অনিশ্চয়তা থাকলেও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বিএনপি
আপাতত চারটি কাজকে প্রাধান্য দিয়ে এগুচ্ছে বিএনপি। এগুলো হচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত্ম নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান চালানো, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরি এবং আগ্রহী প্রার্থীদের আসন ভিত্তিক গণসংযোগ
–নির্বাচনকালীন সরকার ইসু্যতে কোনো ধরনের সমঝোতা আভাস না থাকাসহ দেশী ও আন্ত্মর্জাতিক কয়েকটি কারণে আগামী নির্বাচন অনিশ্চিত বলে মনে করছে বিএনপি। এরপরেও প্রতিকূল যেকোনো পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজও সেরে রাখতে চায় তারা। দলীয় সূত্রের দাবি, সমঝোতার মাধ্যমে সহায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন হবে এমনই ভাবনা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও কাজ করে যাচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে গত সোমবার একটি অনুষ্ঠানে আগামী নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার তথ্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন অনিশ্চিত, কারণ এমন কোনো দেশি-বিদেশি আন্ত্মর্জাতিক শক্তিকে শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত্ম আশ্বস্ত্ম করতে পারেনি যে, তিনি ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করতে গিয়ে মাঠ থেকে ফিরতে পারবেন। সুতরাং বিএনপি ক্ষমতায় যাক বা না যাক এই সরকারের আয়ু বেশি দিন নাই।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, বিরোধী দলের উপর চাপ, জনগণের উপর চাপ সর্বশেষ বিচার বিভাগের উপর চাপ সৃষ্টি করে সরকার দেশে একেবারে বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে। জোর করে ক্ষমতায় থাকার প্রবণতা বিদেশিরাও পছন্দ করে না। বিগত সময়ের মতো আবারও একই কায়দায় ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টার কারণে আন্ত্মর্জাতিক পর্যায়েও ক্ষমতাসীনরা বন্ধু হারাচ্ছে। এরপরেও ক্ষমতার লোভ থেকে সরে আসতে চাচ্ছে না সরকার। দেশি ও আন্ত্মর্জাতিকপর্যায়ের সবার বাধা উপলক্ষ করে বন্দুকের জোরে এবার ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করলে তৃতীয় পক্ষের হস্ত্মক্ষেপ অস্বাভাবিক নয়। এমতাবস্থায় আগামী নির্বাচন অনিশ্চিত বলা যেতেই পারে। তবে অনিশ্চয়তার কাল অনুমান করা কঠিন। আর ক্ষমতাসীনদের বোধদয় হলে সেই অনিশ্চয়তা কেটে যেতে পারে। সঙ্গত কারণে নির্বাচনের প্রস্তুতি থামিয়ে রাখার কোনো কারণ নেই। নির্বাচনমুখী দল হিসেবে বিএনপি সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত এবং প্রস্তুতি চলতে থাকে। তিনি জানান, প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আপাতত চারটি কাজকে প্রাধান্য দিয়ে এগুচ্ছে তারা। এগুলো হচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত্ম নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান চালানো, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরি এবং আগ্রহী প্রার্থীদের আসন ভিত্তিক গণসংযোগ।
বিএনপি সূত্রমতে, তৃণমূলপর্যায়ের কমিটি পুনর্গঠন এবং সদস্য সংগ্রহ অভিযানের মধ্য দিয়ে সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজটিও এগিয়ে রাখতে চাচ্ছে বিএনপি। এই দুটি গুরম্নত্বপূর্ণ সাংগঠনিক কার্যক্রমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। ১ কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহের টার্গেট নিয়ে গত জুলাইয়ে দুই মাসের জন্য সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরম্ন করলেও নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি বিএনপি। এজন্য দুই দফা সময় বাড়ানো হয়েছে। লক্ষ্য অর্জনে সম্ভব্য প্রার্থীদের কোনো গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি এ ব্যাপারে উদাসীনদের চলতি মাসের মধ্যেই টার্গেট পূরণে কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সদস্য সংগ্রহ অভিযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা জানান, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নতুন সদস্যদের মতামতকে এবার গুরম্নত্ব দেয়া হবে। সঙ্গত কারণে এবারের নতুন সদস্য সংগ্রহের কার্যক্রমকে বিগত চেয়ে বেশি গুরম্নত্ব দেয়া হচ্ছে। ১ কোটির যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়া পর্যন্ত্ম এই অভিযান চালানো হবে। আর চলতি মাসেই তা সম্ভব হবে আশা বিএনপির।
বিএনপি সূত্রমতে, নির্বাচন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আগামী ১৫ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপি। এরই মধ্যে ইসিকে দেয়ার জন্য একটি প্রস্ত্মাবনা তৈরি করা হয়েছে। প্রস্ত্মাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)-এর ক্ষমতার পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার, সহায়ক সরকার গঠন ও সংসদ ভেঙে দেয়াসহ বেশ কয়েকটি বিষয়কে সামনে আনছে বিএনপি। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৫ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপের সময় দলটির প্রস্ত্মাবের রূপরেখায় মূল ফোকাস থাকবে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন কার্যক্রমের ওপর। সাংবিধানিকভাবে প্রাপ্ত ইসির ক্ষমতা যেন পুরোপুরি ব্যবহার করার পরিবেশ নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে বিস্ত্মারিত পরামর্শ দেবে বিএনপি। নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে ভিন্ন কথা। তা না হলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরেই নির্বাচনে অংশ নেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিবেন। প্রয়োজনে সহায়ক সরকারের জন্য রূপরেখাও উত্থাপন করবেন। এ ছাড়া নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে আগ্রহী সব প্রার্থীকে জনসংযোগ চালিয়ে যাওয়ারও নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রম্নহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। প্রস্তুতি চলমান প্রক্রিয়া। এটা চলতে থাকবে।