একটি অপরিচিত শব্দের নাম–বাবা
দিলরুবা শরমিন : ‘বাবা’ বলে ডাকার সুযোগ হয়নি। বাবা কী? কেমন দেখতে? তার কাজ কী এই সব ভাবারও সুযোগ পাইনি। আমাদের সময় নানা সংসারে ‘বাবা’ নামের একজন ‘কর্তা ব্যক্তি’ থাকতো। তারা সকালে কোথাও যেত (অফিস/ ব্যবসা কেন্দ্রে) বিকালে বাজার হাতে ফিরে আসতেই বন্ধুদেরকে দেখতাম ভয়ে আতংকে বাসার দিকে ছুটে যেতে। আবার কখনো কখনো কোনো কোনো বাড়ি থেকে দিনে দুপুরে বা মাঝ রাতে পাড়ার খালাদের উচ্চস্বরে কান্নার চিৎকারে জানতাম সেই বাসায় বাবা আছে। এই সব নানা কারণেই ‘বাবা’ শব্দের মানে জানিনি বা ‘বাবা’কে অযথা খুঁজে মাকে বিরক্ত করিনি।মায়ের কাছেই শুনেছি আমার বাবা খুব শিক্ষানুরাগী ছিলেন। বাবা নাকি ভীষণ সুদর্শন পুরুষ ছিলেন। আচরণে ভদ্র– স্বভাবে নম্র– চলনে অভিজাত– বলনে ধীরস্থির ছিলেন। তার জলদ গম্ভীর কণ্ঠস্বর শোনার জন্য লোকজন নাকি ব্যকুল হয়ে থাকতো। মূলত তিনি ছিলেন ব্যবসায়ী।
যশোর একটা ছোট্ট পুরাতন অভিজাত শিল্প সংস্কৃতিমনা মফস্বল শহর। সবুজ এই শহরজুড়ে রিকশার টুং টাং আওয়াজের বাইরে একটা সাদা ধবধবে মিতসুবিসি ল্যান্সার এর দেখা মাঝে মাঝে মিলতো। সে আমার বাবার বলে শুনেছি। দাদা মাঝে মাঝে সেটা চড়ে আমাদের সুরেন্দ্রনাথ রোডের ষষ্টীতলার পাড়ার বাসায় মায়ের হাতের চা খেতে আসতেন।আমার দাদা বা তার বাপ–দাদা এরা সকলেই বনেদি ব্যবসায়ী। বাবা তার হাল ধরেছিল মাত্র। যশোর শহরেই পরম্পরায় আদি নিবাস। দাদা তার বাবা এইভাবে ক্রমাগত শেকড় খুঁজে খুঁজে জানতে চেয়েছি আমাদের আসল গ্রাম কোথায়? মা একদিন সেখানে আমাদের নিয়ে গিয়েছিলেন– সে দাদার চলে যাবার পর। তার আগেই আমার ‘বাবা’র লাশ দাদা’কে বহন করতে হয়েছিল। যশোরের কোল ঘেষেই ‘তে ঘরি’ গ্রাম কে উদ্ধার করেছিলাম আমরা। ছায়া সুনিবিড় ছোট্ট অসাধারণ সে গ্রাম। বাঁশঝাড় আমার বরাবর প্রিয়। আবিষ্কার করেছিলাম সেখানেই শুয়ে আছে কেউ একজন। অযত্নে। অবহেলায়। সে আমার ‘বাবা’। বিশাল লম্বা কবর অনুমান করতে সাহায্য করেছিল তার দৈহিক উচ্চতা।
আদি– আদি আরও আদি পুরুষের এই তেঘড়ি থেকেই উৎপত্তি। এই আধা গ্রাম আধা শহর এর নামকরণও হয়েছিল আমাদের আদি আদি আদি পুরুষের তিনটা পাকা ঘর/বাড়ি বা এখন আমরা যাকে বলি রাজমহল– সেটা থেকে। সেই তিন ঘরই শহরে থাকতো। আমার দাদা আর তার নিঃসন্তান দুই ভাই। কেবল সপ্তাহান্তে ছুটি কাটাতে যাওয়া, মাছ ধরতে যাওয়া, শিকার করা বা অবসর বিনোদন কাটানো হতো সেই শহর সংলগ্ন গ্রামের পাকা দালানে।বাবার ছিল জমি কেনার বাতিক। যশোরজুড়ে তার জমি জায়গা ঘরবাড়ি। ছিল চাল ডাল, গম, তেল, মশলা ভাঙানোর ডজন খানেক মিল। ইটের ভাটা। মাছের পুকুর। গরুর গোয়াল কত কি যে তার ছিল বলে শুনেছি তার কোনো হিসাব নাই। পয়সাওয়ালা লোক বলে এলাকার সালিশ বিচারের মাতবর ছিল। সকলে তার কথাই মানতো। সবই শোনা কথা। হয়তো আমার মা তাকে খুব ভালোবাসতো বলেই এই সব বলতো অথবা আমরা তিন ভাই বোন ‘বাবা’কে না দেখেই হারিয়েছি বলেই এই সব গল্প করে আমাদের মনোজগতে তার একটা ছবি একে দিতো।
সে যাইহোক, বাবা যে শিক্ষানুরাগী–রুপ ও গুণের সমোঝদার ছিলেন সে প্রমাণ আলাদা করে দেয়া লাগেনি। এই সবের অকাট্য প্রমাণ ছিল আমার মাকে বিয়ে করা। তবে শিক্ষানুরাগী হয়েও আমার বাবা কোনো স্কুল–কলেজ যে কেন করেনি সেটা আজো জানিনা। যেমন জানি না এত শিল্পানুরাগী মানুষ কেন যশোরে শিল্পকলা চর্চায় কোনো অবদান রাখেননি? কত প্রশ্ন! উত্তর দেবার কেউ নাই। ছেলে বেলায় একদিন মা বলেছিল- চলো তোমাদের বাবাকে দেখিয়ে আনি। বাবাকে দেখিয়ে আনার বিষয়ে বিস্ময়কর একটা ব্যাপার ঘটতে যাচ্ছে এটা ধরে নিয়ে মার পিছু পিছু আমরা তিন ভাই বোন জয়ন্তী, আমি ও আশিষ গিয়েছিলাম আমাদের রেল রোডের পিতৃনিবাসে। সেই প্রথম জ্ঞানত সি অ্যাণ্ড বি গ্যারেজের ঠিক উল্টো দিকে প্রাসাদোপম বাড়িতে আমাদের প্রবেশ। ঢুকতে ভয়ই করছিল।বি শাল গেইট। টানা সেই গেইট বার বার খুলছে আর লাগাচ্ছে এক বয়ষ্ক ভদ্রলোক।
সেই বাসায় ঢুকতে গিয়ে আমার গা ছমছম করে উঠেছিল। সেই থেকেই মনে হয় এই গা ছমছম করা ভাবটা আমার শুরু। একটা বিশাল বৈঠকখানায় বা হলঘরে আমরা তিন ভাই বোন মার গা ঘেষে একটা পুরোনো আমলের বিশাল সোফায় বসতেই ডুবে গেলাম। নানা আকারের, নানা নঁকশার সোফা সেই ঘরজুড়ে। মাঝখানে দুই দফা বড় সাইজের টি-টেবিল। ছবির মত ঘরটা জৌলুসহীন নানা ফুলদানি, টব, ঝাড়বাতিতে সাজানো। ঘর আর তার আসবাবে অযত্ন, অবহেলা পরিচর্যার অভাব সুস্পষ্ট। এক কোণে গ্রামোফোন রেকর্ডারও দেখলাম। আর একদিকের বিশাল দেয়াল জুড়ে কাঠের তাকে কাঁচের পাল্লায় ভরা শুধু বই বই আর বই। এক কোণায় পড়ে ছিল মায়ের পুরোনো তানপুরা, তবলা, হারমোনিয়ামসহ গান বাজনার নানা বাদ্যযন্ত্র। সেখানে টুকটুকে লালা মখমলের একটা আসন দেখিয়ে মা বললো, আমি ওখানেই বসতাম।কিন্তু শিশু মন শিশু চোখ এ আর কিছুই ভালো লাগছে না। মনে হয় সেই মুহূর্তে আর কিছু ভালোই লাগছিল না। শুধু বাবাকেই খুজঁছিল সেই মন–চোখ। বাবা কোথায়? কেমন দেখতে? কখন আসবে? আসে না কেন এখনো– এই সব নানা প্রশ্ন।
ঘরের এদিক ওদিকে চোখ বোলাতেই চমকে উঠলাম! এক দীর্ঘকায় পুরুষের বিশাল আকারের সাদাকালো ছবি দেখে। লম্বা ফ্রেমে বাঁধানো সম্ভবত সাদা পাজামা পাঞ্জাবি পরা বেতস লতার মত ছিপছিপে গড়নের এক ভদ্রলোকের ছবি দেয়াল জুড়ে। সুদর্শন নিঃসন্দেহে। দাঁড়াবার ভঙ্গিটা যতটা অভিজাত তবে তার চেয়ে বেশি অহংকারীই মনে হয়েছিল। নিষ্পলক তাকিয়ে ছিলাম। এই ছবির মানুষটি কে? এমন প্রশ্নে জয়ন্তী কানে কানে ফিস ফিস করে বললো, এটাই আব্বা বুঝলি। জয়ন্তী আমার চেয়ে দুই বছরের বড় তাই ও একটু জানে মনে হয়। আমি আর আশিষ বোঝা সূচক ঘাড় নাড়লাম। মাকে তো প্রশ্ন করা যাবে না। অপেক্ষায় রইলাম ‘বাবা’র। ছবির ‘বাবা’ দেখেছি এখন নিশ্চয়ই সে সামনে এসে দাঁড়াবে।
একটু পর কারুকার্যময় ঝকঝকে রুপালী বড় রেকাবিতে করে আমাদের জন্য হরেক রকমের খাবার এলো। সাথে পানীয়। পোষ্যরা মাঝের টেবিলে নিঃশব্দে সে সব রেখে গেলো। ধীরে ধীরে নিকটাত্মীয়, দূরাত্মীয়রা মাকে দেখতে এলো। সালাম করতে আসতে লাগলো। এরপর আমার অন্য মায়ের সন্তানেরা একে একে বৈঠকখানায় ছুটে আসতে লাগলো। ‘বউমা বউমা’ বলে মাকে জড়িয়ে ধরে তার স্বরে কান্নাকাটি করতে লাগলো। তাদের কান্নার বিলাপ থেকে জানলাম ‘আজ বাবা আসবে না। আজ বাবার প্রয়ান দিবস।’মৌলভী সাহেব এসেছেন। উচ্চস্বরে বাড়ির বিশাল উঠোনজুড়ে বসে কোরআন তেলাওয়াত চলছে। মূল বাড়ির বাইরে বিশাল হেশেলের ঘর, ভারার ঘর তার পাশেই অস্থায়ী ইটের চুলা বানিয়ে বড় বড় ডেকে রান্না হচ্ছে ‘হক দানা’ (যা কি না সব রকমের চাল আর সব রকমের ডাল– মশলা মিশিয়ে তৈরি করা হতো (এটা আমার বাবার প্রিয় খাবার/রেসিপিও নাকি তার করা) আর গরুর মাংস, খাসির মাংস, জর্দা, পায়েশ, লুচি, সবজি আরও কত কী। কিন্তু বাবা? তার দেখা আর পেলাম না।
শুনেছি ১ অক্টোবর ১৯৭১ আমার বাবা লিভার সিরোসিসে মারা যান। বাবার চলে যাবার একদিন পর আমার ছোট ভাই আশিষ (৩ অক্টোবর ১৯৭১) এর জন্ম হয়। বাবা তাকে দেখে যেতে পারেনি। এমন কি আজো জানি না তিনি আমাদের কে দেখে গেছেন কি না! তার বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই তবে প্রশ্ন আছে। সন্তান জন্ম দিলেই কি বাবা হওয়া যায়? বাবা/মা’দের কিছু দায়িত্ব থাকে সন্তানের প্রতি। তিনি কি সেগুলো তার সকল সন্তানের প্রতি পালন করতে পেরেছিলেন? করেছিলেন? দেশদরদি- জনদরদি– সেবক– নেতা হওয়া যায় সহজেই ‘বাবা’ ‘মা’ হওয়া কি এত টাই সহজ? কোনো দায়বদ্ধতা নেই সন্তানের কাছে? কোনো জবাবদিহিতা? কিছু হলেই আমরা সন্তানকে দুষি কিন্তু এই সন্তানই তো বেড়ে ওঠে আমাদেরই দেয়া শিক্ষা দীক্ষায়। তবে তার যদি কোনো আচরগত সমস্যা থেকেই থাকে তার দায়ভার কি কোনো ‘বাবা’ ‘মায়ের’ নেই ?।
আমার বাবার দুই সংসার ছিল। এ নিয়ে মায়ের কাছে কোনো দিন কোনো কথা শুনিনি। না রাগ। না ক্ষোভ। না দুঃখ। না অভিযোগ বা অভিমান। বরং আমার অন্য মায়ের সন্তানেরা মায়ের ‘কাছের মানুষ’ ছিল। আমরা তিনজন মায়ের কঠিন শাসনে বেড়ে উঠেছি। এমনকি আমাদের বাবা যে ধনী মানুষ ছিলেন তার সামান্যতম পরশটুকু আমরা পাইনি। কিছুই উপভোগ বা উপলব্ধি করিনি। হয়তো এটাই ছিল মায়ের প্রতিবাদ।কেন এই কঠোরতা- সে কথা কোনো দিন জানাও হয়নি। তবে মা যে খুব সযত্নে আমাদের তিনজন পিতৃকূলের সকল বিলাসিতা–আচরণ থেকে আমাদেরকে দূরে সরিয়ে রেখেছে সে আজ বুঝি।ছেলেবেলায় ফি বছর এক নিয়মেই অক্টোবরের এক তারিখ মা আমাদের নিয়ে সেই প্রাসাদোপম বাড়িতে গিয়েছে। সেই একই হল ঘরের আকারে বসার ঘরে বসেছে। একইভাবে রুপালী রেকাবিতে থরে থরে সাজানো নানা রকমের খাবার এসেছে। পানীয় এসেছে। ছেলে বেলার সেই নিষেধাজ্ঞা মনে থাকায় আর সেদিকে ফিরেও তাকাইনি। সেই প্রথম বারের মতই প্রতিবার ১ অক্টোবর আমাদের পৈত্রিক নিবাসে গিয়ে মা তার চেয়ারে বসেছে। সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। কেবল একে একে সেই বিশাল বসার ঘরের জৌলুস আরও কমেছে। এক পুরুষ গড়ে আরেক পুরুষ যে বসে বসে কেবল ধংস করে সে প্রমাণ দেখেছি। কিছুই বাড়েনি। কেবলই নিঃশেষ হয়েছে। উপার্জন করা আর সেটা ধরে রাখা এর মাঝে ব্যাপক ফারাক। আর সব কিছুর উর্ধ্বে শিক্ষা। সেটাই মনে হয় কেবল নিঃশেষ হয় না। চুরি হয় না। ডাকাতি হয় না। হয় না ছিনতাই–রাহাজানি। বাকি সবই অস্থায়ী–ক্ষণস্থায়ী।
আমার অন্য মায়ের ছেলে মেয়েরা ‘বাবা’ কেও পেয়েছিলেন, তার রেখে যাওয়া সম্পদ সম্পত্তিও। তাই লেখাপড়ার চেয়ে তাদেরকে টেনেছিল বিষয় আশয়। সম্পদ–সম্পত্তি।আমাদের শিশুবেলায়ই সেই ফাকা সুনশান যশোর ‘সম্পত্তি বিনিময় করার’ হার বেড়েছে। এ দেশের হিন্দুরা ওই দেশে চলে গেছে। ওদেশ থেকে এসেছে ভারতীয় মুসলমানেরা। নতুন প্রতিবেশীরা দল বেধে মাকে/আমাদেরকে দেখতে এসেছেন, যে কি না এক পোশাকে তিন সন্তানের হাত ধরে এই বিশাল বিত্ত বৈভব ঐশর্যের মায়া ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন। কারণ না জানুক অনুমান করতে তো তাদের অসুবিধা নেই। তাই যে যার মত অনুমান করে নিয়েছিলেন। শুধু আমরাই জানলাম না আজো কেন এমন কঠিন হয়েছিল মা?। যাকে দেবতা জ্ঞান করতো সেই স্বামীর ভিটায় কেন পড়ে থাকল না? কেনই বা আমাদেরকে ধন সম্পদের সকল আরাম আয়েশ থেকে দূরে রেখে এমন কঠিন জীবন যাপন করল? অসময়ে বাবার চলে যাবার কারণ ভুল চিকিৎসা। মা যতবার উন্নত চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তুলতে চেষ্টা করেছে বাবাকে ততবারই বাবার নিকটজনেরা তাকে টোটকা ওষুধ খাইয়েছে। মা ঠেকাতে পারেনি। শক্তিহীন একা এক বিশাল প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কাছে হার মেনেছে। তাই হয় তো আমাদের নিয়ে একক সংগ্রাম। তাই হয়তো প্রাসাদে অনীহা। অনাসক্তি।
আজ বাবার চলে যাবার দিন। ৪৭ বছর পূরণ। মা চলে গেছে ১৭ বছর। ৩০ বছর একটি মেয়ে একা জীবনের হাল টেনেছে। যে বয়সে আজকাল মেয়েরা কেউ কেউ বিয়ে করে সেই বয়সে সে সঙ্গী হারিয়েছে। সঙ্গী একটা অভ্যাস। সেই নিয়মিত সঙ্গী হারানো কষ্টের বৈকি! তবুও জীবন থেমে থাকেনি। নিঃসঙ্গ জীবন আর একক জীবনের পার্থক্য কি এখনো অনুভব করি। নিঃসঙ্গ জীবনের চেয়ে একক জীবন নাকি এককক জীবনের চেয়ে নিঃসঙ্গ জীবন কোনটা বেশি গ্রহণীয়?মা চলে যাবার পর থেকেই আস্তে আস্তে ধসে পড়েছে সেই সব কিছু যা নিয়ে ছিল আমার বাবার–দাদার জীবন। আজ সেই প্রাসাদোপম বাড়িটি নেই। পলেস্তারা খসে পড়া–ইটের খাবড়া বের হওয়া বিশাল দরজা ধসে পড়া সেই বাড়িটি আজ অনেক ইতিহাস ধারণ করে কোনোমতে টিম টিম করে টিকে আছে। জমি জায়গা বাড়িঘর পুকুর ডোবা গোয়ালঘর মেশিন কল সবই বেহাত। যে যার মত আপন ভেবে যেটা দরকার দখল বা বিক্রি করেছে। সম্পত্তি যত সামান্য আমরা কিছু পেয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠায় দান করেছি। বাকি কিছু এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে অনিয়মের– অশিক্ষার– অপরিণামর্শীতার সাক্ষী হিসেবে।
সবচেয়ে বিস্মিত হই যখন ভাবি যেই মানুষটা সারা জীবন এত শ্রম–মেধা–শক্তি–অর্থ ব্যয় করে এত কিছু বানালো, কিনলো কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে গেল কী নিয়ে? এ জন্যই কি আমার মাকে কোনদিন জমি-জমা আকৃষ্ট করেনি? এই প্রশ্নেরই যদি উত্তর না জানি তবে কেন এই হিংসা বিদ্বেষ?। কেন হানাহানি- দ্বন্দ? কেন এই জায়গা জমির মাপামাপি–ভাগাভাগি? সবই মিছে? মরণই শেষ উত্তর? জন্মের ঋণ শোধ মৃত্যু দিয়ে।তারপরও সেই অচেনা– না দেখা– ‘বাবা’ শান্তিতে ঘুমাক সকলের মত আমারও চাওয়া। লেখক- আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী