মানবিকতায় দেশ-বিদেশে প্রশংসিত শেখ হাসিনা
প্রতীক ইজাজ ::
দেশের সীমানা ছাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ব্যাপক প্রশংসিত। দেশে তো বটেই, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দক্ষতার পাশাপাশি তার মানবিক গুণাবলি ইতোমধ্যেই নজর কেড়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের। সেইসঙ্গে গণতন্ত্র, শান্তি, সংহতি ও সমৃদ্ধির ওপর দাঁড়িয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল হিসেবেও নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন বিশ্বের সামনে। স্বয়ং বিশ্বব্যাংক বিশ্বের অন্যান্য দেশকে উদ্দেশ্য করে বলেছে, বাংলাদেশকে দেখ, দেখে শেখ। কীভাবে দারিদ্র্য দূর করতে হয় উন্নয়নের ডানায় ভর করে। এমনকি উগ্রবাদ ও সন্ত্রাস বন্ধে তার জিরো টলারেন্স নীতিও অনুসৃত বিশ্বজুড়ে।
বিশেষ করে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়াকে শেখ হাসিনার বিরল মানবিকতা হিসেবেই দেখছে বিশ্ব। অভিহিত হয়েছেন প্রাচ্যের নতুন তারকা হিসেবে। বলা হচ্ছে মাদার অব হিউম্যানিটি (মানবতার জননী)। জাতিসংঘের অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দেওয়া তার দূরদর্শী ও আবেগঘন বক্তব্য এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে চলমান দক্ষ কূটনীতির কারণেই বিশ্ব বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সংকট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করতেও সমর্থ হয়েছেন তিনি। তার সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলেই রোহিঙ্গারা বিশ্ববাসীর মনোযোগ ও সহমর্মিতা পাচ্ছে। এ সংকট নিরসনে বিশ্বব্যাপী আলোচনা শুরু হয়েছে। এমনকি মিয়ানমারও আলোচনায় এগিয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক চাপ ও আলোচনার মাধ্যমে ধীরে ধীরে সমাধানের পথে এগোচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু।
সর্বশেষ গত শনিবার দেশে ফিরে সর্বস্তরের মানুষের গণসংবর্ধনায় সিক্ত শেখ হাসিনা তার মানবিকতার প্রকাশ ঘটিয়ে আবারও বলেছেন, ‘প্রয়োজনে এক বেলা খাব, আরেক বেলা তাদের (রোহিঙ্গা) ভাগ করে দেব। কে কী দেবে সেদিকে না তাকিয়ে আমরা দ্রুত বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমরা আশ্রয় না দিলে রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারত না।
দেশি-বিদেশি বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনা আজ শুধু আওয়ামী লীগেরই নেতা নন, দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছেন। অকুতোভয় সাহসী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে উন্নয়নের মডেল হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার কারণেই বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে আসীন হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ও উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, যে পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা অবশ্যই মানবতার উজ্জ্বল উদাহরণ। কারণ, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য মানবিক দিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভাবতে হয়। এসব বিষয়ে ভেবেই তিনি মানবিক বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি মানবতাবোধের জায়গা থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। অতীতেও নিয়েছেন।
এই বিশ্লেষকের মতে, শেখ হাসিনার রাজনীতির অনন্য দিক হচ্ছে তিনি সাহসী। বিশ্বব্যাংকের মতো প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দরকষাকষি করে পরে নিজস্ব তহবিলে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এটা তো বিশ্ব পরিমন্ডলে তার সাহসী নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত। পররাষ্ট্রনীতিতে শূন্য সাহসের জায়গা নেই, এটা জানেন তিনি। শেখ হাসিনা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সংকটের সময় সঠিক ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা আছে তার।
এই শিক্ষক বলেন, শেখ হাসিনার কূটনৈতিক দক্ষতা ও দূরদর্শিতাও অনন্য। অন্য দেশ বা পক্ষের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি দেশের ও জাতীয় স্বার্থের বিষয়গুলোকে যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারেন। এ ক্ষেত্রেও তার সাহসের পরিচয় পান কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় কোন দেশের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক রাখতে হবে, তা জানেন শেখ হাসিনা। সে জন্যই ভারত ও চীনের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর অভিযান শুরু করে তাদেরকে বাঙালি সন্ত্রাসী বলছিল সে দেশের সেনাবাহিনী। তাদের ভাষায় অল্পদিনেই পরিবর্তন এসেছে। সে দেশের সরকারের প্রতিনিধি রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঢাকায় সফর করে আলোচনা করেছেন। এসব সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের শক্তিশালী কূটনৈতিক অবস্থানের কারণে। গত
২৪ আগস্ট থেকে প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা তার মানবিকতার সর্বশেষ নজির স্থাপন করেন। বিশ্ব গণমাধ্যমে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন আরো বেশি জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। বিশ্বের প্রভাবশালী সব গণমাধ্যমে প্রশংসিত হচ্ছেন। ওইসব গণমাধ্যম তাকে মানবিক এক রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বর্ণনা করছে। সব জায়গাতেই তার একটি কথাকে উদ্ধৃত করা হচ্ছে-আমার ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে আরো সাত লাখকেও খাওয়াতে পারব।
এই ভূমিকার জন্য বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব গণমাধ্যমেও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছেন। কয়েকটি ব্রিটিশ গণমাধ্যম সম্প্রতি তাকে মানবতার জননী বা মাদার অব হিউম্যানিটি বলে আখ্যায়িত করেছে। বিবিসি বলেছে, এক মানবিক রাষ্ট্রনায়কের প্রতিচ্ছবি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা খালিজ টাইমস রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি মানবিক আবেদনের জন্য তাকে প্রাচ্যের নতুন তারকা হিসেবে অভিহিত করেছে। পত্রিকাটির মতামত সম্পাদক অ্যালন জ্যাকব লেখেন, এটা স্রেফ কোনো অনুকম্পার বিষয় নয়, এতে ট্র্যাজিক পরিস্থিতিতে সাহস প্রদর্শিত হয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক লেখক, সাংবাদিক ও এশিয়াবিষয়ক ভাষ্যকার এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক সদানন্দা ধুমি এক নিবন্ধে মন্তব্য করেছেন, মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী অং সান সু চি এখন বিশ্বজুড়ে সমালোচিত। আর রোহিঙ্গা সংকটে মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে নায়ক এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এই ইস্যুতে যে সহমর্মিতা তুলে ধরতে পেরেছেন, তা বিশ্বের অনেক বড় ও ধনী দেশের নেতারা দেখাতে পারেননি।
মানবিক গুণের প্রকাশ ঘটাতে গিয়ে শেখ হাসিনা বারবার তার অতীতকে তুলে ধরেছেন। এবারও রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেছেন, একজন রিফিউজির দুঃখ, কষ্ট তিনি বোঝেন। কারণ ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তিনি এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা রিফিউজি হিসেবে ছয় বছর বিদেশে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন।
বিশ্লেষকরা মানবিক গুণাবলির পাশাপাশি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কথাও বলেছেন। তাদের মতে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের সরকার ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি এবং শান্তি বাহিনীর সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি সম্পাদনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিচালনায় সাফল্য অর্জন করে। ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক পরীক্ষার পর ভারত-পাকিস্তান তীব্র উত্তেজনা প্রশমনে দেশ দুটি সফর করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তিনি। মূলত শেখ হাসিনা তার সিদ্ধান্তে দৃঢ় ও বিচক্ষণ ছিলেন বলেই সমুদ্র সীমানা সংক্রান্ত মামলায় মিয়ানমার ও ভারতের কাছে জয়ী হয়ে বিশাল সমুদ্র অঞ্চল পায় বাংলাদেশ। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপন্ন হওয়া, খিলগাঁও ফ্লাইওভার ও কুড়িল উড়াল সড়ক তৈরি হওয়া, সেনাবাহিনীর জন্য মেকানাইজড ব্রিগেড ও ব্যাটালিয়ন গঠন করা, রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি কিংবা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়া-সবই হয়েছে তার সঠিক নেতৃত্বের কারণে। এমনকি ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি শত্রু-মিত্র ভুলে খালেদা জিয়াকে তার পুত্র কোকোর মৃত্যুর জন্য সমবেদনা জানাতে গেছেন। এ ঘটনাও বিরল।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী বলেন, মাদার অব হিউম্যানিটি মানে হচ্ছে মানবতার মা। শেখ হাসিনা তিন দফায় প্রধানমন্ত্রী হয়ে মায়ের মতো দেশ ও দেশের জনগণকে আগলে রেখেছেন ও রাখছেন। মানবিক পররাষ্ট্রনীতিতে তিনি সক্ষম হয়েছেন। অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় আন্তর্জাতিক বিশ্বে তিনি বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে। কূটনৈতিক দক্ষতায় তিনি ভারত, চীন, এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারসাম্যমূলক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই শিক্ষক বলেন, শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি সরকারিভাবে গুরুত্ব পায়। তিনি বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ইত্যাদি চালু করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা বিভিন্ন সময় বাড়িয়েছে তার সরকার। তিনি মানুষকে বুকে টেনে নিতে পারেন। মানুষকে ভালোবাসার অসম্ভব ক্ষমতা আছে তার। মা যা করেন, প্রধানমন্ত্রী তাই করছেন মানুষের জন্য।
এই শিক্ষকের এমন মন্তব্যের অসংখ্য উদাহরণ তৈরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। কঠোর প্রটোকল সত্ত্বেও একেবারেই নিতান্ত সাধারণ নাগরিকের মতো পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রিকশাভ্যানে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর মতো বিরল ঘটনার কেবল তিনিই জন্ম দিয়েছেন। সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে অংশগ্রহণের ফাঁকে ভূ-স্বর্গখ্যাত সুইজারল্যান্ডের নয়নাভিরাম প্রকৃতি ঘুরে দেখেছেন প্রিয় ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে। এক অনুষ্ঠানে গিয়ে গোপালগঞ্জের শৈশবের গ্রাম দেখেছেন সঙ্গে নিয়ে প্রিয়জন ভাগনে, ভাগনের স্ত্রী ও নাতি-নাতনিদের। ভাগনে শেখ রেহানার পুত্র রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, তার স্ত্রী পেপি সিদ্দিক, নাতি-নাতনি নিলা ও কায়েস মুজিব। নাতি কায়েস মুজিবকে কোলে করে প্রায় এক কিলোমিটার ভ্যানে করে ঘুরেছেন পৈতৃক নিবাস টুঙ্গিপাড়ায়। সেই প্রধানমন্ত্রীই আবার ২০১৩ সালে পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন উপলক্ষে রাঁধলেন নিজ হাতে ছেলের প্রিয় খাবারের মেন্যু। আর ২০১৫ সাল, চ্যানেল আইয়ে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রিজওয়ানা চৌধুরী বন্যার লাইভ অনুষ্ঠানে সাধারণ দর্শকের মতোই আচমকা ফোন দিলেন—বন্যা, আমি কিন্তু তোমার একজন ভক্ত বলছি, আমি শেখ হাসিনা।
সূত্র : প্রতিদিনের সংবাদ