যে উইকেটে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা ব্যাট করতে নামলে হয়ে যায় ব্যাটিং উইকেট, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাট করতে নামলে হয়ে যায় বোলিং উইকেট। যে উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা ব্যাট করতে নেমে ৫০০ রানের কাছাকাছি স্কোর নিয়ে যায়, সেখানে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ১০০ রানও করতে পারে না।পচেফস্ট্রমের সেনউইজ পার্ক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের পরাজয় অনেকটাই নিশ্চিত ছিল। তবে এতটা শোচনীয় পরাজয় কেউ প্রত্যাশা করেনি। পঞ্চম দিন চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাগল করতে হবে- এটা ছিল জানা কথা; কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা এতটা অসহায় আত্মসমর্পন করবে প্রোটিয়া বোলারদের সামনে- তা ছিল এক প্রকার অবিশ্বাস্য বিষয়।জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে ৪২৪ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ অল আউট হয়ে গেলো মাত্র ৯০ রানে। ফলে পরাজয় বরণ করতে হলো ৩৩৩ রানের বিশাল ব্যবধানে। প্রোটিয়াদের পেস এবং স্পিন ঘূর্ণিতে নাকাল হতে হয়েছে বাংলাদেশকে। স্পিনার কেশব মাহারাজ একাই নেন ৪ উইকেট। ৩ উইকেট নেন কাগিসো রাবাদ এবং ২টি নেন মরনে মর্কেল।

সেনউইজ পার্ক স্টেডিয়ামে শুরুতেই ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার হাতেই যেন ম্যাচটি তুলে দিয়েছিল বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। যে উইকেটটি পুরোপুরি শুকনো, ফ্ল্যাট- সেখানে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়াটা পুরোপুরি আত্মঘাতি। সুযোগ পেয়ে সেটাকে ভালোমতই কাজে লাগায় প্রোটিয়ারা। ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৯৬ রানে ইনিংস ঘোষণা করে। বাংলাদেশের বোলাররা প্রথম ইনিংসে পুরোপুরি ব্যর্থ। প্রথমদিন তো উইকেটই ফেলতে পারেনি প্রোটিয়াদের। যে একটি উইকেট পড়েছিল, সেটি রানআউট। পরেরদিন শফিউল আর মোস্তাফিজ ১টি করে উইকেট নেন। তবে প্রোটিয়াদের ৪৯৬ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা উইকেটের কোনো সুবিধাই কাজে লাগাতে পারেনি। তবুও মুমিনুল হক আর মাহমুদউল্লাহর ব্যাটেই ৩২০ রান করে টাইগাররা। ১৭৬ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৪৭ রান করার পর ইনিংস ঘোষণা করে প্রোটিয়ারা। ৪২৪ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় বাংলাদেশের সামনে। জবাব দিতে নেমে দলীয় রানের খাতা খোলার আগেই, ইনিংসের প্রথম ওভারে ফিরে গেলেন তামিম ইকবাল এবং মুমিনুল হক। বড় পরাজয়ের বার্তাটা তখনই পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেটা যে ৩৩৩ রানের শোচনীয় পরাজয় হবে, তা কে ভাবতে পেরেছিল!

বাংলাদেশের ইনিংসে সর্বোচ্চ রান ৩২, ইমরুল কায়েসের। এরপর ১৬ রান মুশফিকের, ১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বাকি ৭জন দুই অংকের ঘরই স্পর্শ করতে পারেননি। তামিম-মুমিনুলের পর চতুর্থ দিন শেষ বিকেলে আউট হয়েছিলেন ইমরুল কায়েস। আজ পঞ্চম দিন সকালে এক ঘন্টা পেরুতে না পেরুতেই পরাজয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের। দিনের শুরুতেই উইকেট দিয়ে ফেরেন মুশফিকুর রহীম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মুশফিক ১৬ এবং মাহমুদউল্লাহ ৯ রান করেন। এরপরের ব্যাটসম্যানদের অবস্থা আরও খারাপ। লিটন দাস, সাব্বির রহমান দুজনই আউট হয়েছেন ৪ রান করে। তাসকিন আহমেদও সাজঘরে ফিরেছেন একই রানে। শফিউল ইসলাম পড়েন রানআউটের কবলে। সর্বশেষ কেশব মাহারাজের হাতে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে মোস্তাফিজ আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বড় পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা : ১ম ইনিংস : ৪৯৬/৩, ডিক্লে. ১৪৬ ওভার (ডিন এলগার ১৯৯, হাশিম আমলা ১৩৭, এইডেন মার্করাম ৯৭, টেম্বা ভাবুমা ৩১*, ডু প্লেসিস ২৬*; শফিউল ১/৭৪, মোস্তাফিজ ১/৯৮)। ২য় ইনিংস: ২৪৭/৬, ডিক্লে, ৫৬ ওভার (ডু প্লেসিস ৮১, টেম্বা ভাবুমা ৭১, হাশিম আমলা ২৮, মাহারাজ ১৯*, এলগার ১৮, মার্করাম ১৫; মুমিনুল হক ৩/২৭, মোস্তাফিজ ২/৩০, শফিউল ১/৪৬)।

বাংলাদেশ : ১ম ইনিংস : ৩২০/১০, ৮৯.১ ওভার (মুমিনুল ৭৭, মাহমুদউল্লাহ ৬৬, তামিম ইকবাল ৩৯, সাব্বির রহমান ৩০, লিটন দাস ২৫, মোস্তাফিজ ১০*; কেশব মাহারাজ ৩/৯২, কাগিসো রাবাদা ২/৮৪, মরনে মর্কেল ২/৫১)। দ্বিতীয় ইনিংস : ৯০/১০, ৩২.৪ ওভার (ইমরুল কায়েস ৩২, মুশফিকুর রহীম ১৬, মেহেদী হাসান মিরাজ ১৫, মাহমুদউল্লাহ ৯; কেশব মাহারাজ ৪/২৫, কাগিসো রাবাদা ৩/৩৩, মরনে মর্কেল ২/১৯)।

ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৩৩ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা : ডিন এলগার (দক্ষিণ আফ্রিকা)।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn