে দেবে। আর রাজনীতিকদের দেশের শিক্ষিত তরুণরা যেন রাজনীতিতে আসে সে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে রাজনীতিবিদদেরকেই। এছাড়া তরুণদেরকে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ভালোবেসে রাজনীতিতে এগিয়ে আসতে হবে।
পরিশেষে এই কামনা করছি, আমাদের দেশের শিক্ষিত তরুণরা যেন বাংলাদেশের রাজনীতি অপছন্দ করি বলার পরিবর্তে বলে আমি বাংলাদেশের রাজনীতি পছন্দ করি এবং আমি একজন সত্ ও চরিত্রবান রাজনীতিক হবো। রাজনীতিক হয়ে দেশের মানুষের সেবা করব। লেখক: শিক্ষার্থী: ইসলামিক স্টাডিজ  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn