ঢাকা : চার সেঞ্চুরিতে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ উইকেটে ৫৭৩ রান করে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে দ্বিতীয় টেস্টে। জবাব দিতে নেমে শুরুতেই টালমাটাল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ৬৫ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারায় তারা। ব্যাটসম্যানদের যাওয়া-আসার মিছিল থামে লিটন দাসের ব্যাটে। তিনি একাই লড়েছেন, কিন্তু অন্য ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় বাংলাদেশ ফলোঅন এড়াতে পারেনি। প্রথম ইনিংসে টাইগাররা অলআউট হয়েছে ১৪৭ রানে, তাই দক্ষিণ আফ্রিকা পেয়েছে ৪২৬ রানের লিড। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের কোনও ক্ষতি হয়নি। বিনা উইকেটে ৭ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে অতিথিরা। ইমরুল কায়েস ৬ এবং সৌম্য সরকার অপরাজিত ১ রানে।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয় শুরু হয়ে সৌম্যকে দিয়ে। টেস্টে ধারাবাহিকতা রাখতে পারছেন না তিনি, পারলেন না ব্লুমফন্টেইন টেস্টের প্রথম ইনিংসেও। আগের টেস্ট সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চার ইনিংসে ৬৫ রান করা এ ওপেনার দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম টেস্টে খেলেননি। তামিম ইকবালের ইনজুরিতে জায়গা পাওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হলেন সৌম্য। ইনিংসের সপ্তম ওভারে মাত্র ৯ রানে তিনি বোল্ড হন কাগিসো রাবাদার বলে। দুই ওভার পর মুমিনুল হক বিদায় নেন ৪ রানে। ডুয়েন অলিভিয়ের তাকে কুইন্টন ডি ককের ক্যাচ বানান। ডানহাতি এ পেসার তার পরের ওভারে মুশফিকুর রহিমকে (৭) আউট করেন। তেম্বা বাভুমা একহাতে অসাধারণ ক্যাচ ধরে বাংলাদেশের অধিনায়ককে ফেরান।

ওয়েন পারনেলের শিকার হয়ে মাহমুদউল্লাহ মাত্র ৪ রানে সাজঘরে যান কিছুক্ষণের মধ্যে। ২৬ রান করে আউট হয়েছেন ইমরুল, রাবাদার দ্বিতীয় শিকার তিনি। পরের ওভারে রাবাদা তার তৃতীয় উইকেট তুলে নেন সাব্বির রহমানকে রানের খাতা না খুলতে দিয়ে। এরপর দাঁড়িয়ে গেলেন লিটন ও তাইজুল। অলিভিয়ের এ জুটি ভাঙেন তাইজুলকে বোল্ড করে। ইনিংস সেরা ৫০ রানের এই জুটি গড়ার পথে লিটন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট ফিফটি পান ৫৩ বলে। তিনি অষ্টম ব্যাটসম্যান হয়ে আউট হন ইনিংস সেরা ৭০ রানে। ৭৭ বলের ইনিংসে এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মেরেছেন ১৩ চার। রাবাদা তাকে ফাফ দু প্লেসিসের ক্যাচ বানান। কেশব মহারাজের স্পিনে তৃতীয় বলে রানের খাতা না খুলে আউট হন মোস্তাফিজুর রহমান। রুবেল হোসেনকে বোল্ড করে সফরকারীদের গুটিয়ে দেন রাবাদা। ১৩.৫ ওভারে ৪ মেডেন ৩৩ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন এ প্রোটিয়া পেসার। ক্যারিয়ারে ষষ্ঠবার এক ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন রাবাদা।এর আগে বৃষ্টিতে দেড় ঘণ্টা দেরিতে শুরু হলেও ব্লুমফন্টেইন টেস্টের দ্বিতীয় দিন দক্ষিণ আফ্রিকা রানের পাহাড় গড়ে তোলে। এইডেন মারক্রাম ও ডিন এলগারের পর হাশিম আমলা ও দু প্লেসিসের সেঞ্চুরিতে পাঁচশ রান ছাড়ায় স্বাগতিকরা। দিনের একমাত্র উইকেট বাংলাদেশ পায় লাঞ্চের পর প্রথম ওভারেই। দ্বিতীয় সেশনে আধঘণ্টা খেলে ৪ উইকেটে ৫৭৩ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা।

এদিন আমলার পর সেঞ্চুরি করেন দু প্লেসিস। মোস্তাফিজের বলে মিডউইকেট দিয়ে চার মেরে টেস্ট ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরির দেখা পান প্রোটিয়া অধিনায়ক। তার আগে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৮তম সেঞ্চুরি পূরণ করেন আমলা। বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্লুমফন্টেইন টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শুরুতে শতক পূরণ করেন তিনি। যাতে তিনি সেঞ্চুরির সংখ্যায় ছাড়িয়ে গেলেন প্রোটিয়াদের সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথকে (২৭ সেঞ্চুরি)। টাইগারদের বিপক্ষে দিনের খেলা শুরু করেন আমলা ও দু প্লেসিস। ইনিংসে ২৪৭ রানের সর্বোচ্চ জুটি গড়েন তারা। দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ওভারেই ভাঙে প্রায় আড়াইশ রানের এ জুটি। আমলাকে বোল্ড করেন শুভাশীষ রায়। ১৬৩ বলে ১৭ চারে ১৩২ রান করেন আমলা। লাঞ্চের পর ৭ ওভার খেলেই ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা। এ সময় মাঠেই ছিলেন অধিনায়ক দু প্লেসিস। ১৩৫ রানে তিনি অপরাজিত ছিলেন ১৮১ বল খেলে। দুটি করে চার ও ছয় মেরে ২৮ রানে খেলছিলেন কুইন্টন ডি কক। শতাধিক রান দিয়ে রানের পাহাড়ের ভিত গড়ে দিয়েছে বাংলাদেশের চার বোলার- মোস্তাফিজ (১১৩), শুভাশীষ (১১৮), রুবেল হোসেন (১১৩) ও তাইজুল ইসলাম (১৪৫)। দক্ষিণ আফ্রিকার চার উইকেটের মধ্যে তিনটিই গেছে শুভাশীষের দখলে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn