প্রধান বিচারপতির চিঠিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে আ’লীগ
প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে যাত্রার আগে গণমাধ্যমকে যে লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন তাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের অন্যতম সিনিয়র নেতা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজেদা চৌধুরী বলেছেন: একজন মানুষ ছুটি নিতেই পারে। এখন যেটা হচ্ছে সেটাকে ষড়যন্ত্রের বাইরে কিছু বলা যায় না। তিনি কেনইবা ছুটি নিলেন; আবার কেন এমন বক্তব্য দিলেন! আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অতীতেও হয়েছে। সকল ষড়যন্ত্র অতিক্রম করে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন: তিনি স্বেচ্ছায় ছুটি নিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির কাছে লেখা চিঠিতে তিনি বলেছেন অসুস্থ। অথচ এখন বলছেন অসুস্থ নন। এটাকে কী বলবো? তিনি চলে যাওয়ার আগে কেন চিঠি দিয়ে গেলেন। আগে কথা বলতে পারতেন। তিনি বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাইছেন।
প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে যাত্রার আগে গণমাধ্যমকে দেয়া বিবৃতিতে বলেছেন: তিনি অসুস্থ নন, সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। চাপে নয়, ছুটি কাটাতে স্বেচ্ছায় বিদেশে যাচ্ছেন। বিমানবন্দরের পথে গাড়িতে ওঠার আগে বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের তিনি জানান, তিনি লিখিত বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন।
লিখিত বিবৃতিতে তিনি বলেন: আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি, কিন্তু ইদানিং একটা রায় নিয়ে রাজনৈতিক মহল, আইনজীবী ও বিশেষভাবে সরকারের মাননীয় কয়েকজন মন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে সমালোচনা করেছেন, এতে আমি সত্যিই বিব্রত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সরকারের একটা মহল আমার বিষয়কে ভুল ব্যখ্যা প্রদান করে পরিবেশন করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি অভিমান করেছেন যা অচিরেই দূরীভূত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
তিনি বলেন: বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে আমি একটু শঙ্কিত বটে। কারণ গতকাল প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনরত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে উদ্ধৃত করে মাননীয় আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, অচিরেই সুপ্রীম কোর্টের প্রশাসনের পরিবর্তন আনবেন। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির এসব করার রেওয়াজ নেই। তিনি শুধুমাত্র রুটিন মাফিক দৈনন্দিন কাজ করবেন। এটিই হয়ে আসছে।
আমি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে একটু শঙ্কিত: প্রধান বিচারপতি
‘আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। কিন্তু ইদানিং একটা রায় নিয়ে রাজনৈতিক মহল, আইনজীবী, বিশেষভাবে সরকারের মাননীয় কয়েকজন মন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে সমালোচনা করেছেন, এতে আমি সত্যিই বিব্রত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকারের একটি মহল আমার রায়কে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে পরিবেশন করায় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি অভিমান করেছেন। এই অভিমান অচিরেই দূর হবে বলে আমার বিশ্বাস।’
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) রাতে হেয়ার রোডের নিজ বাসভবন থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার সময় বাসভবনের গেটে সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া এক লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন প্রধান বিচারপতি।
লিখিত বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘সেই সঙ্গে আমি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়েও একটু শঙ্কিত বটে। কারণ, গতকাল (বৃহস্পতিবার) প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনরত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবীণতম বিচারপতির উদ্ধৃতি দিয়ে মাননীয় আইনমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন যে, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি অচিরেই সুপ্রিম কোর্টের প্রসাশনে পরিবর্তন আনবেন। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনও রেওয়াজ নেই। তিনি শুধুমাত্র রুটিনমাফিক দৈনন্দিন কাজ করবেন। এটিই হয়ে আসছে।’ বিচারপতির লিখিত বক্তব্যলিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত এটি সহজেই অনুমেয় যে, সরকার উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে এবং এর দ্বারা বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি হবে। এটি রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।’
শুক্রবার রাত ৯টা ৫৭ মিনিটে বাসা থেকে বের হন প্রধান বিচারপতি। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী সুষমা সিনহা। আধা ঘণ্টা পর রাত ১০টা ৩০ মিনিটে তারা বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখান থেকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে রওনা দেবেন তিনি।